বিরল রোগে অসহ্য কষ্ট আরিশার, বাবা-মা নিরুপায়, দেখছেন আর কাঁদছেন
দশ দিন হয়ে গেল ওষুধ ছাড়া আর কিছুই খেতে পারেনি আরিশা। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় আর খিঁচুনিও ওঠে তার। দিনকয় আগে আইসিইউতে থাকার সময় খিঁচুনির বেদম ধাক্কায় পাঁচ বছরের মেয়েটা দুটি দাঁত ভেঙে ফেলেছে। চোখের সামনে মেয়ের এই কষ্ট কি সওয়া যায়? আরিশার মা আরিফা আক্তার মিমি এবার আর কান্না ধরে রাখতে পারলেন না। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আকাশটাও ভেঙে পড়ল। বৃষ্টি ঝরল অঝোরে সেদিন বিকালবেলায়।
জুলাই মাসের ২৩ তারিখ রাত ১২টার দিকে আরিশার আবার খিঁচুনি ওঠে। শরীয়তপুরে সেদিনও খুব বৃষ্টি হয়েছিল। বাসার সামনে প্রায় হাঁটুপানি। বাবা সেডিল (খিঁচুনি কমানোর ওষুধ) আনতে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। সাধারণত ওষুধটা বাসায় পর্যাপ্ত পরিমাণে জমা করে রাখেন। কিন্তু সেদিন ছিল না। রাস্তায় নেমে বাবা মো. আশরাফ কোনো দোকান খোলা পাাচ্ছিলেন না। শেষে হাসপাতাল রোডে একটাই দোকান খোলা পেলেন। দোকানি সাড়ে তিন টাকার ওষুধটার দাম চেয়ে বসল দেড়শ টাকা। নিরুপায় আশরাফ সে দামেই ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরলেন। তাতে খিঁচুনি কিছু কমেছিল আরিশার। কিন্তু পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি দেখে ভোরবেলায় সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তার ছিল না তখন, নার্সও নেই। আশরাফ নিজেই ইমার্জেন্সিতে গিয়ে অক্সিজেনের বোতল খুলে মাস্ক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মেয়ের মুখে।
আড়াই বছর ধরে ওষুধপত্রের একটা ব্যাগ সবসময় বয়ে নিয়ে চলেন আশরাফ-মিমি দম্পতি, তার মধ্যে মাস্ক আর সিরিঞ্জও থাকে। একটু সকাল হতে যখন ডাক্তার এলেন, দেখেশুনে বললেন ঢাকায় নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে এনে ভর্তি করানো হলো আরিশাকে। তিন দিন পর সেখান থেকে শিশু হাসপাতালে পাঠানো হলো। কর্তব্যরত ডাক্তার তক্ষুণি আইসিউতে ভর্তি করার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু আইসিউ'র কোনো সিট খালি নেই। তখন আশরাফ বাধ্য হয়ে ধানমন্ডির এক হাসপাতালে নিয়ে গেলেন মেয়েকে যেখানে সিট ভাড়া, ওষুধ, টেস্ট, অক্সিজেনসহ প্রতিদিন ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হতো। ৮ দিনে বিল উঠল দেড় লাখ টাকার বেশি। আশরাফ সাধারণ এক নিম্নবিত্ত মানুষ। স্ত্রী সরকারি এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, তিনি নিজে একটি বেসরকারি স্কুলের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। আড়াই বছর আগে আরিশার অসুখ ধরা পড়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।
আট দিন পর আরিশার অবস্থার কিছুটা উন্নতি দেখা দিলে আশরাফ ৫ আগস্ট মেয়েকে নিয়ে শরীয়তপুর ফিরে গিয়েছিলেন। আশরাফ এবার অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কথা বললেন। প্রতি মাসেই এক-দুবার আরিশাকে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় আসতে হয় আশরাফ আর মিমিকে। শরীয়তপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সের ন্যায্য ভাড়া ৫ হাজার টাকা, কিন্তু হাসপাতাল এলাকা থেকে রোগী ওঠালে ১১ হাজার টাকার কমে আসা যায় না। শেষবার যখন তিনদিন আগে এলেন, তখন আরিশাকে হাসপাতাল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে এক জায়গায় সিএনজি করে নিয়ে গিয়ে ৬ হাজার টাকা ভাড়ায় ঢাকা আনতে পেরেছেন।
শরীয়তপুর ফেরার তিন দিন পরের ঘটনা, আশরাফ মেয়েকে নল দিয়ে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু খাবার নিতে পারছিল না আরিশা, মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল অনবরত আর খিঁচুনি উঠছিল প্রবল। ভেবেছিলেন কফ আটকে গেছে। বাড়িতে থাকা সাকশন মেশিন দিয়ে কফ বের করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। শেষে গভীর রাতে আবার সদর হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। ডাক্তার বললেন, "এখানে বিশেষ কিছু করার নেই। ঢাকায় নিয়ে যান।" আবার শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসেন, কিন্তু আইসিউতে সিট তখনো খালি নেই। শেষে হাই ডিপেন্ডেসি ইউনিটে (এইচডিইউ) একটা পেয়িং বেডের ব্যবস্থা হয়, যার সিট ভাড়া দিনে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
