বিলিয়নিয়ারদের লড়াই: মাস্ক এবং জাকারবার্গের মধ্যে কে এগিয়ে?
গত বুধবার মেটার সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের একটি টুইটকে কেন্দ্র করে টেসলার সিইও ইলন মাস্ক ঘোষণা দেন যে তিনি বদ্ধ খাঁচায় জাকারবার্গের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত! সত্যিকার অর্থেই এই দুই বিলিয়নিয়ার লড়বেন সেই নিশ্চয়তা না পাওয়া গেলেও, গত বেশ কয়েক বছর ধরেই যে দুই প্রযুক্তি টাইকুন এক অঘোষিত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তা স্পষ্ট। তবে অন্তত একটি দিক থেকে ইলন মাস্ক তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চাইতে দ্বিগুণ এগিয়ে- এই মুহূর্তে ২৪৩ বিলিয়ন ডলারের মালিক মাস্ক।
কিন্তু ফেসবুকের প্রধান কর্তা, জাকারবার্গও কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় খুব একটা পিছিয়ে নেই। চলতি সপ্তাহে তার ব্যাংক-ব্যালেন্সে যোগ হয়েছে ২.৭ বিলিয়ন ডলার; অন্যদিকে, মাস্ক খুইয়েছেন কমপক্ষে ২.৬ বিলিয়ন ডলার।
তবে চলতি সপ্তাহে শুধু যে এই দুই প্রযুক্তি টাইকুনের মধ্যেই সম্পদের লড়াই চলেছে, তা নয়। শীর্ষসারির আরও কয়েকজন বিলিয়নিয়ারেরও সম্পদের পরিমাণ কমেছে এ সপ্তাহে। গত সপ্তাহজুড়ে তিনটি প্রধান মার্কিন স্টক সূচক ১ শতাংশেরও বেশি নিচে নেমে গিয়েছিল; ফলে অনেক বিলিয়নিয়ারই সম্পদ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ল্যারি এলিসন, কলিন ঝেং হুয়াং এবং ওয়ারেন বাফেটের নাম উল্লেখযোগ্য।
বাফেট ৫.৫ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছেন; যদিও একে হারিয়েছেন বললে ভুল বলা হয়, কারণ তিনি স্বেচ্ছায় দান করে দিয়েছেন এই অর্থ। আমেরিকার সবচেয়ে উদার মানবসেবী ওয়ারেন বাফেট এই নিয়ে মোট ৫১ বিলিয়ন ডলার দান করেছেন!
চলুন দেখে নেওয়া যাক গত ১৬ জুন থেকে ২৩ জুন, পুরো এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সম্পদের কি ওঠা-নামা ঘটেছে; আর সেখানে ইলন মাস্ক এবং জাকারবার্গই বা কি অবস্থানে রয়েছেন!
ল্যারি এলিসন
ল্যারির সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ১৪৯ বিলিয়ন ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে তার সম্পদ কমেছে ৭.৬ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি ল্যারি এলিসনের ওরাকল শেয়ার গত ১৫ জুন সর্বকালের রেকর্ড দরে পৌঁছেছিল, বিক্রিও হয়েছিল প্রচুর। ২০২১ সালের মে মাসের পর থেকে তিনি এই প্রথম তার স্টক খালি করতে শুরু করেছিলেন। তিনি ৭ মিলিয়ন শেয়ার কিনে সেগুলো মুক্তবাজারে বিক্রি করেছিলেন এবং এই লেনদেনের মাধ্যমে তিনি ট্যাক্স বাদে ৬৩৮ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। ল্যারি এলিসনের এখনো এই সফটওয়্যার কোম্পানির এক বিলিয়নের বেশি শেয়ার রয়েছে, যা মোট শেয়ারের ৪২ শতাংশ।
ওয়ারেন বাফেট
এই মুহূর্তে ওয়ারেন বাফেটের সম্পদের পরিমাণ ১১২ বিলিয়ন ডলার। গেল সপ্তাহে তার সম্পদ কমেছে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার। তিনি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের স্টক তার প্রিয় পাঁচটি সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছেন। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, বাফেটের প্রয়াত স্ত্রী সুসান থম্পসনের বাফেট ফাউন্ডেশন এবং তার তিন সন্তানের প্রতিষ্ঠা করা তিনটি সংস্থাকে তিনি এই অর্থ দান করেছেন। এদিকে গেল সপ্তাহে বার্কশায়ারের শেয়ার ০.৮ শতাংশ নিচে নেমে গিয়েছে, ফলে সব মিলিয়ে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার বেরিয়ে গেছে ওয়ারেন বাফেটের ব্যাংক থেকে।
