বৃষ্টির বিঘ্ন কাটিয়ে চামড়া আসতে শুরু করেছে সাভারের ট্যানারিগুলোতে
ঢাকার সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিগুলোতে দুপুরের দিকে অল্প পরিমাণে কাঁচা চামড়াবহনকারী ট্রাক ও পিকআপ এলেও সন্ধ্যার পর থেকে চামড়া আসার পরিমাণ বেড়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে কিছু চামড়া নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।
বিটিএ'র সাধারণ সম্পাদক এবং সালমা ট্যানারির মালিক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দুপুরের পর থেকে চামড়া ট্যানারিতে আসা শুরু করলেও বৃষ্টির কারণে পরিমাণ কিছুটা কম ছিল।
প্রায় ৫ থেকে ৬ শতাংশ চামড়া বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান রিজওয়ান টিবিএসকে জানান, বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিল্পনগরীর বিভিন্ন ট্যানারিতে সাড়ে ১২ হাজার চামড়া প্রবেশ করেছে।
'দিনের প্রথম ভাগে চামড়া কম আসায় রাতে চাপ অনেক বাড়বে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমাদের টিম মাঠে কাজ করছে। সবকিছু কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে,' বলেন তিনি।
অন্যদিকে চামড়ার কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন ঢাকাসহ এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসার লোকজন।
সাভারের শিমুলতলার একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে ৮০ পিস গরুর চামড়া নিয়ে শিল্পনগরীতে এসেছিলেন মো. মঞ্জুরুল হক।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'প্রতি পিস চামড়ায় দুই–তিনশ টাকা কম বলছেন ট্যানারি মালিক ও আড়তদারেরা। যেসব চামড়া অন্য বছর ৯০০–১০০০ টাকা বিক্রি করেছি, এবার সেগুলো সাত থেকে আটশ টাকা দাম বলছেন।'
যদিও চামড়ার মুল্য কম দেওয়ার এমন অভিযোগকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলছেন বিটিএ সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ। 'আমাদের কাছে যেই খবর রয়েছে, তাতে প্রতিটা ট্যানারি নির্ধারিত মূল্যেই চামড়া সংগ্রহ করছে,' বলেন তিনি।
এ বছর গরু, মহিষ ও ছাগল মিলিয়ে মোট এক কোটি পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিটিএ।
এদিকে চলতি বছর কাঁচা চামড়ার দাম বৃদ্ধি চামড়া খাতের ব্যবসায়ীদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা।
ঢাকায় কোরবানির পশুর লবণ মেশানো চামড়ার দাম সরকার তিন টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা করেছে। আর ঢাকার বাইরে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।
'বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা সবারই জানা — এর মধ্যে সরকার যেহেতু দাম বৃদ্ধি করেছে — আমাদেরও বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই চামড়া কিনতে হচ্ছে। কিন্তু এটি আমাদের ওপর মারাত্মক চাপ তৈরি করছে,' বলছিলেন শিল্পনগরীর প্রগতি ট্যানারির মালিক নুরুল আলম।
তিনি বলেন, সিন্ডিকেট করে লবণ আর রাসায়নিকের দাম বাড়ানো হয়েছে, চামড়ার দামও বাড়ানো হলো। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চামড়ার দর কিন্তু বাড়েনি। কাজেই এই যে বাড়তি চাপ এটি সামাল দেওয়া ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জ।
'কিছু করার নেই। ভালো চামড়া বেছে বেছে নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করব, যেগুলো খারাপ থাকবে বাদ দিয়ে দেব। আশা করছি পাঁচ থেকে সাত হাজার পিস আজকে সংগ্রহ করতে পারব,' তিনি যোগ করেন।
সদর ট্যানারির মালিক মাসুদ চৌধুরী আজকে ২০ হাজারের বেশি চামড়া সংগ্রহ করবেন বলে আশা করছেন। 'তবে এ বছর চামড়ার বাড়তি দর আমাদের ওপর চাপ তৈরি করবে। দেখা যাক কী হয়। বাড়তি দামে কেনা ছাড়া তো উপায় নেই, হয়তো কিনে মজুত করে রাখব। ক্রেতা ওই দামে কিনতে চাইলে বিক্রি হবে, নাহলে বসে থাকতে হবে।'
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ' চামড়া শিল্পকে কেন্দ্র করে সব জায়গায় আমাদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সড়কে যেন কোনো অসুবিধা না হয়, কোথাও যানজটের সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমাদের পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।'