জলাবদ্ধ নালায় নিখোঁজের এক বছর: সালেহ আহমেদের পরিবারের খবর রাখেনি কেউ
'বাবা নিখোঁজের পর অনেকেই নানা আশ্বাস দিয়েছিলেন। সিটি করপোরেশনে চাকরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল কিন্ত পড়াশুনা বন্ধ হওয়ার অবস্থা হলে বাধ্য হয়ে চাকরিটা ছাড়তে হই। এরপর কেউ আমাদের আর কোনো খোঁজখবর নেয়নি।'
বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের কথাগুলো বলছিলেন সাদেকুল্লাহ মাহিন।
২০২১ সালের ২৫ আগস্ট মুরাদপুরের এই স্থানেই নালায় পড়ে নিখোঁজ হন তার বাবা সালেহ আহমেদ। ঘটনার এক বছর পরেও বাবাকে খুঁজে ফেরেন সাদেকুল্লাহ মাহিম।
যে নালায় তলিয়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমদ, সেই নালা এখনো উন্মুক্ত, বয়ে চলেছে পানির স্রোত। সেই স্রোতের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মাহিন বলছিলেন, 'সবাই যেমন চাইলে মৃত বাবার কবর জিয়ারত করতে পারে। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বাবার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে পারেন। আমি তো সেটা পারিনা। লাশটা পর্যন্ত চোখে দেখলাম না। এটা যন্ত্রণা ভোলা যায় না।'
গত এক বছরে না পিতার লাশ, না কোন স্বান্তনা- কিছুই জোটেনি সালেহ আহমেদের স্ত্রী-সন্তানদের ভাগ্যে। সালেহ আহমেদের মৃত্যুর দায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বা সিটি কর্পোরেশন (চসিক) কেউ না নিলেও চসিকের তরফ থেকে ঘটা করে ঘোষণা দিয়ে মাহিনকে চাকরি দেওয়ার কথা জানান চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। যদিও চাকরি দেয়ার নামে চসিক তার সঙ্গে উপহাস করেছেন এমন অভিযোগ করে সপ্তাহখানেকের মধ্যে সে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন মাহিন।
এরপর ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে রিট করার পর হাইকোর্ট মাহিনকে ৬০ লাখ টাকা কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে তার জবাব চেয়ে রুল জারি করেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সচিব এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত সেই রুলের জবাব দেননি তারা। সব দরজা ঘুরে এখন মাহিন কড়া নাড়তে চান প্রধানমন্ত্রীর দরজায়। তার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তার এসব সমস্যার সমাধান মিলবে।
মাহিন বলেন, 'খালে নিরাপত্তা দেয়াল থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটতো না। ঘটনার পর আপনারা দেখেছেন, চসিক কিংবা সিডিএ কেউ দায় নেয়নি। এক সংস্থা অন্যটির উপর দোষ চাপিয়েছে। ওরা আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।'