আসছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বদলে যাবে ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থার চেহারা
উত্তরার বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সি সাইফুল ইসলাম ঢাকার নিরবচ্ছিন্ন যানজটের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিলে তার অফিসে যাতায়াতের কষ্ট সহ্য করে আসছেন। তবে সাইফুল ও তার মতো আরও হাজারো ঢাকাবাসীর জন্য সুখবর রয়েছে। বছর শেষ হওয়ার জন্য নতুন উদ্যমে অপেক্ষা করছেন সাইফুল, কারণ তখন যাতায়াতের নতুন তিনটি ব্যবস্থা—মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বিদ্যমান রাস্তাসমূহ—তার অফিসযাত্রাকে আরও ভোগান্তিহীন করে তুলবে।
কোনো রাখঢাক না করেই সাইফুল আনন্দিত গলায় বলেন, 'এটা আমার জন্য দারুণ খবর! আমাকে আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হবে না!'
'তাছাড়া আমার জ্বালানিও বাঁচবে অনেক বেশি,' বলেন একটি ব্যাংকে কর্মরত সাইফুল ইসলাম।
এই আসন্ন পরিবর্তনের সুফল পাবে উত্তরার বাইরের বাসিন্দারাও। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানের মধ্যে ভ্রমণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই মীরপুর ও গাজীপুর এলাকার বাসিন্দারাও শহরের মধ্যে যাতায়াতের এ উন্নতি উপভোগ করতে পারবেন।
এছাড়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আসন্ন উদ্বোধনও সনযুক্তি আরও বাড়াবে। পাশাপাশি বিমানবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রীদের প্রবেশ ও প্রস্থানকে সহজতর করবে।
ঢাকাবাসীর দৈনন্দিন যাতায়াত ও আকাশপথে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরও ইতিবাচকভাবে ভালো করার কথা স্বীকার করে বিশ্লেষকেরা এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে বেশ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন-৩ এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, মহাখালী ও তেজগাঁও হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার বিস্তৃত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সেপ্টেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এই এক্সপ্রেসওয়েটি রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোর বিকল্প সড়ক হিসেবে কাজ করবে। ফলে যানজট ও সময়ের অপচয় কমে আসবে।
বহুল প্রত্যাশিত এমআরটি লাইন-৬ অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মুহাম্মদ মফিদুর রহমানের ঘোষণা অনুযায়ী, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধনও ওই সময়ই করা হবে।
এছাড়াও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গাজীপুরের সঙ্গে বিমানবন্দরের সংযোগকারী বিআরটির পুরো ২০.৫ কিলোমিটার অংশ সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চল। দেশের জিডিপিতে এ অঞ্চলের অবদান প্রায় ৩৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে এমআরটি প্রকল্পসমূহের মালিকানাধীন কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ কোম্পানির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০ হাজার জনসংখ্যার ঘনত্ব থাকা সত্ত্বেও ঢাকা মহানগরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে সড়কঘনত্ব মাত্র ৬.১২ কিলোমিটার।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় মাত্র ৬.৪ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যা হাঁটার গতির চেয়ে সামান্য বেশি। প্রতিবেদনে জোর দিয়ে ঢাকায় যানজটের কারণে বছরে প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রকল্পগুলো একই সময়ে চালু হলে ঢাকার যানজট পরিস্থিতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
'ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে চলমান বেশ কিছু প্রকল্প আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে—এটা ভালো খবর,' বলেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান।
'ঢাকা শহরে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি ট্রিপ দেওয়া হয়, এবং গণপরিবহন ব্যবস্থাই যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান। বিআরটি ও এমআরটি প্রকল্পগুলো ঢাকার যানজট কমাতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়,' যোগ করেন তিনি।
এমআরটি-৬-এ দৈনিক যাত্রী পাঁচ লাখ
