বগুড়ায় বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আহত অন্তত ৩০
একদফা দাবিতে বগুড়ায় বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ ঠেকাতে একাধিক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে হয় পুলিশকে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও পুলিশ একে-অপরকে পাল্টা দোষারোপ করছে।
আজ মঙ্গলবার সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুলের মোড়ে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দীকী রিগ্যান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ১০ সদস্য আহত হয়েছেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটের অধিকার, খালেদা জিয়ার মুক্তি, গুম-খুন ও সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের একদফা দাবি বাস্তবায়নে বগুড়ায় পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। এ লক্ষ্যে সকাল ১০টা থেকে বনানী টু মাটিডালী বিমান মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি দেয় জেলা বিএনপি।
কর্মসূচি অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে গাবতলী, শাহাজানপুর, ধুনট, শেরপুর ও বগুড়া শহরের কয়েকটি ওয়ার্ডেসহ বিএনপির অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন বনানী থেকে মিছিল নিয়ে সাতমাথার জেলা কার্যালয়ের দিকে রওয়ানা দেয়।
একই সময় মাটিডালী থেকে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, শিবগঞ্জ, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, তালোড়া, শহর বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনগুলো সাতমাথার উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করে।
একই দিন বেলা ১২টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দলীয় সমাবেশের আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগ।
স্থানীয়রা জানান, দুটি পদযাত্রার মধ্যে মাটিডালী থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছে যান। কিন্তু বিএনপির মিছিলটি ইয়াকুবিয়া মোড়ে এসে সোজা রাস্তা দিয়ে সাতমাথায় প্রবেশ করতে ধরে। ওই সময় মিছিলটিকে সাতমাথা হয়ে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য বাধা দেয় পুলিশ। এই বাধাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মিছিলের পিছন থেকে ইট ছুঁড়তে থাকেন তারা। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। বনানী থেকে আসা এই পদযাত্রায় প্রায় ৫০০ জন বিএনপি নেতা-কর্মী ছিলেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ তীব্র হলে- টিয়ারশেল এবং পরে রাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ।
প্রায় আধাঘণ্টা ধরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ চলে। এক পর্যায়ে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটের মুখে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা চলে যাওয়ার পর, ইয়াকুবিয়া মোড় এলাকায় রাস্তাজুড়ে অসংখ্য ইট-পাটকেল ও দলীয় ফেস্টুন পড়ে থাকতে দেখা যায়।
তবে এর কিছুক্ষণ পরে শহরের নবাববাড়ী রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয় এলাকায় ইটপাটকেল ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। নবাববাড়ী সড়কেও ককটেল বিস্ফোরণ হয়। সেখানেও দুই রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দীকী রিগ্যান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষের পরপর বিএনপির কার্যালয়ে জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খান জাহাঙ্গীর বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, "আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে সাতমাথার দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু, ইয়াকুবিয়া মোড়ে পুলিশ বিনা কারণে আমাদের বাধা দেয়। আমাদের ওপর তারা হামলা করেন। তাদের হামলায় আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন, এ জন্য সঠিক সংখ্যা আমরা জানতে পারিনি।"
ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, "বিএনপি ককটেল বিস্ফোরণের রাজনীতি করে না। ককটেল কারা ছুঁড়েছে আমরা জানি না। আর ওই হামলার পর আমাদের অনেক নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।"
হামলার দায় বিএনপির ওপর দিয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ বলেন, "আমরা নিরাপত্তার জন্য সেখানে অবস্থান নিয়ে ছিলাম। বিএনপির মিছিলের সঙ্গে আমাদের কোনো কিছুই হয়নি। তারা অতর্কিতে হামলা করে পুলিশের ওপর। এতে আমাদের অন্তত ৬ জন সদস্য আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে হয়।"
পুলিশ আত্মরক্ষার্থে বল-প্রয়োগ করেছে উল্লেখ করে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, "পুলিশ বারবার তাদের বোঝানো চেষ্টা করছিল যে, আপনাদের রুট যেটি সেদিকে যান। কিন্তু, তারা সেটা শুনেননি। আমরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে নই। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে, পুলিশের ওপর হামলা হবে তা সইবো না। বিশৃঙ্খলা দমন করতে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়েছে। আর এ কাজ করতে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।"
এ সময় সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান জেলা পুলিশ সুপার।
প্রসঙ্গত সংঘর্ষকালে ছোঁড়া টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় ইয়াকুবিয়া স্কুলের অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
বিএনপির পদযাত্রার পাশাপাশি এদিন বগুড়ায় জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল।
আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর শোভযাত্রাটি শহরের সাতমাথা এলাকা থানা রোড ঘুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেয়। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
এ সময় তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের সব ধরনের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। আপনারা যার যার এলাকায় সেই উন্নয়নের কথা প্রচার করবেন। আর যারা গণতন্ত্রের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করছে, তাদের প্রতিহত হতে একত্রিত হবেন।"