আম্পান: জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালীতে ৮ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে জলোচ্ছ্বাসে জেলার আট কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে প্রলয়ংকারী এই ঝড় যার আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে দুই দেশের বহু মানুষের ঘরবাড়ি।
উপকূলবর্তী জেলা পটুয়াখালীতে শুরুর দিকে এর গতি খুব একটা বেশি না থাকলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর গতি বাড়তে থাকে। এ সময় ঘন্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যায়।
রাত ৯ টার দিকে জোয়ার শুরু হলে বাতাস পানির গতিও বেড়ে যার। ফলে জেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। জেলার আটটি উপজেলার সবগুলোই বেড়িবাধ উপচে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। জেলা সদরের অরক্ষিত শহর রক্ষা বাঁধ অতিক্রম করে শহরের কলেজ রোড, সবুজবাগ, পুরানবাজার, কাঠপট্টি, লঞ্চ ঘাট এবং স্বনির্ভর রোড এলাকার বিভিন্ন বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।
প্রচণ্ড ঝড়ে কিছু গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। কিছু কিছু স্থানে গাছ পড়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিছু কাঁচা পাকা ঘর ও পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহের অবকাঠামো। নদীতে জোয়ার থাকায়, লালুয়া ইউনিয়ানের চারিপাড়া ও দুলাসার ইউনিয়ানের চরচাপলি, নিজামপুর, রামনাবাদ চ্যানেলসহ নিম্নাঞ্চলের অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। অনেক স্থানে নদীর পানি প্রবল বেগে আছড়ে পড়ছে জীর্ণশীর্ণ বেড়িবাঁধের উপর।
বর্তমানে জেলা বিভিন্ন উপজেলায় মাঠ গুলিতে কোন ফসল না থাকায় ফসলের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় নি।
অপর দিকে পটুয়াখালী সদর উপজেলা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা, গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন বেড়িবাধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করা খবর পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে অমাবশ্যা পানির চাপের সাথে জোয়ারের পানি জেলা শহরের অধিকাংশ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সুপার সাইক্লোন আম্পানের আঘাতে জলোচ্ছাসে পটুয়াখালী জেলার ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলার সকল উপজেলাতেই বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার রাত ৯ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের অনেক এলাকার বাঁধের উপর থেকে পানি প্রবাহিত হয়। এ সময় বিপৎসীমার ১৭৬ সেন্টিমিটার (প্রায় ৬ ফিট) উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। জেলায় মোট আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ছোট বিঘাই ইউনিয়নের ভাজনা এবং দশমিনা উপজেলার রংগোপালদী ইউনিয়নের বুরির কান্দা এলাকার বাঁধ বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে দ্রুত তা মেরামতের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে।
তিনি জানান, এ সময় জেলার ৭৫৩ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৪ লাখ মানুষ তাদের গবাদি পশু, হাস-মুরগি নিয়ে আশ্রয় নেয়। রাত ১২ টার দিকে ভাটা শুরু হলে ও বাতাসের গতিবেগ কমতে থাকলে আস্তে আস্তে পানি নামতে শুরু করে। যা এখনও অব্যাহত আছে। তবে জেলায় উল্লেখযোগ্য কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় নি।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তা দ্রুত জেলা প্রশাসক কার্যালয়কে অবহিত করার জন্য সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য জানা যাবে।