কর্ম পরিকল্পনা ২০৩০ অনুসারে, ছয়টি মেট্রো রেললাইনের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর দৈনিক ৫০ লাখের বেশি যাত্রীকে সেবা দেওয়া যাবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচলকারী প্রথম লাইন এমআরটি লাইন-৬-এর দৈনিক যাত্রী পরিবহন-ক্ষমতা পাঁচ লাখ।
এমআরটি লাইন-৬-এর অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আমরা ২০২৪ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ পুরোদমে চালু করতে চাই। ডেডলাইনের আগেই জনগণের জন্য যাত্রীসেবা শুরু করতে পেরে আমরা খুশি।'
ছিদ্দিকের মতে, মেট্রোলাইন যাতায়াতের সময় কমিয়ে আনবে। এর ফলে উৎপাদনশীলতা, আয় ও সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান বাড়বে।
গত ডিসেম্বরে উদ্বোধনের পর বর্তমানে উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬-এর নয়টি স্টেশন চালু রয়েছে।
সম্প্রতি সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চলতি বছরের অক্টোবরে আরও তিনটি স্টেশন—ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল—চালু হবে। এরপর বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনগুলোও চালু হবে।
ওবায়দুল কাদের জানান, এমআরটি লাইন ৬-এর সামগ্রিক কাজ ৯৫.৩৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ শতভাগ এবং আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের কাজ ৯৫.২৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল সিস্টেম, রোলিং স্টক ও ডিপো সরঞ্জামের কাজ ৯০.২৪ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
মেট্রো লাইনটি বাস্তবায়নের ফলে দৈনিক যাতায়াতের সময় ব্যয়ে ৮.৩৮ কোটি টাকা এবং যানবাহন পরিচালনার ব্যয় ১.১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিকের তথ্যানুসারে, প্রকল্পটির লক্ষ্য বছরে ২ লাখ ২ হাজার ৭৬২ টন কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনের প্রচেষ্টায় অবদান রাখা।
বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে সময় লাগে প্রায় ১০৫ মিনিট, মেট্রোরেলে লাগবে ৩৬.৪ মিনিট।
তবে প্রকল্প সূত্র টিবিএসকে জানিয়েছে, স্টেশন নির্মাণে বিলম্বের জন্য, বিশেষ করে প্রবেশ ও প্রস্থানপথ নির্মাণে বিলম্বের কারণে কিছু স্টেশন খুলতে সময় বেশি লাগবে।
বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার স্টেশন নির্মাণের অগ্রগতির হার যথাক্রমে ৯৪ শতাংশ ও ৯৫ শতাংশ। বিজয় সরণি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের কাজ ৯৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে জুনের শেষ দিকে প্রস্তুত করা প্রতিবেদনটি বলছে, কারওয়ান বাজার স্টেশনে প্রবেশ ও প্রস্থানপথ নির্মাণ এখনও অর্ধেক বাকি। আর শাহবাগ ও বিজয় সরণি স্টেশনে প্রবেশ ও প্রস্থানপথ নির্মাণের কাজ সমাপ্তির হার যথাক্রমে ৬০ শতাংশ ও ৭০ শতাংশ।
কারা সবচেয়ে লাভবান হবে?
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবীব বলেন, 'বিনিয়োগ ও পুঁজি ফ্রেন্ডলিনেসের' দিকে নজর না দিয়ে সরকারের এমন প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত যেগুলো অন্তর্ভুক্তি বাড়াবে।
তিনি বলেন, মেট্রোরেল পরিবহনের আধুনিক মাধ্যম হলেও এর উপকারভোগী মূলত মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
এছাড়া মেট্রো সিস্টেমের কার্যকারিতা অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থা ও শহরের সামগ্রিক হাঁটার-উপযোগিতার উন্নতির ওপর নির্ভর করে বলে মত দেন হাবীব। তিনি বলেন, পথচারীবান্ধব পরিবেশ ও দক্ষ সার্কুলার বাস সার্ভিস ছাড়া মেট্রোরেলের সুফল সীমিত পরিসরে থেকে যেতে পারে।
বিমানবন্দর সড়কে চাপ কমাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
ঢাকার প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে কুড়িল থেকে বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, সাতরাস্তা, মগবাজার রেল করিডর, খিলগাঁও, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও কুতুবখালীজুড়ে বিস্তৃত হবে।
এক্সপ্রেসওয়েটির দৈর্ঘ্য হবে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৯.৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল ফ্লাইওভার ও ৩১ কিলোমিটার এলিভেটেড লিঙ্ক এবং র্যাম্প রয়েছে। এতে পাঁচটি ইন্টারচেঞ্জ, দুটি এলিভেটেড লিঙ্ক, ১৫টি অন-র্যাম্প ও ১৬টি অফ-র্যাম্প থাকবে।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যঙ্গে যুক্ত করে উত্তর-দক্ষিণ করিডরে যানজট দূর করা।
