বাংলাদেশকে কোটার ভিত্তিতে চাল, গমসহ ৭ ধরনের নিত্যপণ্য সরবরাহ করবে ভারত
কোটার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে চাল,গমসহ ৭ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে সম্মতি দিয়েছে ভারত।
যদিও কোটায় নির্ধারণ করা পরিমাণের পুরোটাই আমদানির নিশ্চয়তাও চেয়েছে দেশটি। একইসঙ্গে কোটায় যে পণ্যের জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হবে, সেই সময়ে আমদানি নিশ্চিত করার শর্ত দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
২০ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে 'ভারত থেকে অত্যবশ্যকীয় বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বার্ষিক কোটা নির্ধারণ'- শীর্ষক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ওই সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
সভায় অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশকে কোটা দিতে আগ্রহী ভারত। বাংলাদেশ যেসব পণ্য চেয়েছে, তার প্রত্যেকটিই সরবরাহ করার বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছে। কিন্তু দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটায় যে পরিমাণ পণ্য নির্ধারিত হবে তার পুরোটা বাংলাদেশকে নিতে হবে। এমনটা না হলে, ভারতীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
এছাড়া, এই পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারত নির্দিষ্ট সময়সীমা বাস্তবায়নে আগ্রহী বলেও জানান তিনি।
দেশের চাহিদা অনুযায়ী চাল, আটা, চিনি, মশুর ডাল, রসুন, আদা ও পেঁয়াজের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ভারত থেকে এসব পণ্য আমদানিতে কোটা চেয়েছে বাংলাদেশ।
কোটার অর্থ হচ্ছে, ভারত থেকে বাংলাদেশ স্বাভাবিক আমদানি করবে। তবে কোনো কারণে ভারত এসব পণ্যের রপ্তানি নিষিদ্ধ বা স্থগিত করলেও বাংলাদেশ এই পণ্য ভারত থেকে পাবে। এই কোটার আওতায় ভারত কোন পণ্য কী পরিমাণ বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে, তা নির্ধারণ করতেই এ বৈঠক।
এদিকে ভারতীয় পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে এ ধরনের কোটা দেওয়া হলে ভারতের কৃষকরা অতিরিক্ত উৎপাদনে আগ্রহী হবেন। কিন্তু এরপর যদি বাংলাদেশ কোটা অনুযায়ী আমদানি না করে, তখন তাদের কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
এছাড়া, এসব পণ্য আমদানিতে বিশেষকরে পেঁয়াজ, রসুন, আদার ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দিতে চাইছে ভারত। কারণ পচনশীল এসব পণ্য সংরক্ষণ করা যেমন কঠিন, তেমনি ব্যয়বহুল। ফলে নির্ধারিত সময়েই তা আমদানির নিশ্চিয়তা চায় দেশটি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম ও শুল্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পক্ষ প্রস্তাব করেছে, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ভারত যদি বাড়তি শুল্ক আরোপ করে, তাহলে কোটায় আমদানি করা পণ্যে বাড়তি শুল্ক নেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের এ প্রস্তাবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আইনি বিধি বিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কাছে কোটার আওতায় বছরে ১৫ লাখ টন চাল ও ২৫ লাখ টন গম আমদানি করতে চেয়েছিল। একইসঙ্গে ১০ লাখ টন চিনি, ৬ লাখ টন পেঁয়াজ, ৫০ হাজার টন রসুন ও ১ লাখ টন আদা আমদানির কোটা চাওয়া হয়েছিল ওই সময়। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করে কয়েকটি পণ্যের পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভারতীয় পক্ষ সেই বাড়তি পরিমাণের কোটা দিতে সম্মত হয়েছে।
তার পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন করে পণ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে।