বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদকে ২ সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ হাইকোর্টের
দুর্নীতির মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের সাজা বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ রায় বিচারিক আদালতে পৌঁছানোর ১৫ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ৩০ মে টুকুর আপিলের আবেদন খারিজ করেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ২৭৩ পাতার পূর্ণাঙ্গ রায়টি আজ বুধবার (২৬ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিতে লিপ্ত হলে পুরো সমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে বলে রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, "দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। অনেক রাজনৈতিক নেতা এবং হাই-প্রোফাইল ব্যক্তি বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।রাজনীতিবিদরা জনগণ ও দেশের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার লক্ষ্যে রাজনীতিতে জড়িত হন। এটি জনগণ ও দেশের কল্যাণের জন্য এক ধরনের মহান ত্যাগ ও নিষ্ঠার কাজ। রাজনীতি টাকা উপার্জনের কোনো মাধ্যম হতে পারে না। বৈধ ব্যবসা এবং অন্যান্য পেশার আশ্রয় নিয়ে অর্থ ও সম্পত্তি অর্জনের অনেক উপায় রয়েছে।"
৪ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৯১৬ টাকার সম্পত্তির হিসাব ও আয়ের উৎস গোপন করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক শাহরিয়ার চৌধুরী ২০০৭ সালের মার্চে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকুর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন।
কমিশনের উপ-পরিচালক এসএমএম আখতার হামিদ ভূঞা ওই বছরের ২৮ জুন মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেন। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত মামলার রায়ে টুকুকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ১৫ জুন তাকে খালাস দেন।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে, ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি খালাসের রায় বাতিল করে হাইকোর্টকে পুনঃশুনানির আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের এই রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করেন টুকু। পরে সেই আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। এরপর হাইকোর্ট বিভাগে পুনঃশুনানি শেষে গত ৩০ মে রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ের প্রকাশের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত রায়ে বিচারিক আদালতের সাজা ও অর্থদণ্ড বহাল রেখেছেন। রায়ের কপি পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে তাকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, "দুর্নীতি সমস্ত লিঙ্গ, বয়স ও বর্ণের মানুষকে প্রভাবিত করে এবং এটি দরিদ্র ও দুর্বল গোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করে। দেশের জনগণ বিশেষত দায়িত্বশীল অংশীজনদের একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত যে তারা কেবল দুর্নীতির শিকারই নন, এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূল খেলোয়াড়ও। দুর্নীতিবাজেরা তাদের সমালোচকদের মুখ বন্ধ রাখতে এবং চুরি করা সম্পদ লুকানোর জন্য একে-অপরকে সাহায্য করে। তাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার সময় এসেছে।"
হাইকোর্ট বলেন, "আপনি যদি বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চান, তাহলে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। হিসাব দেওয়ার দায়িত্ব থাকতে হবে এবং আইনের বিধান অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।"