দুই ভাইয়ের স্বপ্ন গুড়িয়ে দিল আম্পান
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ঘোনা গ্রামের কৃষক জিল্লু রহমানের দুই ছেলে হোসাইন আহম্মেদ (২৭) ও জহিরুল হাসান (২০)। লেখাপড়া শেষ করে ঋণ নিয়ে নিজেদের সর্বস্ব খরচ করে জীবনে পাল্টে ফেলতে ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে মুরগির খামার শুরু করেন হোসাইন। তবে দুই ভাইয়ের স্বপ্ন তছনছ করে দিয়েছে ঘূর্ণঝড় আম্পান।
১৫ লাখ টাকা খরচ করে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তারা শুরু করেন মুরগির খামার। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে গড়ে তোলা ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যায় এক নিমিষেই। এখন তারা শুধু কেঁদেই চলেছেন। মাথায় থাকা পাঁচ লাখ টাকার ঋণ কীভাবে শোধ করবেন তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
উদ্যোক্তা হোসাইন আহম্মেদ জানান, বাবা কৃষক মানুষ। নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ১৪ শতক জমির উপর নতুন মুরগির খামার শুরু করি। খামারের বিল্ডিংসহ প্রস্তুত করতে খরচ হয়েছে সাত লাখ টাকা। ঘূর্ণিঝড়ের সময় খামারে আট লাখ টাকার পাঁচ হাজার সোনালী মুরগি ছিল। বুধবার ঝড়ের রাতে খামারের বিল্ডিং ভেঙে চাপা পড়ে সব মুরগি।
তিনি বলেন, একটি মুরগিও জীবিত নেই। খামারের ঘরটিও ভেঙে গেছে। ঈদের সময়ে আট লাখ টাকায় বিক্রি হতো। সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। নিজেদের সর্বস্ব শেষ হয়ে গেছে। রাস্তায় বসে গেছি। এখন পাঁচ লাখ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় উপরে।
জহিরুল হাসান বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নতুন খামার শুরুর পর মার্চে পাঁচ লাখ টাকার মুরগি বিক্রি করি। এপ্রিল মাসে নতুন করে পাঁচ হাজার সোনালী মুরুগি পালন শুরু করি। মুরগিগুলো চলতি মাসে ঈদের সময় বিক্রি হওয়ার কথা ছিল। বুধবার রাতের ঝড়ে সব ধ্বংস হয়ে গেছে।
তালা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকতা ডা. অভিজিৎ দাস বলেন, মুরগির খামারটি একেবারেই ধ্বসে গেছে। ১০-১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উদ্যোক্তা খামারীদের। ঘটনাটি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সরকার ক্ষতিগ্রস্থ খামারীদের কোনো সহযোগিতা দিলে তাদের ব্যাপারে জানানো হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলাবাপী ৮৬টি মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ছাড়া গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৯১টি। তালার ঘোনা গ্রামের পাঁচ হাজারের একটি সোনালী মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ খামারগুলোর তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাচ্ছি। খামারীদের কোনো সুবিধা সরকার দিলে তারা সেগুলো পাবেন ও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।