সাতক্ষীরায় ১৬ হাজার টন আমের ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে সাতক্ষীরা জেলায় আম চাষীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছের আম ঝরে পড়েছে। অনেক গাছ উপড়ে গেছে। ঝরে পড়া এসব আমের কোনো ক্রেতা পাচ্ছেন না আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে একদিকে বিপর্যয়, অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে মহাবিপর্যয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের সুজনশাহ গ্রামের মৃত প্রত্যুত কুমার দত্তের ছেলে বুদ্দদেব দত্ত। আম, লিচুসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করেই চলে তার সংসার। ঘূর্ণিঝড়ে তার ২-৩ লাখ টাকার আম ঝরে পড়েছে। সেই সঙ্গে লিচু ঝরে ক্ষতি হয়েছে লক্ষাধিক টাকা।
কৃষক বুদ্ধদেব দত্ত বলেন, বুধবার রাতের ঝড়ে গাছের আম সব ঝরে গেছে। ২-৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। ঝরে পড়া আমের কোনো ক্রেতা নেই। এসব আম কি করব, বুঝতে পারছি না। আম বিক্রির টাকাতেই আমাদের সারা বছর সংসারের খরচ চলে।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে লিচু গাছের জন্য এক ব্যবসায়ী ৫০ হাজার টাকা দাম বলেছিলেন; কিন্তু বিক্রি করিনি। ভেবেছিলাম আরও বেশি দামে লিচু গাছটি বিক্রি করব। তবে ঝড়ের আম ও লিচু দুটোরই ক্ষতি হয়ে গেল। একটি ঘরও ধ্বসে পড়েছে।
এমন চিত্র জেলার সকল মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী ও চাষীর। পাটকেলঘাটা থানা এলাকার আব্দুল মতিন বলেন, আমাদের ৫০-৬০টি আম গাছ রয়েছে। সকল গাছের আম ঝরে পড়ে গেছে। লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি থেকে জানা গেছে, জেলায় আমচাষী রয়েছে ১৩ হাজার ১০০ জন। চলতি মৌসুমে পাঁচ হাজার ২৯৯টি বাগানে চার হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হিমসাগর ১৫৫০ হেক্টর, ল্যাংড়া ৫৬৪ হেক্টর আম্রপালি ৮৯৯ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, লতাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির আম রয়েছে।
খামারবাড়ির উপ পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলার দুই হাজার ২৭ হেক্টর জমির ১৬ হাজার ২৯৬ টন আমের ক্ষতি হয়েছে। আমগুলো সব ঝরে পড়েছে। আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
তিনি বলেন, কয়েকদিন পরই আম বাজারজাতকরণের উপযুক্ত হতো। সেই মুহূর্তে ঝড়টি আম ব্যবসায়ী ও চাষীদের কপালে হাত তুলে দিল। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পাঠাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া জেলায় সবজি আবাদ হয়েছে সাত হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দুই হাজার ৭২ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে পটল, কলা পেপে, ঝিঙ্গেসহ নানা ধরনের সবজি।