ঘরটা যেন ফার্মেসি
বাড়িতে আশরাফ নেবুলাইজার মেশিন, সাকশন মেশিন, অক্সিমিটার কিনে রেখেছেন। ওষুধ তিনি পাতা ধরে কেনেন না বাক্স ধরে কেনেন। দিনে দুবার আরিশাকে ৮-৯টা ওষুধ দিতে হয়। কোনোটা দেড়শ এমএল, কোনোটা ৫০ এমএল। ওষুধের পরিমাণ এতটুকু এদিক ওদিক করার সুযোগ নেই। ভ্যালেক্স নামের একটা ওষুধের কথা বললেন আশরাফ, অসুস্থ হওয়ার পর থেকে কম করেও ২০ লিটার ভ্যালেক্স খেয়েছে আরিশা। মেয়েটার শরীরে ওষুধ ছাড়া বুঝি আর কিছু পাওয়া যাবে না। পাঁচ বছর বয়সী একটা বাচ্চা কত কষ্ট নিতে পারে! ওষুধ, ইনজেকশন, স্যালাইন ছাড়া ওর জীবন অচল আড়াই বছর ধরে। আশরাফের শখের লাইব্রেরির তাকে এখন আর নতুন বই রাখা হচ্ছে না, আরিশার ওষুধ রাখা থাকে। আশরাফের ভাষায়, এটা ঘরোয়া ফার্মেসি।
আরিশার মা বলছিলেন, "বয়স যখন ১৬-১৭, মাস আরিশাকে দেখতে লাগত পুতুলের মতো। মুখখানা ছিল মায়াকাড়া। সবাই কোলে নিতে চাইত। খালি জায়গা পেলেই দৌড়াত। কাজলা দিদির মতো কবিতা পাঁচ-ছয়বার শুনেই মুখস্ত করে ফেলেছিল। ভেবেছিলাম, আমার মেয়েটা মেধাবী হবে। সেই মেয়েটা যে হাঁটতে পারবে না, বসতে পারবে না, কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলবে, কোনোদিন ভাবিনি।"
এখন আরিফার কানে বাজে বারবার, ছোট্ট আরিশা হাত-পা ছুঁড়ে বলছে,
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে
আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে?
আমিও নাই—দিদিও নাই—কেমন মজা হবে!
কোল আলো করা এক শিশু
আরিফা সরকারি চাকরি পেয়েছেন ২০১৪ সালে। তার বাবা মারা গেছেন তার বয়স যখন তিন ছিল। ছোট আরেকটি মেয়ে নিয়ে আরিফার মা একাই লড়ে গেছেন জীবনের লড়াই। চাকরি পাওয়ার পর সামাজিকভাবে আরিফাদের কিছু সম্মান বাড়ে। তার সম্বন্ধ আসতে থাকে ভালো ভালো জায়গা থেকে। আরিফার মা আশরাফের মাকে গিয়ে বললেন, আপনাদের আগ্রহ থাকলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন। আরিফা আর আশরাফ সম্পর্কে মামাতো-ফুপাতো ভাইবোন। এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় তাদের সম্পর্ক খানিক ঘনিষ্ঠ হয়। আশরাফের পরিবারেরও অমত ছিল না। ২০১৫ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
আশরাফরা ৩ বোন ৫ ভাই। বড় ভাই পুরো সংসার চালিয়েছেন ১৩ বছর। এরমধ্যে আশরাফের পড়াশোনার খরচও আছে। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা করেছেন। বিয়ের ছয়-সাত মাস পরে আশরাফ সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে কম্পিউটার ইন্সট্রাক্টর হিসাবে কাজ পেয়ে যান। আঠারো সালের জুন মাসে আরিফার কোল আলো করে আসে ফুলের মতো ফুটফুটে এক শিশুকন্যা। বাবা-মায়ের নামের সঙ্গে মিলিয়ে কন্যার নাম রাখা হয় আরিশা আশরাফী খাদিজা। মেয়েটা যেমন ফুটফুটে তেমন প্রাণচঞ্চল।
আশরাফকে তখন স্বচ্ছল বলা যেত। গ্রামের বাড়িতে থাকা বাবা-মায়ের দায়িত্বও নিলেন আশরাফ। বাবা-মা সকাল নয়টার আগেই ঘর ছাড়েন, আরিশা নানীর আদরে বড় হয়। ছড়া, কবিতা, গজল শিখতে থাকে আর ছুটে ছুটে বেড়ায়। তারপর ২১-২২ মাস বয়স যখন, একবার দাদাবাড়ি গেছে আরিশা বাবা-মায়ের সঙ্গে। সরিষা ক্ষেত দেখে ভোঁ দৌড় দেয় সে। আশরাফ মোবাইলে ভিডিও করতে থাকে তার দুরন্তপনা। হঠাৎ আরিশা ধপ করে পড়ে যায়, আশরাফের ব্যাপারটা অস্বাভাবিক লাগে। শহরে এসে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেন। ডাক্তার বলেন, পুষ্টির অভাব। সে মতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না।
