টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তার বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩২ জনের জামিন মঞ্জুর
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যাওয়ার নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২৪ শিক্ষার্থী সহ ৩২ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ফারহান সাদিকের আদালতে আজ এ আদেশ দেওয়া হয়।
এদের মধ্যে দু'জন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের জামিন আবেদন শিশু আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তৈয়বুর রহমান জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলা বাজারের নৌকাঘাট থেকে রোববার সকাল ৭টায় একটি নৌকায় (হাউসবোট) করে ৩৪ শিক্ষার্থী টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যান। হাওরে ঘোরার পর দুপুরের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে নতুনবাজারের সামনে নৌকাটি আসলে পুলিশের দুটি স্পিডবোট তাদের গতিরোধ করে। এসময় নৌকার চালক আহাদুল মিয়া, মুহাদ্দিস মিয়াসহ ৩৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
তাহিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে আইনজীবীদের একজন অ্যাডভোকেট আবদুল হক বলেন, 'দুই নাবালকের মধ্যে একজন বুয়েটের এক ছাত্রের ভাই। অন্য একজনকে নিয়ে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন ছাত্র যিনি ওই নাবালকের গৃহশিক্ষক।'
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বলেন, পুলিশ তাদের সন্দেহের কোনো কারণ জানাতে পারেনি।
'তারা গ্রেপ্তারের কোনো কারণ জানাতে পারেনি। ছাত্রদের রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যুক্তি দিতে পারেনি। তাই, শিক্ষার্থীরা জামিন পেয়েছে। সাধারণত এ ধরনের মামলায় তা হয় না।'
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দলটি কেবল ছুটি কাটাতে সেখানে গিয়েছিল।
'টাঙ্গুয়ার হাওর একটি পর্যটন স্পট। এখানে হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসে। মানুষ নিয়মিত দলবেঁধে আসে। এখানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কোনো সুযোগ ছিল না।'
দলটি থেকে জব্দ করা কথিত লিফলেট সম্পর্কে বলতে গিয়ে অ্যাডভোকেট আবদুল বলেন, গ্রুপের কয়েকজন ছাত্র নামাজের মতো নিয়মিত ধর্মীয় কর্তব্য বিষয়ক হাদিস এবং ইসলামিক আইনের বই ডাউনলোড করেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, 'পুলিশের দাবি অনুযায়ী তাদের কাছে কোনো বই ছিল না। কিছু শিক্ষার্থী গুগল থেকে হাদিস ও ইসলামিক আইন সম্বলিত ইসলামিক বই ডাউনলোড করেছিল।'
তিনি আরও বলেন, এই দলটি কোনো 'সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের' জন্য কোনো দ্বীপের দিকে যাচ্ছিল না।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩২ শিক্ষার্থীকে জামিন দেওয়ার বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে পুলিশের কোনো মন্তব্য নেই।
তিনি বলেন, 'আদালতের সিদ্ধান্ত যা-ই হোক না কেন আমরা সেটাকে সম্মান করি।'
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ জানান, পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, এসব শিক্ষার্থী সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে হাওরে জড়ো হয়েছে। তাই তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাহিরপুর থানার এস.আই রাশেদুল কবির বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর বিভিন্ন ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটানো, জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়।
পরে গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠায় আদালত।
সেদিন গ্রেপ্তার হওয়া বুয়েটের শিক্ষার্থীরা হলেন- আফিফ আনোয়ার, বখতিয়ার নাফিস, মো. সাইখ, ইসমাইল ইবনে আজাদ, সাব্বির আহম্মেদ, তাজিমুর রাফি, মো. সাদ আদনান, মো. শামীম আল রাজি, মো. আবদুলাহ আল মুকিত, মো. জায়িম সরকার, হাইছাম বিন মাহবুব, মাহমুদুর হাসান, খালিদ আম্মার, মো. ফাহাদুল ইসলাম, তানভির আরাফাত, এ টি এম আবরার মুহতাদী, মো. ফয়সাল হাবিব, আনোয়ারুল্লাহ সিদ্দিকী, আলী আম্মার মৌয়াজ, মো. রাশেদ রায়হান, সাকিব শাহরিয়ার, ফায়েজ উস সোয়াইব, আবদুর রাফি ও মাঈন উদ্দিন।
অন্যরা হলেন- আবদুল বারি, মো. বাকি বিল্লাহ, মাহাদি হাসান, টি এম তানভির হোসেন, আশ্রাফ আলী, মো. মাহমুদ হাসান, মো. এহসানুল হক, রাইয়ান আহম্মেদ, তানিমুল ইসলাম ও মো. আবদুল্লাহ মিয়া।