মাঝারি দামের ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়ছে
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বসবাসযোগ্য মাঝারি দামের সুন্দর ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়ছে। এ ধরনের অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণকারী আবাসন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বলেছেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শৌখিন ক্রেতারা এখন এরকম অ্যাপার্টমেন্ট কেনায় ঝোঁকার কারণেই এই চাহিদা বাড়ছে।
ক্রেতারা বলছেন, সাধারণ অ্যাপার্টমেন্টের চেয়ে আরেকটু বেশি টাকা বিনিয়োগ করলেই বসবাসযোগ্য একটি সুন্দর অ্যাপার্টমেন্ট কেনা যায়।
ক্রেতারা বলছেন, এখন রাজধানীতে একটি সাধারণ ফ্ল্যাট কিনতে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হয়। কিন্তু এর সঙ্গে আর কিছু টাকা বিনিয়োগ করলে অধুনিক সুবিধা সংবলিত ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব।
চাহিদা বাড়ছে
ফ্ল্যাট, সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ও ভাড়া দেয়ার অনলাইন মার্কেট প্লেস বি-প্রপার্টি লিমিটেডের সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান বলছে, এ ধরনের ফ্ল্যাটের চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব ফ্ল্যাটের ৮০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত বাজারদর রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিসংখ্যন বলছে, গতবছর তাদের প্লাটফর্মের মাধ্যমে যতগুলো নতুন ফ্ল্যাট বিক্রয় হয়েছে, তার মধ্যে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১৯৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৭৯%, উত্তরায় ৪৫৭টির মধ্যে ৫৭%, মিরপুরে ৩৪৫টির মধ্যে ১৮%, ধানমন্ডিতে ৪১১টির মধ্যে ৫৩%, মোহাম্মদপুরে ২৯১টির মধ্যে ২৯%, বনশ্রীতে ৪৮টির মধ্যে ৪৭%, আফতাব নগরে ৪৮টির মধ্যে ৬৭% এবং গুলশান-বনানীতে ৯৫টির মধ্যে ৫৯% মাঝারি বাজেটের ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে।
যেসব সাইজ ও সুবিধা থকে মাঝারি দামের ফ্ল্যাটে
বি-প্রপার্টির তথ্য বলছে, এসব ফ্ল্যাটের পরিধি হয় সাধারণত ১,২০০ থেকে ১,৫০০ বর্গফুট। এসব অ্যাপার্টমেন্টে তিনটির মতো বেডরুম, ২-৩টি বাথরুম ও ২টি ব্যালকনি থাকে।
মাঝারি বাজেটের ফ্ল্যাট ভবনে লিফটের সংযোাজন থাকে। এসব ফ্ল্যাটে ৫-৬ জন সদস্যের একটি পরিবার অনায়াসে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে। এছাড়াও এসব ফ্ল্যাটের ভেতর সমসাময়িক ইনেটেরিয়র ডিজাইন মোটামুটি পরিচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেন এ ধরনের ফ্ল্যাটে ঝুঁকছে মানুষ
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পরিচালক নাইমুল হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সব শ্রেণির মানুষ ফ্ল্যাট কেনার সক্ষমতা রাখেন না। যারা রাজধানী বা অন্য কোনো শহরে বসবাসের জন্য ফ্ল্যাট কেনেন, তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত। মধ্যবিত্তদের মধ্যে মোটামুটি যাদের টাকা-পয়সা রয়েছে তারাই মাঝারি দামের ফ্ল্যাট কিনছেন।
তিনি বলেন, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিলাসবহুল হাউজিং মার্কেট উন্নয়নের সঙ্গে ২০২২ সালের মাঝারি রেঞ্জের হাউজিং মার্কেটের প্রবণতা গত বছরের মতোই ছিল। যদিও ঢাকার বেশি সাশ্রয়ী এলাকাগুলোতে (যেমন মিরপুর, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর ইত্যাদি) বাড়ি কেনার প্রতি মানুষের ঝোঁক ছিল বেশি। অধিকাংশ মানুষের কাছে ৩ বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা ছিল শীর্ষে।
মাঝারি রেঞ্জের ফ্ল্যাট কেনার পেছনে ক্রয়ক্ষমতার পরিবর্তন একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম গড়ে ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা। যা মিরপুর, আফতাবনগর ও মোহাম্মদপুরের মতো সাশ্রয়ী এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টের সমান। বনানী, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও উত্তরার মতো প্রধান এলাকায় এসব মিড রেঞ্জের ফ্ল্যাটের গড় বর্গফুটের দাম অনেক বেশি—৮,০০০ টাকা থেকে ১৩,০০০ টাকা পর্যন্ত।
গুলশান-১-এর পূর্ব দিকে পশ্চিম বাড্ডা এলাকায় ঝিলিক হাউজিংয়ের রূপসী-১ প্রকল্পে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ব্যবসায়ী শাহ জামাল জনি ১,৪২০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন গত বছরের শুরুর দিকে।
তিনি টিবিএসকে বলেন, ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় এই ফ্ল্যাটটি কেনা হয়েছে। এই এলাকার পরিবেশ বেশ শান্ত বলে জানান তিনি। তার ৩ বেডরুমের এই ফ্ল্যাটে ভালো মানের ইন্টেরিয়র ডিজইন করেছে ডেভেলপার।
তিনি বলেন, 'আমার পরিকল্পনা ছিল ৬০ থেকে ৮০ লাখ টাকার মধ্যে একটি ফ্ল্যাট কেনার। কিন্তু পরিবারের সদস্য বেশি হওয়ায় এক কোটি ২০ লাখ টাকায় এই ফ্ল্যাট কিনেছি।'
অর্থায়ন এখনও বড় চ্যালেঞ্জ
আবাসন সংশ্লিষ্টরা বলেন, মাঝারি রেঞ্জের ফ্ল্যাট কিনতে অনেকের আগ্রহ থাকলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ প্রদানে কঠিন শর্ত এক ধরনের বাধা।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) টিবিএসকে বলেন, দেশে মাঝারি রেঞ্জের সুন্দর ফ্ল্যট কেনার যে চাহিদা রয়েছে, ব্যাংকঋণের শর্ত সহজ করলে সেটি আরও বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের উচিত ভারত ও অন্যান্য উন্নত দেশের প্যাটার্ন অনুসরণ করে আরও যৌক্তিক গৃহঋণ ব্যবস্থা চালু করা। বর্তমানে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান, যা দেশে গৃহঋণ দেয়। প্রতিষ্ঠানটির সুদের হার ৮-৯% এবং সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা ঋণ দেয়। আর ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৫ থেকে ২৫ বছর।
বেসরকারি ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাক্রমে ৮.৯৯–১৫% এবং ৮–৮.৫% সুদহারে গৃহঋণ দেয়। তুলনামূলকভাবে ভারতে গৃহঋণ আরও সাশ্রয়ী। ভারতে সরকার-অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদের হার ৬–৮% এবং বেসরকারি ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদের হার ৬.৭–৮.০৫%।