দিনে দিনে আরিশার হাঁটাচলায় এলোমেলো ভাব বাড়তে থাকে। আরো কয়েকজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েও যখন কোনো ভালো ফল মিলল না তখন ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখাতে নিয়ে আসেন। ডাক্তার একটা জেনেটিক টেস্ট করাতে বলেন, সে সঙ্গে বলেন, এটা ভারত থেকে করিয়ে আনলেই সঠিক ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ডাক্তারের কাছ থেকে আরো জানলেন, ঢাকায় ভারতের ডায়াগনসিস সেন্টারের এজেন্ট আছে, তাদের কাছে রক্ত দিয়ে এলে তারা ভারতে পাঠিয়ে রেজাল্ট এনে দেবে। ওই টেস্ট করাতে খরচ হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা প্রায়। রিপোর্ট পাওয়া গেল তিন মাস পর। ততদিনে আরিশার বয়স আড়াই বছর হয়ে গেছে। এই সময়ে আশরাফ-আরিফা দম্পতির আরো একটি কন্যা সন্তান এসেছে ধরায়। তার নাম রাখা হয়েছে আরিবা আশরাফী আয়শা।
দিন যায় অসুখ বাড়ে
রিপোর্ট পেয়ে ডাক্তারকে খুব চিন্তিত দেখাল। তিনি তখনই সবটা খুলে না বলে শুধু এটা বললেন, আরিশার বিরল এক রোগ হয়েছে আর এ রোগের প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি, নিরাময় অসম্ভব। তিনি আরো বললেন, আরিশার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত দিন যাবে তত কমতে থাকবে। ওর হার্ট, লিভার, কিডনি ক্রমেই বিকল হতে থাকবে। আপনারা ওকে গরুর কলিজা, কবুতরের বাচ্চা ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়াবেন। ডাক্তার তখন খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেডিল, অক্সিজেন ঘাটতি পূরণের জন্য নিউরোসেটসহ আরো দুটি ওষুধ আজীবন চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেন। আশরাফ পরে রিপোর্ট পড়ে রোগটির নাম জানলেন গছার বা গউশার। গুগল করে আরো জানলেন, এ রোগ জন্মগত। জেনেটিক ত্রুটি এ রোগের কারণ।
আরিশা এর মধ্যে হাঁটার ক্ষমতা হারিয়েছে, দাঁড়াতে পারে কোনোমতে। চোখের মনির অবস্থানও পাল্টে গেল একসময়, দাঁতেও নানান সমস্যা দেখা দিতে থাকল। প্রতিমাসেই একবার করে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে তাকে নিয়ে আসতে হয়। অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ভাড়া গুনতে হয় প্রতি দফায় ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। অনেক পরে আশরাফ বুঝতে পেরেছে হাসপাতাল চত্বর (সিন্ডিকেট যেখানে বেশি সক্রিয়) থেকে অ্যাম্বুলেন্স না নিলে খরচ কমে আসে প্রায় অর্ধেকে।
যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম আরিশার তাই একটু জ্বর-সর্দিতেই আরিশা কাবু হয়ে যায় মারাত্মকভাবে। তখন নিয়মিত ওষুধগুলোর সঙ্গে মোনাস, লোসেকটিলের মতো আরো ওষুধ যোগ করতে হয়। কিন্তু ওষুধ খেতে আরিশার খুব অনিহা। অনেক বুঝিয়ে সময় নিয়ে তাকে ওষুধ খাওয়াতে হয়। এতে সময় চলে যায় অনেক, আরিফার তাই প্রতিদিনই স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়, কোনো কোনোদিন আশরাফেরও। আরিবা এগুলো দেখতে দেখতেই বড় হচ্ছে। সে অন্য শিশুদের তুলনায় অনেকটাই ধীর স্থির ও মাতৃসুলভ। যখন আরিশা সাড়ে তিন বছরে পড়ল তখন আশরাফ যে প্রকল্পে কাজ করত তার মেয়াদ শেষ হয়। আরিফার একার আয়ের ওপরই নির্ভর করে তারা। প্রতি মাসেই আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে যায়। অবশ্য কিছুদিনের মধ্যেই আশরাফ চিতলিয়া হাই স্কুলে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ জুটিয়ে ফেলেন। কিন্তু তাতেও যখন কুলায় না তখন আরিফা ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা কর্জ নিতে বাধ্য হন।
আরিবার যখন দেড়-দুই বছর, আরিশার আর দাঁড়ানোর ক্ষমতাও নেই। মাঝেমধ্যে বসতে পারে কেবল। মাসের সব দিনই আরিশা শুয়ে থাকে, কোনো না কোনো অসুখ তাকে আক্রমণ করে চলে। আরিবা বোনকে কোনো কোনো দিন দাঁড় করিয়ে দিতে চায়। নিজের খাবার বোনের মুখেও তুলে দেয়। বোনকে ওষুধ খাওয়ানোরও চেষ্টা করে। আরিফা দেখেন আর কাঁদেন। আশরাফ কিছুটা শক্ত ধাঁচের মানুষ। বলছিলেন, "আমি আরিফাকে বলি তুমি খেলে আরিশার খাওয়া হয়। তুমি-আমি সুস্থ না থাকলে ওর সেবা করবে কে?"
