বিহারি ক্যাম্পের মৌসুমী কসাই: অন্যসময় সেলসম্যান, অটোচালক, ছুটিতে সাজেক ভ্রমণকারী
ঈদের চতুর্থ দিনেও ছুটির আমেজেই ছিল মিরপুর ১০ নম্বরের ঝুট পট্টি বিহারি ক্যাম্প। বৃষ্টি-বন্যায় ইট খুইয়ে ফেলা ছোট্ট গলিটার এখানে সেখানে পানি জমে আছে। তার মধ্যেই ছোট ছোট জটলা করে তরুণ-যুবা, মাঝবয়সী আর বৃদ্ধরা আড্ডা জমিয়েছে। গলির মুখে ভ্যানের ওপর বসেছিল তিনজন- মো. নূরুদ্দিন, মো. নাসিম, মো. রানা। নূরুদ্দিন অটো চালায়, নাসিম সেলুনে কাজ করে আর রানা একটি পোশাক কারখানায় সুতা গোছায়। কিন্তু কোরবানীর ঈদের প্রথম দুই দিন তারা বনে যায় কসাই। শখের কসাই বা মৌসুমী কসাই। ঈদের ছুটিটাকে কাজে লাগায় তারা।
নূরুদ্দিনের সংসার আছে। তিন ছেলেমেয়েসহ পাঁচজনের পরিবার তার। ছোটবেলাতে মামা-চাচাদের সঙ্গে গোশত কাটতে যেতেন, সে থেকে অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে। মহাখালি ডিওএইচএসের এক বাড়িতে তাদের বাঁধা কাজ। ৪ জনের দলে তার বন্ধু দলনেতা। এক গরুতে ১৫০০০ টাকা পেয়েছে, আরেকটি গরু ছোট ছিল তা থেকে পেয়েছে হাজার দশেক। টাকা ভাগ হয় যোগ্যতা বুঝে, অর্থাৎ কে কতটা দক্ষ তার ওপর। নূরুদ্দিন বললেন, 'ঈদে পাওয়া ওই টাকাটা দিয়ে ঘরের কিছু জিনিসপত্র কিনব। এই বাজারে সংসার চালানোই মুশকিল, সৌখিনতা বা বিলাসিতা করার সুযোগ আমাদের নেই। প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে আর আমাদের মতো মানুষের অভাব বাড়ে। সাড়ে ৩০০ টাকা জমা বাদ দিলে সারাদিন অটো চালিয়ে থাকে ৪০০-৫০০ টাকা। বাবাকে বহুদিন হয় কিছু দিতে পারি না। মাংস কাটি কিন্তু মাংস খাওয়ার সুযোগ হয় না। সারা মাসে হয়তো আধা কেজি গোশত কেনার টাকা যোগাড় করতে পারি। তবে একটা ব্যাপারে কোনো ছাড় দিই না সেটা হলো ছেলে মেয়েদের পড়াশোনায়। নিজে পড়তে পারিনি, সেই দুঃখ রয়ে গেছে। বাচ্চারা কষ্ট করুক, এটা চাই না।'
রানা ও নাসিমের সংসার নেই। তারা একটা গরুর কাজই করেছে এবং তা এলাকাতেই। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে শখের বসে যায়। হাজার দেড় বা দুই যা-ই পায় তা দিয়ে আনন্দ করে, বেড়াতে যায়, রেস্তোরাঁয় খায়। রানা বললো, 'গরীব খায় ভালো, আমাদের মন বড়। যা কামাই সব খেয়ে ফেলি। এই বিশ্বাস আছে যে, কাজে গেলেই ৫০০ টাকা পকেটে আসবে। তাই চিন্তা-ভাবনা কম। গত বছর কক্সবাজার গেছিলাম, চার দিন থেকে আসছি। এবারও যাওয়ার ইচ্ছা আছে।'
পরিচয় সংকটে ভুগেছে তিন প্রজন্ম
বিহারী ক্যাম্পের ছেলে মেয়েরা কাজে লেগে যায় ৮-১০ বছরের মধ্যেই। পোশাকে কারুকাজ, গোশত কাটা, গ্যারেজ হেলপার বা চুল কাটার কাজ করে তারা বেশি। নতুন প্রজন্মের কেউ কেউ স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে কিন্তু আগের তিন প্রজন্মের পরিচয় সংকটেই কেটে গেছে অনেক সময়। তারা নির্দিষ্ট জায়গায় একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকে। নিজের কমিউনিটির বাইরে ওঠাবসা কম। অনেকদিন পর্যন্ত তাদের পরিচয় ছিল 'আটকে পড়া পাকিস্তানি' হিসেবে।
