ফ্রোজেন ফিশ, মিটের আমদানি কমায় দেশের বাজারে মাছ-মাংসের দামে প্রভাব
ডলার সংকট কাটাতে আমদানি সীমিত করায় হিমায়িত মাছ এবং মাংসের আমদানি অস্বাভাবিকহারে কমে গেছে। এক বছরের ব্যবধানে হাড়ছাড়া হিমায়িত বোভাইন মিটের ৯৩ শতাংশ এবং হিমায়িত মাছ ৮২ শতাংশ আমদানি কমে গেছে।
আমদানি কমে যাওয়ায় দেশের বাজারে গরু-মহিষের মাংসের দামে এর প্রভাব পড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে গরু, মহিষ, ছাগলের মাংসের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। বর্তমানে কেজি প্রতি গরু, মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৯০০ টাকায়। অথচ এক বছর আগেও এর দাম ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
অন্যদিকে মাছের আমদানি কমে যাওয়ায় দেশীয় সামুদ্রিক মাছ, মিঠা পানিতে চাষ হওয়া মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ সালে হাড়ছাড়া হিমায়িত বোভাইন মিটের আমদানি হয় ৯৭৪ মেট্রিক টন। এসব পণ্যের আমদানি মূল্য ৪৪ কোটি টাকা। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে এই পণ্য আমদানি হয়েছিলো ৫৭৭ কোটি টাকা মূল্যের ১৩২০৬ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে হাড়ছাড়া হিমায়িত বোভাইন মিট ১২২৩২ মেট্রিক টন কম বা ৯৩ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে।
একইভাবে কমে গেছে ফ্রোজেন ফিশ আমদানির পরিমাণও।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৭ কোটি টাকা মূল্যের ১২০৩৯ মেট্রিক টন ফ্রোজেন ফিশ আমদানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয় ৩২৫ কোটি টাকা মূল্যের ৬৬,৩৭৪ মেট্রিক টন। এক বছরের ব্যবধানে ৫৪৩৫৫ মেট্রিক টন কম বা ৮২ শতাংশ আমদানি কমে যায়।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে প্যারাগুয়ে, ওমান, কুয়েত, কাতার, চীন, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভারত থেকে সামুদ্রিক মাছ আমদানি হয়। এছাড়া ভারত, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং জাপান থেকে আমদানি হয় ফ্রোজেন মিট।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ফ্রোজেন মিটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় বোনলেস বাফেলো মিট। এছাড়া ফ্রোজেন গোট মিট, বাফেলো লিভার, বাফেলো হেড মিটও আমদানি হয়।
বাংলাদেশ মাংস আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ টিবিএসকে বলেন, ফ্রোজেন মিট এর প্রধান গ্রাহক প্রান্তিক শ্রেণির ক্রেতারা। এছাড়া বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট ফ্রোজেন মিটগুলোর ক্রেতা। চারবছর আগেও ফ্রোজেন মিট বাজারে বিক্রি হতো কেজিতে ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। ২০২১ সালের পর মাংস আমদানিতে টিটিআই (টোটাল ট্যাক্স ইনসিডেন্ট) ৮৯.৩২ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণের পর ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো।
চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মোর্শেদ কাদের বলেন, বর্তমানে গরু এবং মহিষের মাংস প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে হাড়সহ মাংস কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা এবং হাড়ছাড়া মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বছর আগে কেজিপ্রতি মাংসের দাম ছিলো প্রায় ৭০০ টাকা।
তিনি আরো বলেন, একইভাবে বাজারে বেড়ে গেছে মাছের দামও। বর্তমানে সব ধরনের মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ।
আমদানি হওয়া ফ্রোজেন মিটের বড় একটি অংশের ক্রেতা হোটেল, রেঁস্তোরা। আমদানি কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রেঁস্তোরা মালিকরা।
বাংলাদেশ রেঁস্তোরা মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল হান্নান টিবিএসকে বলেন, বেশিরভাগ খাবার হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট আমদানি হওয়া ফ্রোজেন মিট পরিবেশন করতো। কিন্তু গত ১ বছর ধরে বাজারে এটি পাওয়া যাচ্ছে না।
এমন প্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর পুলিশ কনভেনশন হলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রেঁস্তোরা মালিক সমিতির নেতারা। ওই সংবাদ সম্মেলনে গরু, ছাগল ও ব্রয়লার মুরগির মাংস আমদানি করার অনুমতি চায় বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।