প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় আগেই বৈবাহিক জীবনের টানাপোড়েন নিয়ে মুখ খুলেছিলেন জাস্টিন ট্রুডো
সম্প্রতি সঙ্গী সোফির সাথে দীর্ঘ ১৮ বছরের বৈবাহিক জীবনের ইতি টেনেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এরই মাঝে পুরনো একটি সাক্ষাৎকারে ট্রুডো নিজের বৈবাহিক জীবনের কঠিন উত্থান-পতন নিয়ে যে সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন, সেটি ফের সামনে এসেছে।
মূলত ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনে সাক্ষাৎকারটি দেন ট্রুডো। তিনি অবশ্য তখনও দেশটির প্রধানমন্ত্রী হননি। সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের বৈবাহিক জীবন এবং পরিবারের ওপর রাজনীতির প্রভাব খুব স্পষ্টভাবেই আলাপ করেছেন।
সাক্ষাৎকারে ট্রুডো বলেন, "আমার চাকরিটা (রাজনীতি) বেশ কঠিন ও প্রচণ্ড চাপের। সকলেই এটা জানে যে, এক্ষেত্রে পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সারা দেশ ঘুরে কঠোরভাবে কাজ করার মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করাটা কতটা চ্যালেঞ্জিং।"
নিজের স্ত্রী সম্পর্কে ট্রুডো বলেন, "অনেক সময় সোফি আমার কাজ (রাজনীতি) অপছন্দ করেন। এমনকি আমার নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকায় আমাকেও অপছন্দ করেন। আবার একটা সময় সোফি বুঝতে পারে যে, যেই দেশ আমাদের এতকিছু দিয়েছে সেই দেশের সেবা করার জন্য আমাদের কত সম্ভবনা ও দায়িত্ব রয়েছে।"
সাক্ষাৎকারে ট্রুডো স্বীকার করে নেন, তাদের বিবাহিত জীবন একদম নিখুঁত নয়। তিনি বলেন, "আমাদের সম্পর্কে কঠিন সব উত্থান-পতন রয়েছে। তবুও সোফি আমার ভালোবাসা, সঙ্গী ও সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে রয়েছে। আমরা দুইজন একে অপরের প্রতি সৎ থাকি। এমনকি যখন কষ্ট পাই তখনও।"
ট্রুডোর এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপক জিজ্ঞেস করেই বসেন যে, তিনি কী তবে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ইঙ্গিত করছেন? উত্তরে অবশ্য ট্রুডো সাফ জানিয়ে দেন যে, "বিষয়টি এমন নয়।"
বর্তমানে ৫১ বছর বয়সী ট্রুডো ও ৪৮ বছর বয়সী সোফি বিয়ে করেছিলেন ২০০৫ সালের মে মাসে। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সবচেয়ে বড় সন্তানের বয়স ১৫ বছর।
২০১৫ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোফি নিজেও অন্য কারও সাথে সম্পর্কে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। বরং জবাবে কানাডার গ্লোব এন্ড মেইলকে তিনি বলেন, "আমি আপনাকে এটুকু বলতে পারি যে, বিয়ে খুব সহজ জিনিস নয়। আমরাও যে কষ্টের মধ্য দিয়ে গিয়েছি সেটা নিয়ে আমি একরকম গর্বিতই বলা যায়; হ্যাঁ, কারণ আমরা অকৃত্রিমতা চাই। আমরা দুজনেই স্বপ্নচারী এবং আমরা যতদিন সম্ভব একসঙ্গে থাকতে চাই।"
গত বুধবার ট্রুডো ও সোফি অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই নিজেদের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত একটি আইনি চুক্তিতে সই করার তথ্য জানান। বিবৃতিতে ট্রুডো বলেন, "সিদ্ধান্তটি নেওয়ার আগে আমাদের মধ্যে অনেকভাবেই আলোচনা হয়েছিল। যা ছিল অর্থবহ এবং জটিল। আমরা একে অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাসহ একটি ঘনিষ্ঠ পরিবারের মতো থাকব।"
ট্রুডোর কার্যালয় জানায়, বিচ্ছেদের বিষয়ে সমস্ত আইনি ও নৈতিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করার জন্য ট্রুডো ও সোফি কাজ করে যাবেন। এছাড়াও তারা সন্তানদের একটি নিরাপদ ও সহযোগিতামূলক পরিবেশে বড় করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া ছুটিও তাদের পরিবার একসঙ্গেই কাটাবে।
পরিবারিক সূত্র থেকে জানা যায়, সোফি খুব শীঘ্রই অটোয়াতে আলাদা বাড়িতে উঠবেন। তবে পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় তিনি সন্তানদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেও কাটাবেন। এতে করে সন্তানেরা স্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যেই বড় হতে পারবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, দম্পতির তিন সন্তান তাদের যৌথ হেফাজতে থাকবে।
ট্রুডো ও সোফিয়া ছোটবেলা থেকেই পরিচিত ছিলেন। ২০০৩ সালে তারা সম্পর্কে জড়ান।
সম্পর্কের দুই বছর পরেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ট্রুডো ও সোফি। আর বিয়ের প্রায় ১০ বছর পর ২০১৫ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে কানাডার ২৩ তম প্রধানমন্ত্রী হন ট্রুডো।
এদিকে, বিচ্ছেদের খবরে ট্রুডো পরিবারের শুভানুধ্যায়ীদের অনেকেই ব্যথিত হয়ে সহানুভূতি জানিয়েছেন। অনেকে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যক্তিগত জীবনের বোঝাপড়া ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবনেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর জননিরাপত্তা মন্ত্রী ডমিনিক লেব্ল্যাঙ্ক এমপিদের আশ্বস্ত করেছেন যে, ট্রুডো ভালো আছেন এবং তার ব্যক্তিগত জীবনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে হৈ চৈ তৈরির কিছু নেই।