১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের মধ্যস্থতায় তাদের বসবাসের জন্য ৬৬টি ক্যাম্প বরাদ্দ করা হয়। এসব ক্যাম্পে তারা জমির মালিকানা পায় না তবে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছে। শুধু মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের চারটি ব্লকে ৩০ হাজার বিহারী বাস করে। দেশভাগ ও দাঙ্গা গণহারে এদের বিহারী পরিচয় দিয়েছে। দেশভাগের সময় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার ফলাফলে ১৬ লাখ মুসলমান পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসতে বাধ্য হয়। এদের মধ্যে ১০ লাখ ছিল বিহারের। তারা মূলত উর্দুভাষী। তারা রেল, পুলিশসহ আরো সব বেসামরিক পদে নিয়োগ পায়। সৈয়দপুরে বিহারীদের একটি বড় জনগোষ্ঠির অবস্থান নেওয়ার পেছনের কারণ রেল কারখানা। যদিও এটা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ আমলেই।
বিহারীরা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তী ঘটনা পরম্পরায়। কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিল। পাকিস্তান ১৯৭৪ সালের এক চুক্তিতে ১ লক্ষ ৭০ হাজার বিহারী শরণার্থীকে গ্রহণ করে। এরপরই প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়। এরপরও অনেক বছর বিহারীরা পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ারই স্বপ্ন দেখত। তাদের নেতা সাদেক খান তখন স্লোগান দিতেন, 'আটা-রুটি খাব, পাকিস্তান চলে যাব'। কিন্তু পাকিস্তান এক পর্যায়ে নতুন শরণার্থী নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরিচয়হীন হয়ে যায় আটকে পড়া পাকিস্তানীরা।
পুনর্বাসন দাবীটাই বড়
নূরুদ্দিন, রানা ও নাসিমকে ছাড়িয়ে ক্ষত-বিক্ষত রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়ে পেলাম 'উর্দূ স্পীকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্ট' এর কার্যালয়। দরজায় তালা লাগানো দেখে হতাশ হওয়ার আগেই একজন সুশ্রী, সুশীল ব্যক্তি এগিয়ে এলেন। বয়স তার ৩৫ হবে। নাম বললেন, মো. সালাউদ্দিন। তিনি ওই মুভমেন্টের ঝুট পট্টি ক্যাম্পের সাধারণ সম্পাদক। আমার পরিচয় ও উদ্দেশ্য জানার পর কথা বলতে দ্বিধা করলেন না। বললেন, 'আমরা কিন্তু আর আগের স্লোগান দেই না। এখন আমাদের স্লোগান হলো- 'আটা-রুটি খাবো না, পাকিস্তান যাবো না'। আমাদের এখনকার প্রজন্মের বেশিরভাগেরই জন্ম একাত্তরের পরে। একাত্তরে আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভুল করে থাকতে