এরশাদ শিকদার, বাংলা ভাই, বঙ্গবন্ধুর ৬ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা জল্লাদ শাহজাহান মুক্তি পেলেন
তিন দশকেরও বেশি সময় কারাভোগের পর আজ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৭৩ বছর বয়সি ফাঁসির আসামি জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ মাহাবুবুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যার্ন্ডাডকে জল্লাদ শাহজাহানের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, আজ দুপুর ১টার দিকে শাহজাহানকে মুক্তি দেওয়া হয়।
২০০১ সাল থেকে মুক্তির আগপর্যন্ত শাহজাহান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় খুনি, চার যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত বাংলা ভাইসহ দুই জেএমবি সদস্য, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, শারমিন রিমা হত্যা মামলায় মনির ও খুকুসহ ২৬ আসামির ফাঁসি কার্যকর করেন।
শাহজাহান যাদের ফাঁসি কার্যকর করেছেন, তাদের মধ্যে আছেন জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শাহজাহান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে জল্লাদের কাজ দিয়েছিল। আমি সাহসী ছিলাম বলেই এ কাজ পেয়েছিলাম। কাজটি আমি না করলে কেউ না কেউ করতেন। এখন আমি চলে এসেছি, এ কাজ অন্যরা করবেন।'
কারও ফাঁসি কার্যকর করতে খারাপ লেগেছে কি না, জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, 'প্রতিটি ফাঁসির আগেই আবেগ কাজ করেছে। এখানে তো আমার কিছু করার নেই। এ কাজ কাউকে না কাউকে তো করতে হতো।'
শাহজাহান বলেন, ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে এরশাদ শিকদার দাবি করেছিলেন যে তিনি কোনো অন্যায় করেননি; আর মুনীর একটি সিগারেট চেয়েছিলেন।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শাহজাহান অবশ্য নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। শাহজাহান বিয়ে করেনি, তার বাবা-মাও বেঁচে নেই।
অন্য কোনো আত্মীয়-স্বজন আছে কি না, জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, তার একটা বোন আছে বলে জানেন। একটা ভাগনেও আছে। 'তবে জেলে আসার পর তাদের সাথে আমার কখনও দেখা হয়নি। অবশ্য দু-একবার ফোনে কথা হয়েছে।'
মুক্তি পাওয়ার পর এখন তার ঠিকানা কী হবে, তা-ও জানেন না শাহজাহান। তিনি বলেন, 'আমার একটাই চিন্তা—কীভাবে ভালোভাবে চলব। আমার বাড়ি নেই, ঘর নেই। আমি এখন বের হয়ে নিজের বাড়িতেও যাচ্ছি না। আমি আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে উঠছি, যিনি একসময় আমার সঙ্গে জেলে থেকেছেন।'
নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন শাহজাহান বলেন, 'আমি কী করে খাব জানি না। সরকারের কাছে দাবি, আমার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তিনি করেন, আমার থাকার ব্যবস্থা করেন।'
কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, শাহজাহান ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির মামলায় শাহজাহানকে ৫ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানাসহ ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরেকটি ডাকাতি ও হত্যা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মামলায় শাহজাহানকে মোট ৪২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
১৯৯৫ সালের ২১ নভেম্বর মানিকগঞ্জ থেকে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
জল্লাদ হিসেবে তার ভূমিকা এবং শৃঙ্খলা প্রদর্শনের জন্য জেল কর্তৃপক্ষ তার কারাবাসের মেয়াদ থেকে ১০ বছর পাঁচ মাস ২৮ দিন মওকুফ করে। সেই হিসাবে শাহজাহান ৩১ বছর ছয় মাস দুই দিন জেল খাটেন।