আইসোলেশন ওয়ার্ডে ঈদ কাটছে বরগুনার ২৭ জন চিকিৎসক ও নার্সের
মুসলমান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। পুরো এক মাস সিয়াম সাধনার পর এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে পুরো বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কারণে এবারের ইদ একটু ভিন্ন রকম। আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীর বাসায় না গিয়ে, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা না দিয়ে- এবারের ইদ কাটাবে পরিবারের সঙ্গে।
কিন্তু পরিবারের সঙ্গেও এবার ঈদ কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন না, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সরা।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৮ জন। এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০ জন। বাকিরা করোনার নানা উপসর্গে ভুগছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে থেকে সাত দিন চিকিৎসাসেবা প্রদান করা পর চিকিৎসক ও নার্সদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়। এ মুহূর্তে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও সন্ধিগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবায় তিন চিকিৎসকসহ ছয়জন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও সাতদিন দায়িত্ব পালন শেষে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ছয় চিকিৎসকসহ আরো ১২ জন নার্স।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্বপালনরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রাবেয়া আক্তার মালা বলেন, এবারের ঈদে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছি না। বাসায় আমার একটি সন্তান আছে, ওকেও সময় দিতে পারছি না। একজন মা হিসেবে এই খারাপ লাগাটা কখনো বলে বোঝানো যাবে না।
তিনি আরো বলেন, এতসব খারাপ লাগার মধ্যেও, ভালো লাগছে এই ভেবে যে- আমি দেশের মানুষের সেবায় একটু হলেও অবদান রাখতে পারছি। আমাদের এই ত্যাগের মাধ্যমে হলেও একের পর এক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত মানুষ ও তার পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারছি। এবারের ঈদে আমার কাছে এটাই সবথেকে বড় প্রাপ্তি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রধান ডাঃ মোঃ কামরুল আজাদ বলেন, আমরা শুধু চাকরির সুবাদে দায়িত্ব পালন করছি না। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেও আমরা এখানে নিয়োজিত রয়েছি।
তিনি বলেন, ঈদের দিন আমাদের স্বজন এবং বন্ধুরা যখন তাদের আনন্দঘন মুহূর্তের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করবেন, সে সব ছবি দেখে আমার একমাত্র সন্তানের কথা ভেবে হলেও মনটা খারাপ হবে। তারপরও এসব মেনে নিয়েই আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও সন্ধিগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাব।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে স্বজনদের মাঝে ফিরেছেন ৩১ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন দুজন। এছাড়া চিকিৎসাধীন অন্য ১৬ জন রয়েছেন সুস্থ হওয়ার পথে।