পারে কিন্তু আমরা নতুন প্রজন্ম কেন তার ফল ভোগ করব? ৮ ফুট বাই ১০ ফুটের ঘরে বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকা কি সম্ভব? কোনো কোনো ঘরে পালা করে লোক ঘুমায়, একদল সকালে তো আরেকদল বিকালে, তৃতীয় দলটি রাতে। এভাবে চলে যাচ্ছে বছরের পর বছর। আমাদের কোনো আশা নেই, কোনো স্বপ্ন নেই। ২০০৮ সালে আমরা ভোটাধিকার পেয়েছি, আমাদের এখন এনআইডিও আছে। তবে অনেক নাগরিক অধিকার থেকেই আমরা বঞ্চিত। আমরা এই ছোট্ট একটু জায়গাতেই ঘুরে ফিরে মরি। সব ক্যাম্পেই দেখবেন একই অবস্থা। সরকারের কাছে আমাদের এখন একটাই দাবী, আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন। চলতি সরকারের উন্নয়নের সুফল আমরাও পেতে চাই।'
বিহারীদের ভোটাধিকার পেতে অবশ্য ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে হয়েছে যেমন সাইকেল র্যালি, মানববন্ধন বা সাংবাদিক সম্মেলন। বিহারী অধিকার আদায়ের নেতা হলেন সাদাকাত খান ফাক্কু। তিনি কাউন্সিলর পদে নির্বাচনও করেন। মো. সালাউদ্দিন দাবী করেন, 'ঢাকা ১৬ আসনে ৭০ হাজার বিহারি ভোটার আছে। ভোটাধিকার পাওয়ার আগে বিহারী ক্যাম্পগুলোতে জনপ্রতিনিধিদের কেউ আসত না, তাদের খবর কেউ নিত না, তারা ছিল সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন। এখন পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হচ্ছে দিনে দিনে।'
কোরবানীর পরের দেড়মাস বসে থাকতে হয়
সালাউদ্দিনকে ছাড়িয়ে অল্প একটু এগিয়ে গিয়ে একটি চটপটির দোকান দেখলাম। এর উল্টোদিকেই বসে ছিলেন মো. হোসেন। তিনি একজন জাত কসাই, অর্থাৎ বংশপরম্পরায় মাংস কাটার কাজ করেন। ছোটখাটো সরু মানুষ। বয়স ৩৬-৩৭ হবে। তিনি দুইটি রূঢ় বাস্তবতাকে সামনে আনলেন। এক- মৌসুমী কসাইদের জন্য নিয়মিত কসাইদের দর কমে যাচ্ছে। তারা (মৌসুমী কসাইরা) কাজ পেতে গিয়ে আসল বাজার মূল্য কমিয়ে দিচ্ছে। দুই- কোরবানীর ঈদের পরে দেড় থেকে দুই মাস কসাইয়ের দোকানে ব্যবসা হয় না বললেই চলে। অথচ তখনো ঘর ভাড়া দিতে হয়, স্টাফদের বেতনও দেওয়া লাগে, তাই এই দুইমাসের টাকা কোরবানীর সময়ই তুলে নিতে হয়।
হোসেন শিক্ষানবিশ ছিলেন ২০ বছর, ৪ বছর হলো নিজের দোকান দিয়েছেন। সঙ্গে একজন পেলেই তিনি একটা গরু বানিয়ে ফেলতে পারেন। তবে মহল্লার ভাই বেরাদরদের সাহায্য করার নিয়তে ৬ জনের দল বানিয়ে নেন কোরবানীর ঈদে। তাতে সবাই কিছু না কিছু টাকা পায়। হোসেনের পাশের চেয়ারে বসে ছিলেন ইলিয়াস। দাদার গরু বানাতে গিয়ে কাজটা শিখে ফেলেছিলেন। বাবা ছিলেন বাবুর্চি। বনানীর এক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি খাবার তৈরি করে দেওয়ার কাজ পেতেন। একবার কোরবানীর ঈদ এগিয়ে এলে প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেছিলেন, তোমার চেনা কোনো কসাই থাকলে জানাও। তখন বাবা বলেছিলেন, আমি নিজেই পারব। মালিক বিশ্বাস করে কাজটা দিয়েছিলেন, বিশ্বাসের মর্যাদাও রেখেছিলেন বাবা। তারপর বাবার পরে ইলিয়াস কাজটা পান। বছরে একবারই তিনি গরু বানানোর কাজ করেন। অন্য সময় তিনি বাবুর্চি। যা বাড়তি টাকা পেয়েছেন তা দিয়ে বাড়ি সংস্কারের কাজ করবেন ভাবছেন।
২২ বছরের ছেলে মো. বাপ্পিরও জাতি পেশা কসাইগিরি। চাচা-চাচি-ভাতিজা-দাদা-দাদী মিলিয়ে ২০ জনের পরিবার তাদের। পরিবারে যাদেরই কাজের বয়স হয়েছে তারা সকলেই বছরভর মাংস কাটার কাজ করে। কারো দোকান আছে, কেউবা কর্মচারী। বাপ্পী এবার ৯ জনের দল নিয়ে ১২টি গরু বানিয়েছেন। সবাইকে উপযুক্ত শ্রমমূল্য দেওয়ার পর তার আছে ৪৫ হাজার টাকা। বাপ্পী প্রাপ্ত টাকা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করাবে আর কিছুটা আলাদা করে রেখেছে বেড়াতে যাওয়ার জন্য। এর আগে সে কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি গেছে। এবার সাজেক যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
কসাই তারকা জীবন
মো. জীবন এবারের ঈদে পুরো মহল্লায় তারকাখ্যাতি পেয়েছে। কারণ সে একটা গরুই বানিয়েছে ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে। মিরপুর ১১ নম্বরে একজন ডাক্তার সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিয়ে গরুটি কিনেছিলেন। জীবনের মা ডাক্তারের পেশেন্ট ছিলেন। তিনি অনুরোধ করেছিলেন যেন কাজটি তার ছেলে জীবনকেই দেওয়া হয়। সেভাবে কাজটি পেয়েছিলেন জীবন। তবে ঈদের আগের রাতটা খুবই টেনশনে গেছে তার। এতবড় গরু এই প্রথমবারের মতো। জানেন না পারবেন কি না।
মানত করলেন, কাজটা যদি ঠিকঠাক উঠে যায় তবে ১ নম্বরে শাহ আলীর মাজারে গিয়ে চাদর দেবেন। ঈদের দিন ৭টায় গরু জবাই করা হলো। তারপর থেকে নিজের দল নিয়ে জীবন কাজে লেগে যায়। দুপুর ১ টা নাগাদ কাজও শেষ হয়ে যায়। ডাক্তার সাহেব খুশি হয়ে ১ হাজার টাকা বখশিস দিয়েছেন। মোট ১৫ মণ গোশত হয়েছিল গরুটি থেকে। ঈদের তৃতীয় দিনে ৭০০ টাকা দিয়ে চাদর কিনে শাহ আলী মাজারে গিয়েছিলেন, সঙ্গে গোলাপ জল, আতরও দিয়ে এসেছেন। জীবন কাজ শেখার জন্য সিলেট, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জও গিয়ে থেকেছেন। কম টাকায় কাজ করেছেন কিন্তু শিখেছেন বেশি। তারই ফল পেলেন এবার।
ভিকির বন্ধু আকরাম
জীবনের সমবয়সী ভিকি। সেও পেশাদার কসাই। ২০ জনের একটি দল তৈরি করেছিল সে, যারমধ্যে ১৪ জনই ছিল মৌসুমী। তিনটি দলে ভাগ হয়ে শিয়ালবাড়ি, মিরপুর ৬ নম্বর আর বেনারসী পল্লীতে কাজ করেছে দুইদিনে মোট ১৮টি গরুর। বেনারসী পল্লীর দিয়া কাতানের মালিকের গরুও ভিকি বানিয়ে দিয়েছে। সবাইকে শ্রমমূল্য দিয়ে ভিকির প্রায় ৯০ হাজার টাকা টিকেছে। তার ইচ্ছে নিজের একটা দোকান করার। ভিকির বন্ধু এবং দলের মৌসুমী সদস্য আকরাম ৭ হাজার টাকা পেয়েছে। অন্যসময় আকরাম বেনারসী পল্লীর এক দোকানে সেলসম্যানের কাজ করে। সে বলল, এই টাকা দিয়ে তার বেড়াতে যাওয়ারই ইচ্ছা। তারও পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছে এবার সাাজেক।
