ইজারা নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলে টেক্সটাইল শিল্প স্থাপন করতে পারবেন উদ্যোক্তারা
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকল ইজারা নিয়ে এখন থেকে টেক্সটাইল শিল্প স্থাপন করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ক নানা শর্তাবলী এবং রেফারেন্সে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)।
সম্প্রতি তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা নয়টি পাটকল বেসরকারি খাতে পাটকল ইজারা দেওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রণয়ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলের নিয়ন্ত্রক এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠানটি ইজারার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ বছর করেছে।
সংশোধিত শর্তাবলী অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা পাট, পাটজাত পণ্য বা টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। পাট ও টেক্সটাইল দু ক্ষেত্রেই তারা ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজে কাজ করতে পারবেন।
এর আগে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলগুলোতে শুধুমাত্র পাট বা পাটজাত পণ্য উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছিল বিজেএমসি। এক্ষেত্রে ইজারার মেয়াদ ছিল ২০ বছর।
বিজেএমসির চেয়ারম্যান আনিস মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বর্তমান পাটকলগুলোতে শুধুমাত্র পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য বেসরকারি খাতের কাছ থেকে আমরা খুব কমই সাড়া পেয়েছি। এ কারণে বস্ত্রশিল্প স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
"এখন উদ্যোক্তারা শুধু পাট ও পাটজাত পণ্যে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক নয়। তাছাড়া, টেক্সটাইল রপ্তানি সম্ভাবনার একটি প্রতিশ্রুতিশীল খাত," বলেন তিনি।
সরকার পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য এ পর্যন্ত তিনটি পাটকলকে ইজারা দিয়েছে; ইতোমধ্যেই উৎপাদনে ফিরেছে সেগুলো।
যেসব মিল ইতোমধ্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে নতুন শর্তাবলী প্রযোজ্য হবে কি না জানতে চাইলে কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বলেন, "যেসব মিল ইতোমধ্যে পাট উৎপাদন শুরু করেছে তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।"
"তবে, আমরা যদি তাদের কাছ থেকে আবেদন পাই তাহলে পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে," বলেন তিনি।
২০২০ সালের ১ জুলাই বড় লোকসান এবং অত্যধিক উৎপাদন খরচের কারণে সমস্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকল একযোগে বন্ধ করে দেয় সরকার। সেসময় প্রায় ২৫০০০ কর্মী চাকরি হারান।
এরপর সরকার বন্ধ পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৫টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলের মধ্যে ১৭টি ইজারা দেওয়ার জন্য ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রথম আন্তর্জাতিক দরপত্র দেওয়া হয়।
দরপত্রে শর্ত ছিল, একজন ইজারাদার শুধুমাত্র পাট, পাটজাত পণ্য ও পাটের-বৈচিত্র্য সম্বলিত পণ্য উৎপাদন করতে এসব পাটকল ব্যবহার করতে পারবেন।
বর্তমানে তৃতীয় দরপত্র চলছে, কিন্তু এখনও নয়টি পাটকল ইজারা দেওয়া বাকি।
ধীরগতিতে চলছে পাটকল ইজারা
বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলোকে ইজারা দিয়ে বেসরকারি খাতে পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়া দুই বছর আগে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি পাটকল উৎপাদনে যেতে পেরেছে।
বিজেএমসি কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং হঠাৎ করেই ডলার সংকটের কারণে ইজারা দেওয়ার গতি কমেছে।
পুরনো মিলগুলো চালু করতে নতুন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হলেও ডলার সংকটের মধ্যে সেগুলো আনা সম্ভব হবে না বলেও জানান তারা।
২০২১ সালে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রণয়নের শুরুতে প্রাণ, বে এবং আকিজ গ্রুপ সহ দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলের ইজারা নেওয়ার ইচ্ছাব্যক্ত করে।
এছাড়া ভারত ও যুক্তরাজ্যের কিছু উদ্যোক্তা পাটকলগুলোর ইজারা পেতে আগ্রহী ছিল।
বিজেএমসি'র মতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে তিনটি পাটকল পুনরায় চালু হয়েছে।
ইউনিটেক্স গ্রুপের অধীনে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কেএফডি জুট মিল; বে গ্রুপের অধীনে নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস এবং রশিদ গ্রুপের অধীনে জাতীয় জুট মিলসের কার্যক্রম চলছে।
কেএফডি জুট মিল ও বাংলাদেশ জুট মিলের পণ্য বর্তমানে রপ্তানি করা হচ্ছে। এছাড়া রশিদ গ্রুপ কলে তৈরি পণ্য (বিশেষ করে বস্তা) নিজেরাই ব্যবহার করছে। সারা দেশে চালের অন্যতম বড় সরবরাহকারী তারা।
বিজেএমসি কর্মকর্তারা বলছেন, সামনেই ছয়টি পাটকলের উৎপাদন পুনরায় শুরু করার জন্য একটি যৌথ পরিদর্শন হবে। বিজেএমসি ও নির্বাচিত উদ্যোক্তাদের এ যৌথ পরিদর্শন শেষে সেগুলো হস্তান্তর করা হবে।
ইজারা দেওয়া হবে তিন নতুন উদ্যোক্তাকে
বিজেএমসি জানায়, খুলনা ও চট্টগ্রাম জোনে তিনটি পাটকলের জন্য তিনজন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা বাছাই করা হয়েছে।
মিলস ফার্নিশিং লিমিটেড নামক চট্টগ্রাম জোনের একটি নন-জুট মিল ইজারা দেওয়ার জন্য ফোর এইচ অ্যাপারেলকে নির্বাচন করা হয়েছে; দৌলতপুর জুট মিলের জন্য ইউনি ওয়ার্ল্ড এবং যশোর জুট মিলের জন্য আকিজ জুট মিলকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
কিছুদিন আগেই কোম্পানিগুলোকে বাছাই করেছে কর্পোরেশন। বিজেএমসিকে ২৪ মাসের ভাড়া পরিশোধ করার পর কলগুলো তাদেরকে হস্তান্তর করা হবে।