কলিন ঝেং হুয়াং
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পিডিডি হোল্ডিংস এর প্রতিষ্ঠাতা কলিন ঝেং হুয়াং গত মাসে তার কোম্পানির সদর দপ্তর আয়ারল্যান্ডে সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বর্তমানে ২৪.৬ বিলিয়ন ডলারের মালিক।
নাসডাক এর তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটির শেয়ার গত সপ্তাহে ১২.৬ শতাংশ নিচে নেমে গিয়েছে। ফলে ঝেং হুয়াং গেল সপ্তাহে হারিয়েছেন ৩.৫ বিলিয়ন ডলার। ই-কমার্স সাইট পিনডুডো প্যারেন্ট কোম্পানি হলো পিডিডি হোল্ডিংস।
ইলন মাস্ক
স্পেসএক্স এর প্রতিষ্ঠাতা, টেসলার সিইও এবং বর্তমানে টুইটারের মালিক ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ২৪৩ বিলিয়ন ডলার। নিঃসন্দেহে চোখ কপালে তোলার মতো সম্পদের মালিক ইলন মাস্ক হয়েছে বটে, তবে সাম্প্রতিককালে তার সম্পদের ওঠা-নামাও বেশ চোখে পড়েছে। গত সপ্তাহের শেয়ারবাজার টেসলার অনুকূলে ছিল না। গত এপ্রিল থেকে গত সপ্তাহের মধ্যে, বুধবার টেসলার শেয়ারে ধ্বস নেমেছে সবচেয়ে বেশি। এক সপ্তাহেই তিনি হারিয়েছেন ২.৬ বিলিয়ন ডলার। এরপরেই আবার খবর আসে যে সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট মেটা টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে 'থ্রেডস' নামক একটি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট তৈরি করছে। এ খবর শুনে মনোঃক্ষুণ্ণ হয়েই হয়তো ঠাট্টার ছলে জাকারবার্গের সঙ্গে বদ্ধ খাঁচায় লড়াইয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মাস্ক!
মার্ক জাকারবার্গ
এই মার্কিন ধনকুবেরের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১০২ বিলিয়ন ডলার। হ্যাঁ, তিনি মাস্কের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন সম্পদের হিসাবে। গত বুধবার মেটার নতুন সোশ্যল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম তৈরি নিয়ে জাকারবার্গকে খোঁচা দিয়ে একটি টুইট করেন মাস্ক। ঐ টুইটকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তি ঠাট্টা করে টেসলা প্রতিষ্ঠাতাকে 'জিউ জিৎসু' প্রতিযোগিতায় জাকারবার্গের মেডেল পাওয়ার প্রসঙ্গ স্মরণ করিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, "জাকারবার্গ রাজি থাকলে তার সঙ্গে খাঁচায় লড়ার জন্য আমি প্রস্তুত।
অপরদিকে মাস্কের এ মন্তব্য জাকারবার্গ এড়িয়ে যাননি। মেটার মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া ইনস্টাগ্রামের এক স্টোরিতে মাস্কের মন্তব্যের স্ক্রিনশট পোস্ট করে জাকারবার্গ লিখেছেন, "(লড়াইয়ের জন্য) ঠিকানা পাঠান।" পরবর্তীতে এর প্রত্যুত্তরে ইলন মাস্ক ঠিকানা হিসেবে 'ভেগাস অক্টাগন' এর নাম উল্লেখ করেন।
তবে জিউ-জিৎসু মেডেলিস্ট জাকারবার্গের সম্পদ কমার চাইতে বরং ২.৭ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে গত সপ্তাহে। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, জাকারবার্গ এই মুহূর্তে বিশ্বের নবম ধনী ব্যক্তি।