রাকিবও যাবে সাজেক
দলটিকে পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গলির শেষ মাথায় গেলাম যেখানে বহু বছর বয়সী বটগাছটি দাঁড়িয়েছিল জুবুথুবু হয়ে। পাশেই ছিল একটি মোবাইল ফোনের দোকান। এক তরুণ সামলাচ্ছিল দোকানটি। ছবি তোলার জন্য সে তার নিজের ফোনটি আমাকে ধার দিতে চাইল কারণ সেটি আইফোন, ছবি ওঠে ভালো। কথায় কথায় জানলাম রাকিব নামের এই তরুণও মৌসুমী কসাই হিসাবে কাজ করেছে। বলল, 'ছুটির দিন, বইসা থাইকা লাভ তো নাই, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কাজে গেলে আনন্দই হয়। টাকা পয়সা যা পেয়েছি তা দিয়ে সকলে মিলে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। সাজেক কখনো যাইনি, এবার সাজেক যেতে চাই'।
রাকিবের পরে মো. হাসিব গুড্ডুকে পেলাম এক চায়ের দোকানে। বড় ছেলের ঘরে তার নাাতিও আছে। বছরে এই একবারই কসাইয়ের কাজ করেন। অন্যসময় কখনো ইলেকট্রিক মিস্ত্রীর, কখনো রাজমিস্ত্রীর, কখনোবা পানির পাইপ সারানোর কাজ করেন। তিনি ঈদের দুই দিনে দুটি গরু আর তিনটি ছাগল বানিয়ে দিয়েছেন। দুটি গরুই ছিল ছোট ছোট। দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সবটা কাজ তুলে দিয়েছেন। যা টাকা পেয়েছেন তা দিয়ে কাঁচা ঘর পাকা করার কথা ভাবছেন। নীচতলার ওপরেও আরেকটি ঘর করা দরকার। তবে এখনই টাকায় কুলাবে না। আরো কিছু যোগাড় হলে পরে সম্ভব হবে ঘর তোলা। হাসিব বললেন, 'এতগুলো মানুষ আমরা, বউ-বেটিও আছে, কীভাবে একটা ঘরে থাকি বলেন?'
এভাবে আর কাহাতক
বিহারি ক্যাম্পে ঘুরতে ঘুরতে বারবারই মানিক বন্দোপাধ্যয়ের পদ্মা নদীর মাাঝির সেই কথাটি মনে পড়ছিল, 'ঈশ্বর এখানে থাকেন না'। ক্যাম্পের মানুষ পীরভক্ত, মাজারভক্ত। রজ্জব মাসে খাজা গরীবে নেওয়াজের ওরশ উপলক্ষে সারা মাস কাওয়ালির আয়োজন হয়। আগে মুশায়রা হতো মাসে এক দুটি। এখনো জেনেভা ক্যাম্পে হয় শুনেছেন সালাহউদ্দিন, তবে নতুন শায়ের আছে কি না নিশ্চিত করতে পারলেন না।
তিনি মিনতি ঝরা কণ্ঠে বারবার বলছিলেন, 'একটা জায়গা নিজেদের করে পেলে আমাদের হতাশা কাটবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা কিছু রেখে যেতে পারব। আমাদের ছেলেরা খুবই কর্মঠ কিন্তু যা ইনকাম করে সব উড়িয়ে দেয় কারণ আমাদের সামনে কিছু নেই। ভবিষ্যতের কথা ভাবার সুযোগ আমাদের হয় না। পুনর্বাসনের জন্যই এখন আমরা মাথা কুটে মরছি। এভাবে আর চলছে না। আপনারা 'ওপরে' বলবেন প্লিজ।'