ফ্রান্সে বিক্ষোভ: ছড়িয়ে পড়েছে দাঙ্গা, ৪০ হাজার পুলিশ মোতায়েনের ঘোষণা
গত মঙ্গলবার প্যারিসের একটি শহরতলীর তল্লাশিচৌকিতে নাহেল নামের এক কিশোর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। উত্তর আফ্রিকার আরব বংশোদ্ভূত এই কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় তারপর থেকেই বিক্ষোভে, সংঘাতে উত্তাল ফ্রান্স। আজ বৃহস্পতিবারেও পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। সংকট সমাধানে হিমশিম দশা প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও তার প্রশাসনের।
এর আগে বুধবার-ই দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন শহরের টাউন হল, বিদ্যালয় ও পুলিশ স্টেশন লক্ষ্য করে হামলা করেছে বিক্ষোভকারীরা। যা তিনি 'ভয়াবহ সহিংসতা' অভিহিত করেন। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
নাহেলের স্মরণে সড়কে শান্তিপূর্ণ এক পদযাত্রা কর্মসূচির পর, বৃহস্পতিবার প্যারিসের পশ্চিম উপকন্ঠে অবস্থিত নাতেরে শহরতলীতে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেড স্থাপন করেছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা, পাথর ইত্যাদি ছুঁড়ে মারছে। পুলিশও তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পাল্টা টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে। পরিস্থিতি নিয়েছে বিস্ফোরক রূপ। এরমধ্যেই অন্তত একটি ব্যাংক লুটের ঘটনাও জানা গেছে।
বিভিন্ন ভবন ও বাসের গায়ে স্প্রে কালারে লেখা হয়েছে, 'নাহেলের জন্য প্রতিশোধ চাই'।
গত মঙ্গলবার প্যারিসের তল্লাশিচৌকিতে ১৭ বছর বয়সী নাহেল পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। পুলিশ দাবি করে, নির্দেশনা না মেনে পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই কিশোরকে গুলি করা হয়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের দুজন কর্মকর্তা গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের একজন গাড়ির জানালা দিয়ে চালকের দিকে অস্ত্র তাক করেন। চালক গাড়ি চালানো শুরু করলে খুব কাছ থেকে গুলি করেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। কয়েক মিটার দূরে গিয়ে গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বার্তা সংস্থা এএফপি ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে।
রয়টার্স আরও জানায়, তাদের হিসাবে ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে যত মানুষ নিহত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ অথবা আরব বংশোদ্ভূত। চলতি বছর ফ্রান্সের ট্রাফিক তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে এ নিয়ে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। আর এতেই ফ্রান্সে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক আরব ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার গুলিবর্ষণের ঘটনা নিয়ে সিনিয়র মন্ত্রীদের সাথে সংকটকালীন বৈঠক করেছেন মাখোঁ। এরমধ্যেই ফ্রান্সের কিছু বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক জাতীয় জরুরি অবস্থা জারির আহ্বান জানালেও, তা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডার্মানিন বলেছেন, অরাজকতা মোকাবিলায় দেশব্যাপী ৪০ হাজার পুলিশ অফিসারকে মোতায়েন করা হবে। বুধবারে মোতায়েন করা পুলিশ সদস্যদের চেয়ে এই সংখ্যা চারগুণ বেশি। এদিন প্যারিল অঞ্চলে বিক্ষোভ দমনে ৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ডার্মানিন বলেন, 'রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া হবে অত্যন্ত কঠোর'।
এদিকে নেহালকে গুলি করা পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে, তাকে সজ্ঞানে হত্যার দায়ে পুলিশ আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একজন প্রসিকিউটর। ফ্রান্সের বিচার প্রক্রিয়া অনুযায়ী, কারো বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করার অর্থ, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শামিল।