অসহায়ত্বের এক নিদারুণ চিত্র
গেল বৃহস্পতিবার যখন ঢাকা শিশু হাসপাতালে এই লেখকের সঙ্গে কথা বলছিলেন আশরাফ তখন তার নম্বরে একটা ফোন এলো। আশরাফের এক বন্ধু ফোন করে আরিশার অবস্থা জানতে চাইলেন। আশরাফ বললেন, "মেয়েটার কষ্ট সইতে পারছি না বন্ধু। আমি তবু বাইরে বাইরে ঘুরি। আরিফা তো সারাদিন ওর সঙ্গেই থাকে। কোনো কোনো দিন ৩-৪ ঘণ্টাও খিঁচুনি চলে। এখন আমরা একটা দোয়াই করি, আল্লাহ নেওয়ার হলে নিয়ে নেন, এইটুকু মানুষটারে এতো কষ্ট দিয়েন না। সামর্থ্য নাই বলে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখতে পারি নাই। আরিফা যে কর্জ নিছিল সেটাও শেষ। এখন আর ব্যক্তিত্ব ধরে রাখারও উপায় নেই, হাত পাতা ছাড়া পথ দেখছি না।"
এবার আশরাফ ও আরিফার কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট তুলে দেওয়া যাক। তাতে বাবা-মায়ের অসহায়ত্বের এক নিদারুণ চিত্র ধরা পড়ে।
মো. আশরাফ (২৭ জুলাই ২০২৩): আজ ৩য় দিন পার হচ্ছে…তোর মুখে বাবা ডাক শোনার জন্য সিঁড়ির সামনে শুয়ে আছি…অথচ বাবারা কত স্বার্থপর, ঘুম না আসুক ঘুমের চেষ্টা করছে। হয়তো ঘুমিয়ে পড়ব। কিন্তু মায়েরা কি ঘুমাতে পারে?
আরিফা আক্তার মিমি (২৪ জুন ২০২২): শুভ জন্মদিন প্রিয় মা। আমার নিরবতার সবটুকু সময় তুমি আমার হৃদয় জুড়ে থাক, প্রিয় মা আমার। গত বছর এই দিনেও তুমি সুস্থ সবল ছিলে। অথচ আজকে প্রায় ১ বছর হতে চলছে বাবা তুমি হাঁটতে পারছ না। ঘরে থেকে থেকে কষ্ট পাচ্ছ। বাবা তোমার জন্য আমরা কিছুই করতে পারছি না। প্রকৃতির কাছে আমরা খুব অসহায়। আমি শুধু আল্লাহর নিকট তোমার সুস্থতার জন্য দোয়া করতে পারি। হে আল্লাহ, আপনি আমার আরিশা মাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে দিন ও নেক হায়াত দিন।
মো. আশরাফ (২৭ অক্টোবর ২০২১): রাতের ঘুম কেমন জানি পর হয়ে যাচ্ছে, চোখের জল ছল ছল উঁকি মারে, চোখ বুজলেই মেয়ে আরিশার সুন্দর হাসিমাখা মুখটা ভেসে ওঠে। ওর নরম হাত, ছল ছল চোখের চাহনি আমার প্রতিটা স্পন্দন জুড়ে কম্পিত হয়। আমার সর্বদা মনে হয়, ও ডেকে বলছে আমায়, বাবা, আমি তো তোমাদের মাঝে স্বাভাবিকভাবে চিরকাল বেঁচে থাকতে চাই। ডাক্তার যা বলেছে সেটা ভুল শুনেছ। ওই রিপোর্ট ভুল ছিল।