কোরবানির পশুবাহী যানবাহন কেউ থামাতে পারবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, কোরবানির হাট উপলক্ষ্যে সারাদেশে চলাচলকারী পশুবাহী যানবাহন কেউ থামাতে পারবে না। সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও পশুবাহী যানবাহন থামাবে না। সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার কোরবানিকে সামনে রেখে আইনশৃংখলা বিষয়ক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, সকল বাহিনীর প্রধান, সড়ক পরিবহন ও গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিক নেতারা সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন কোরবানির সময়ে সারা দেশে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে, কোরবানির পশু পরিবহন, নাগরিকদের যাতায়াত যাতে নির্বিঘ্ন হয় সেজন্য এ বৈঠক ডাকা হয়।
প্রতিবছরই কোরবানির সময় সড়ক, মহাসড়ক ও নদীপথে পশুবাহী যানবাহন থামিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন এলাকার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী লোকজন এ চাঁদা নিয়ে থাকে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, কোরবানির সময়ে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য সভায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পশুবাহী যানবাহন সড়ক ও নৌপথে কেউ থামাতে পারবে না। যদি কেউ পশুবাহী গাড়ি থামায় তাহলে স্থানীয় এসপিকে জানাতে হবে। এরপর তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোরবানির পশু ঠিকমত যাতে শহরে ঢুকতে পারে এবং পরিবহন যাতে সুন্দর হয়, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড় ও কোরবানির পশুর হাটে ওয়াচ টাওয়ার বসানো হবে। পশুর হাটগুলো সিসি ক্যামেরায় আবৃত থাকবে। সারা দেশে ৪ হাজার ৩৯৯টি পশুর হাট বসবে বলে এ পর্যন্ত জানা গেছে। এসব হাটে নিরাপত্তা দিতে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, সড়ক-মহাসড়কে কোনো প্রকার হাট বসানো যাবে না। মহাসড়কের পাশে যেসব হাট বসবে, সেখানকার কর্তৃপক্ষকে সড়কে যাতে বিশৃংখলা সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পশুর হাটে হাসিলের সাইনবোর্ড দৃশ্যমান রাখতে হবে। পশুর হাটে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা বাহিনীও নিয়োজিত থাকবে। জাল নোট সনাক্তকরণ মেশিন ও এটিএম বুথ থাকবে। মলম ও অজ্ঞান পার্টি যাতে কোনো কার্যক্রম করতে না পারে সেজন্য বাস, লঞ্চ টার্মিনাল, রেল স্টেশন ও ফেরিঘাটে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থায় থাকবে। পশুর হাটে ভেটেরিনারি চিকিৎসক থাকবেন।
কোনো পশুবাহী নৌযান ও ট্রাক পরিবহনের সময় জোরপূর্বক নির্দিষ্ট কোনো হাটে যেতে বাধ্য করা না হয়, থামানো না হয় সেজন্য ট্রাক বা যানবাহনের সামনে ব্যানার লাগাতে হবে। ব্যানারে লেখা থাকবে পশুবাহী যান কোন হাটে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঈদের ছুটিতে সারা দেশে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। র্যাব দৃশ্যমান টহলে থাকবে। যানজট নিরসনে মহাসড়ক, সড়ক ও শহর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও মোড়ে হাইওয়ে পুলিশ বা ব্যাটালিয়ন আনসার থাকবে। যানজটপ্রবণ স্থানে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করে যানজট নিরসন করা হবে। সারা দেশে ২৪টি স্থানকে যানজট ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই স্থানগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে নৌযানে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফেরি ঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লক্ষ্য রাখবে। লঞ্চের ধারণক্ষমতার বাইরে কাউকে উঠতে দেওয়া হবে না। এজন্য লঞ্চ মালিকদের অনুরোধ করা হবে, তারা যেন লঞ্চের ধারণক্ষমতা লিখে রাখে। নদীপথে যেসব পশু আসবে সেই যানবাহনের সামনেও ব্যানার থাকবে। নৌ পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ সমন্বয় করে নদীপথের যানগুলো তদারক করবে। নৌ পুলিশ টহলে থাকবে। ঈদের বন্ধে শিল্প এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়াসহ যে কোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধে শিল্প এলাকার নিজস্ব বাহিনীর সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীও কাজ করবে।
আসাদুজ্জামান বলেন, পোশাক শ্রমিকদের জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন ও ঈদ বোনাস ঈদের ছুটির আগে দিতে কারখানার মালিকদের বলা হয়েছে। যানজট নিরসনে পোশাক কারখানায় পর্যায়ক্রমে ছুটি দেবেন বলে মালিকরা সম্মত হয়েছেন।
সারা দেশে ঈদের জামাতে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। করোনা এখনো যায়নি এজন্য আমরা বলেছি, স্বাস্থ্যবিধি যথাসম্ভব মেনে চলতে। ঈদযাত্রায় যানবাহনের ভাড়া যাতে না বাড়ানো হয় তা মনিটরিং করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ঈদের ছুটি একদিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এটা এখনো হয়নি। এটা কেবিনেটে উত্থাপিত হবে। এটা একটা প্রস্তাব, আমরা মনে করি এটি যৌক্তিক প্রস্তাব। সুপারিশটি কেবিনেটে গেছে, সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হবে।'
সীমান্ত দিয়ে যাতে পার্শ্ববর্তী দেশের গরু প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী একটি চিঠি দিয়েছেন- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যাতে কোন পশু না আসে। দু'তিন বছর ধরে আমরা সেটা অনুসরণ করে আসছি। আমাদের বর্ডার গার্ড সব সময় তৈরি আছে।'