ভারতীয় ঋণের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে আরও ৪ প্রকল্প
ঋণের শর্ত এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে জটিলতার কারণে ভারতীয় ঋণের তালিকা থেকে বাদ পড়ায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও চার উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পে ১.০১ বিলিয়ন ডালার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল ভারতের।
বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো অনাগ্রহের কারণে এসব প্রকল্প ভারতীয় লাইন অফ ক্রেডিটের (এলওসি) তালিকা থেকে প্রত্যাহারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা।
তবে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ ফেরত যাবে না। কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ভারতীয় ঋণে চলমান যেসব প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে, সেগুলোতে এই অর্থ দেওয়া হবে।
বর্তমানে ভারতীয় এলওসি তালিকায় প্রকল্পের সংখ্যা ৪০টি। প্রস্তাবিত ৪ প্রকল্প বাদ পড়লে প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৬টিতে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, গত মে মাসে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে দুটি প্রকল্প এলওসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। তবে প্রস্তাবিত ৪ প্রকল্প তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সম্মতি এখনো ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। গত ডিসেম্বরের এসব প্রকল্প এলওসি থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেয় সরকার।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, যে সব প্রকল্প প্রত্যাহার করা হচ্ছে, সেগুলো হলো- সৈয়দপুরে ৭০.২৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নতুন ক্যারেজ ওয়ার্কশপ নির্মাণের রেলওয়ে প্রকল্প, ১৬৫ মিলিয়ন ডলারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর প্রকল্প, ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বে কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্প এবং ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দর প্রকল্প।
বাস্তবায়নকারী সংস্থারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে নানা ধরনের শর্ত থাকে। নির্মাণ সামগ্রীর ৭৫ শতাংশ উপকরণ ভারত থেকে আনতে হয়। এছাড়া, বাস্তবায়ন পর্যায়েও ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে জটিলতা হয়। দরপত্রের নথি তৈরি থেকে শুরু করে, ঠিকাদার নিয়োগ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে; এতে সময়ক্ষেপণ হয়।
আবার ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে শুধু ভারতীয় ঠিকাদারই অংশ নিতে পারে। এতে দেখা যায়, ভারতীয় ঠিকাদাররা অনেক সময় প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি দর প্রস্তাব করে। এসব জটিলতায় ভারতীয় ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী নয় বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো।
ইআরডির কর্তমর্তারা জানান, গত মে মাসে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে বাদ দেওয়া দুটি প্রকল্প হল- টেলিটকের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে ৩০ মিলিয়ন ডলারের সোলার-ভিত্তিক স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প এবং ২৪.৮৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের যন্ত্রপাতি সরবরাহ প্রকল্প।
২০২৩ সালের মে মাসে বাদ পড়া দুই প্রকল্পসহ গত তিন বছরের ভারতীয় এলওসি তালিকা থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৬টি প্রকল্প বাদ পড়েছে।
এছাড়া, রূপপুর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের দুটি প্যাকেজও বাদ পড়েছে এলওসি তালিকা থেকে। এসব প্রকল্পে ভারতের ঋণ প্রস্তাব ছিল ১.১৩ বিলিয়ন ডলার।
তিনটি এলওসি ঋণচুক্তির আওতায় ভারত ঋণ দিচ্ছে মোট ৭.৩৬২ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে প্রথম এলওসিতে ৮৬২ মিলিয়ন ডলারের জন্য চুক্তি সই হয়েছিল ২০১০ সালের ৭ আগস্ট। দ্বিতীয় এলওসির ঋণ চুক্তি হয় ২০১৬ সালের ৯ মার্চ। এই এলওসি'র আওতায় ভারত ঋণ দিচ্ছে ২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া, ভারতের সঙ্গে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের তৃতীয় এলওসি হয় ২০১৭ সালের মার্চে।
ভারত থেকে অতিরিক্ত ঋণ
চলমান প্রকল্পগুলোর জন্য ভারতের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৮০৪.২৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ চাইছে বাংলাদেশ।
ইআরডি কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তবায়ন বিলম্বসহ ডিজাইন পরিবর্তন, নতুন অঙ্গ হওয়ায় এসব প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।
বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন প্রকল্পে অতিরিক্ত প্রয়োজন হচ্ছে ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার। ফলে এই প্রকল্পে ঋণ বেড়ে হবে ৫৯৫.৬৭ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল রেল লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে দ্বিতীয় ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ প্রকল্পে ১৭৮ মিলিয়ন ডলার, খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পে ৮০ মিলিয়ন ডলার, আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-আখাউড়া চার লেন প্রকল্পে ৭১.০৬ মিলিয়ন ডলার, ১২ জেলায় আইটি ও হাই-টেক পার্ক স্থাপনে ৫৫ মিলিয়ন ডলার এবং আশুগঞ্জ কন্টেইনার রিভার পোর্ট প্রকল্পে অতিরিক্ত ৩৫.১৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ সরবরাহ করা হবে।
এই প্রকল্পগুলোয় শুরুতে ১.১৭ বিলিয়ন ডলার ভারতীয় ঋণের প্রস্তাব ছিল। অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে এখন ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলারে।