বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে সংকটে ফেলায় সমালোচনার মুখে ব্রিটিশ রিটেইলার
প্রতিশ্রুত মূল্য পরিশোধ বন্ধ রেখে বাংলাদেশের লাখ লাখ তৈরি পোশাক কারখানা শ্রমিককে অনাহারের মুখে ঠেলে দেওয়ায়, অধিকারকর্মীদের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাজ্যের আসডাসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক রিটেইলার ব্র্যান্ড।
ফাস্ট-ফ্যাশনের চল বিরোধী এক আন্তর্জাতিক আন্দোলন গোষ্ঠী রিমেক এজন্য অনলাইনে এক পিটিশন আহ্বান করেছে। পিটিশনের বিবরণীতে আসডা, গ্যাপ, সিঅ্যান্ডএ এবং প্রাইমার্কের মতো বড় রিটেইলার ব্র্যান্ডগুলোকে শ্রমিকদের দুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য দায়ি করা হয়।
'উল্লেখিত রিটেইলাররা করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে উৎপাদকদের মূল্য পরিশোধ বাতিল করেছে বা স্থগিত রেখেছে। মূল্য পরিশোধে তারা এখন পর্যন্ত কোনো অঙ্গীকারও করেনি। তাদের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। ফলে একদিকে তারা যেমন অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন, ঠিক তেমনি চলমান মহামারির মাঝেই অর্থকষ্টে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন'- রিমেক পিটিশনে দেওয়া এই বিবৃতি সম্পর্কে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে দ্য গ্রোসার।
সবচেয়ে নির্মম পন্থা বেছে নেওয়াদের মাঝে ব্রিটিশ রিটেইলার আসডাই অবশ্য প্রথম সারিতে। বিদেশি ক্রেতাটি এখন তাদের জর্জ ব্র্যান্ডের উৎপাদিত একটি বড় অংশ নিতে অস্বীকার করছে। এমনকি উৎপাদন করা বাকি এমন অর্ডারি পণ্যে ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত অস্বাভাবিক আকারের বড় ছাড় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
রিমেক জানায়, এই ধরনের প্রবণতা ন্যাক্কারজনক। বিশেষত, আসডা এবং ওয়ালমার্টের মতো রিটেইলাররা করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যেও তাদের ব্যবসার এক অংশ সচল রাখতে পেরেছে। খাদ্যদ্রব্য বিক্রির মাধ্যমে তারা এসময় বিপুল মুনাফাও করছে।
এই ব্যাপারে আসডার প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তারা দ্য গ্রোসারকে জানায়, (বাংলাদেশি) উৎপাদকদের কাছে মূল্যছাড় চাওয়া হলেও এর পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি নয়। তবে ইতোমধ্যেই যেসব পোশাকের চালান জাহাজে করে যুক্তরাজ্যে এসে পৌঁছেছে, তার পূর্ণমূল্য পরিশোধ করা হবে।
আসডার এক মুখপাত্র বলেন, 'বাংলাদেশের সরবরাহকারীদের সঙ্গে আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক বিদ্যমান, আমরা এই সম্পর্ককে মূল্যায়ন করি। তাই অর্ডার করা ৯৫ শতাংশ পণ্যের মূল্য আমরা পরিশোধ করব। বর্তমানে ক্রেতা বাজারে মন্দা থাকায় এসব পোশাক আমরা গুদামে সংরক্ষণ করে, আগামী বছর পর্যন্ত বিক্রির পরিকল্পনাও করেছি।'
'এই সংকট মোকাবিলায় আমরা তাদের সাহায্য করতে চাই। তবে কোভিড-১৯ সঙ্কট কেটে যাওয়ার পর সম্পূর্ণরূপে কারখানা খোলার পরই আমরা তাদের সাহায্য করতে সক্ষম হব। বর্তমানে তাদের ছোট আকারের কিছু চালান আমরা গ্রহণ করতে পারছিনা। এজন্য আমরা সরবরাহকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে উভয়পক্ষের সম্মতির মাধ্যমে অধিকাংশ অর্ডার বাতিল করতে চাইছি। অবশ্য তার জন্য আংশিক মূল্য পরিশোধের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। সরবরাহকারীরা চাইলে বাতিল হওয়া পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে বা দান করে দিতেও পারবেন' জানান আসডার ওই মুখপাত্র।
এই প্রেক্ষিতে রিমেক জানিয়েছে, করোনার কারণে বাতিল হওয়া বা স্থগিত রাখা পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের অঙ্গীকার করা হলেই, তারা পিটিশনের তালিকা থেকে রিটেইলারদের নাম বাদ দেবে। এছাড়াও, সরবরাহকারীদের কাছ থেকে বাড়তি কোনো মূল্যছাড় চাওয়া যাবে না এবং মূল্য পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো যাবে না।