কেসিসি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবি: ১৫-২০% ভোট কারসাজি করে ৪৮% বানানো হয়েছে
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে, আর তা কারসাজি করে ৪৮ শতাংশ বানানো হয়েছে বলে দাবি করেছে মহানগর বিএনপি।
আজ বুধবার (১৪ জুন) দুপুর ১২টায় দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা। আগামী শুক্রবার বিকাল ৩টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে খুলনা মহানগর বিএনপির পদযাত্রার কর্মসূচি সফল করতে এবং পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, 'ইভিএম হলো এমন একটি মেশিন, যেখানে আগে থেকে সব নির্ধারণ করে রাখা যায়। খুলনাতে একই ঘটনা ঘটেছে। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভোটকে কারসাজি করে ৪৮ শতাংশ বানানো হয়েছে।'
তিনি নির্বাচনের আরও সমালোচনা করে বলেন, ভোটের দিন দুপুরে অধিকাংশ পত্র-পত্রিকায় বলা হয়েছে কেউ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাচ্ছে না। দুপুর দুইটা পর্যন্ত দেখা গেছে সামান্য কিছু ভোট পড়েছে। নির্বাচন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন, ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। ফলাফলে আমরা দেখলাম তারা ৪৮ শতাংশ ভোট ঘোষণা করেছে। এটা একেবারেই কারসাজির মাধ্যমে করা হয়েছে।
নির্বাচন পরবর্তী খুলনায় লোডশেডিং নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, নব-নির্বাচিত মেয়রের উদ্যোগে নির্বাচনের সময় খুলনা নগরীতে কোনো লোডশেডিং ছিল না। কিন্তু, নির্বাচনের পরদিন থেকে আবারও লোডশেডিং শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
দেশের স্বার্থ রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন চলছে। চলমান গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সারাদেশে পালিত হলেও, খুলনায় কর্মসূচি হলেই সরকারের পেটোয়া বাহিনী পুলিশ গায়েবী মামলা দিয়ে, হামলা চালিয়ে, নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অহেতুক হয়রানি করে অরাজকতাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
পুলিশের নানান কর্মকান্ডের সমালোচনা করে বলেন, খুলনার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অতি-উৎসাহী পুলিশ সদস্যদের লাঠির আঘাতে মারাত্মক আহত হয়ে খুলনার বিএনপি নেতা বাবুল কাজী মৃত্যুবরণ করেছেন। মহানগর বিএনপি সিনিয়র নেতা ফখরুল আলমের একটি চোখের আলো চিরতরে নিভে গেছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের দুজন কর্মীকে সমাবেশ থেকে ধরে নিয়ে পুলিশ চুল কেটে দিয়েছে। গতবছর ২৬ মে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের উপস্থিতিতে চলমান সমাবেশে হামলা চালিয়ে পুলিশ প্রশাসন সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, ১ হাজারের বেশি চেয়ার ভাঙচুর, বিএনপি অফিসে তান্ডব, অফিসের রক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র তছনছ করেছে। খোদ দলীয় কার্যালয় থেকে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনসহ অনেককে গ্রেফতার করেছিল। শান্তিপূর্ণ ওই কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা করে, আবার পুলিশ-ই বাদী হয়ে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলসহ ৮শত নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করে।
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমান অবৈধ সরকার, তাদের আমলা প্রশাসন ও দলীয় মন্ত্রী-এমপি-নেতারা দেশটাকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। সীমাহীন লুটপাট ও বিদেশে অর্থপাচারের কারণে দেশের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হবার উপক্রম। গণমানুষের আস্থার সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি শুরু থেকেই সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও লুটপাটের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচি পালন করার মাশুল হিসেবে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ফ্যাসিবাদী শাসক গুম-খুন-অপহরণ-মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার ও হয়রানির নজিরবিহীন তান্ডব চালিয়েছে এবং এখনও যা অব্যাহত আছে। সারা দেশে ৫০ লক্ষ নেতাকর্মীকে আসামী বানিয়েছে। গুমের শিকার নেতাকর্মীরা আজও তাদের পরিবারের কাছে ফিরতে পারেননি।'
বিএনপির চলমান আন্দোলন সফল হচ্ছে দাবি করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বলেন, দেশের মানুষ ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এজন্যই বিএনপির আন্দোলনের প্রতি তারা সাড়া দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে নগর বিএনপির নেতা স ম আবদুর রহমান, সৈয়দা রেহেনা ঈসা আবুল কালাম, কাজী মাহমুদ আলী, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম, শের আলম, মাহবুব হাসান, শেখ সাদী, হুমায়ুন কবীর, সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান, মিজানুর রহমানসহ বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।