এক্সপ্রেসওয়েটির লক্ষ্য ঢাকার শিল্প এলাকা, যেমন সাভার, ডিইপিজেড, বাইপাইল, কালিয়াকৈর ও গাজীপুরে দিনের বেলায় ট্রাক যেন আরও ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা। সেতু বিভাগের একটি নথি অনুসারে, এক্সপ্রেসওয়েটি আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের জন্য ব্যাঙ্কওয়ার্ড লিঙ্কেজ বাড়াবে এবং এশিয়ান হাইওয়ে করিডরে আঞ্চলিক সংযুক্তি উন্নত করবে।
বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটারের এই প্রকল্পের প্রথম ধাপটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে র্যাম্প আছে ১৫টি।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কুড়িল ইন্টারচেঞ্জ, আর্মি স্টেডিয়াম, সৈনিক ক্লাব, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ অ্যাভিনিউ, বিজয় সরণি থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন প্রবেশ করবে।
অন্যদিকে বিমানবন্দর, কুড়িল ইন্টারচেঞ্জ, ক্যান্টনমেন্ট, আর্মি স্টেডিয়াম, সৈনিক ক্লাব, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ অ্যাভিনিউ, ফার্মগেট হয়ে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে যানবাহন বের হবে।
তবে এই অংশের সবগুলো র্যাম্প প্রথম থেকেই প্রস্তুত হবে না।
প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যকর হবে, এমন র্যাম্পগুলো চিহ্নিত করার জন্য একটি মূল্যায়ন করেছেন সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আক্তার। তিনি বলেন, প্রস্তুত র্যাম্পগুলোর তালিকা চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় লাগবে।
আক্তার আরও বলেন, 'একটি র্যাম্প খুলতে টোল প্লাজা পরিচালনার জন্যও বাজেট প্রয়োজন। যেসব র্যাম্পে যানবাহন কম চলবে, সেগুলো খোলা হবে না।'
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি তিনটি ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত ৭.৪৫ কিলোমিটার অংশের ৯৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পেইন্টিং, সৌন্দর্যবর্ধন, সড়কবাতি স্থাপনসহ বাকি কাজ চলমান রয়েছে। বনানী থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত মূল এক্সপ্রেসওয়ের পাকাকরণের কাজ চলছে। আর তেজগাঁও থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত র্যাম্পে ভায়াডাক্ট স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ।
এক্সপ্রেসওয়েকে বিজয় সরণি ফ্লাইওভারের সঙ্গে র্যাম্প দিয়ে যুক্ত করার কাজও চলছে।
সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুসারে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহনকে সেবা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পটির বেশ কিছু সুবিধা থাকলেও গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ওপর এর প্রভাব নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
বুয়েট অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান স্বীকার করেন, এ প্রকল্পের লক্ষ্য যানজট কমানো হলেও এটি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে পারে।
গণপরিবহন, বিশেষ করে স্বল্প-ব্যয়ের সিটি বাসগুলোর টোলযুক্ত রাস্তা বা ফ্লাইওভার এড়িয়ে চলার প্রবণতা রয়েছে। এর ফলে গণপরিবহন ও জনদুর্ভোগের ওপর সামগ্রিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের ভোগান্তি কমাবে বিআরটি
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বিআরটি লাইন-৩ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত বিশেষায়িত বাস সার্ভিস সেপ্টেম্বরে চালু হবে, যা উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের দুর্ভোগের অবসান ঘটাবে।
ঢাকা বিআরটি কোম্পানি জানিয়েছে, প্রকল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ।
চালু হওয়ার পর বিআরটি লাইন বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ২০.৫ কিলোমিটার ভ্রমণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনবে। বর্তমানে এই রাস্তা পাড়ি দিতে ২ ঘণ্টা সময় লাগে, বিআরটি লাইন চালু হলে এ সময় মাত্র ৩৫-৪০ মিনিটে নেমে আসবে।
বিআরটি লাইন-৩ প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ যাত্রীকে সেবা দিতে পারবে। এমআরটি-৬ দৈনিক সেবা দিতে পারবে ৫ লাখ যাত্রীকে। এ দুটি লাইন বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা তো দেবেই, সেই সঙ্গে যানজট ও ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরতাও কমাবে। এর ফলে সার্বিক যাতায়াতের অভিজ্ঞতা আগের চেয়ে ভালো হবে বলে মন্তব্য করেন ড. হাদিউজ্জামান।