বাংলাদেশে 'শ্রমে' নারীর সুযোগ কম, যদিও 'নারীর আয়' এখন অপরিহার্য
একটা সময় ছিল যখন নারী শুধু সংসার সামলাতেন, টাকা আয়ের দায়িত্ব ছিল পুরুষের। আমাদের মায়েরাই সেরকম জীবন কাটিয়েছেন। যতোদিন বাবা বা পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী ব্যক্তিটি বেঁচেছিলেন, ততোদিন সংসার চালনার সব দায়িত্ব উনি একা হাতেই সামলেছেন। কিন্তু যেদিন উনি তাঁর ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রীকে ছেড়ে চলে গেলেন, সেদিনই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল সেই পরিবারের। কারণ সংসারের প্রধান চলে গেলেন অসময়ে, সম্পত্তিহীন অবস্থায়। ঢাকার বুকে বাস করে, সন্তানের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল সেই পরিবারের গৃহিণীর পক্ষে। এরকম ঘটনা একটি নয়, হাজার হাজার। মায়ের আয় না থাকাতে, শুধু বাবার আয়ের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো পথে বসে যেতে বাধ্য হয়।
অবশ্য যদি কারো বাবা অনেক টাকা বা সম্পত্তি রেখে যান, তখন হয়তো সেই পরিবারটির অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েনা ঠিকই, কিন্তু সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়াতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পরিবারের হাল ধরা ও টাকা ও সম্পত্তি ঠিকমতো পরিচালনা করার জন্যও একটা নূন্যতম যোগ্যতা লাগে, নয়তো অন্য মানুষ মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার ফন্দি আঁটে।
এরকমই বিপদে পড়তে পারেন সেই নারীও, যিনি পরিপূর্ণভাবে স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরশীল। হয়তো ধন-সম্পত্তি, সুখ-ঐশ্বর্য, ভালবাসা দিয়ে স্বামী তাকে ভরিয়ে রেখেছিলেন জীবনের বিশ বা ত্রিশটি বছর। স্ত্রীকে বলেছিলেন তোমার আয় করার বা নিজের পরিচয় তৈরি করার কী প্রয়োজন? তুমি সংসার-সন্তান সামলাও, আমি তোমাদের সামলাচ্ছি। এরমধ্যে কোনো ভুল নেই, কোনো মন্দ দিক নেই। কিন্তু যখন কোনো কারণে নারী-পুরুষের এই সম্পর্ক ভেঙে যায়, দু'জনের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয় এবং সেই দাতা স্বামী স্ত্রীর হাত ছেড়ে দেন, তখন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ও তার সন্তানদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।
সংসারে স্বামী-স্ত্রীর এই সম্পর্কটা যেমন শক্ত, তেমনি একই সাথে ততোটাই ভঙ্গুর। যে কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না আমরা আমৃত্যু এক থাকবো, একইভাবে থাকবো। বিচ্ছেদ ও মৃত্যু দুই ক্ষেত্রেই একথা সত্য। আর তাই এখন বলা হচ্ছে সংসারে দুজনের আয় থাকা দরকার। যতোটুকু সম্ভব পুরুষের একার আয়ের ওপর নির্ভরতা কমানের সময় এসেছে।
নারীর আয় এখন আর সেকেন্ডারি বিষয় না, এটি অপরিহার্য। শুধু পারিবারিক ও সামাজিক প্রয়োজনে তা নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও দরকার। ব্যক্তিগত বিপদ-আপদের কথা মাথায় রেখেও নারীর কর্মজগতে স্থায়ী হওয়া উচিৎ। জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুসারে, পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি। দেশে সংখ্যায় নারী বেশি হলেও শ্রমে সুযোগ কম, যদিও কর্মক্ষমের দিক থেকেও নারী বেশি।
সরকার নারীর চাকুরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অধিক বিনিয়োগের পক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বেসরকারি কর্মক্ষেত্রেও নারীকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। তবু শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কম। শহরে কাজের অসমতার হার আগের চাইতে বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে কর্মদক্ষ নারীদের যতজন শ্রমশক্তিতে থাকার কথা, ততটা নেই।
কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে, কেন ঘড়ির কাঁটা উল্টোদিকে ঘুরছে? স্কুল থেকে যেমন ছাত্রী ঝরে পড়ে, ঠিক তেমনি কর্মক্ষেত্র থেকেও বিশেষ করে আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্র থেকে নারী ছিটকে পড়ছে। পড়াশোনার মাঝপথে বিয়ে বা বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের অনেকে শ্রমশক্তির বাইরে থেকে যাচ্ছেন। শহরে অনেক নারী সামাজিক ও পারিবারিক কারণে শ্রম থেকে ঝরে পড়ছেন। সংসারের দায়িত্ব, সন্তান প্রতিপালন, কেয়ারগিভারের সংকট, গৃহ সহায়তাকরীর সংকট, ডে-কেয়ার হোমের অভাব, সংসারের বয়স্ক মানুষের দেখাশোনা করার দায়িত্ব এবং সর্বোপরি স্বামীর অনিচ্ছায় অনেক নারী চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। অথবা নারী ভাবেন কিছু সময়ের জন্য জন্য চাকরি ছাড়বেন, পরে আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একবার চাকরি ছেড়ে দিলে, আবার ঢোকাটা কঠিন হয়ে যায়।
এছাড়া আরো বিচার্য আছে যে, নারী কোথায় চাকরি করছে? সেখানে পুরুষের সংখ্যা কত? ফিল্ডে যেতে হয় কিনা? অফিস টাইমিং কেমন? ওভারটাইম আছে কিনা ইত্যাদি অনেক হিসাব-নিকাশ। সংসারের কোনো প্রয়োজনে নারীকেই চাকরি থেকে ছুটি নিতে হয়, এমনকি চাকরি ছাড়তেও হয়। পুরুষের চেয়ে আয় বা পজিশন বেশি হলেও নারীকেই কাজ থেকে বের হয়ে আসতে হয়।
অর্থনীতিবিদরা দেখছেন, নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর অন্যতম লক্ষ্যই ছিল নারীর দক্ষতা বাড়ানো ও কর্মশক্তিতে নিয়োগ। গত সাত বছরে কর্মক্ষেত্রে যে বয়স সীমার নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের কথা ছিল, সে অনুযায়ী সংখ্যা বাড়েনি। তাঁদের দক্ষতা নির্মাণে সরকারি ও সামাজিক যে ব্যয় হয়েছে, তার প্রতিদান অর্থনীতিতে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুসারে, ২০১৬-১৭ প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, শ্রমবাজারে নারী-পুরুষ অসমতা কিছুটা কমলেও এখনো তা ৩৭ শতাংশের বেশি।
দুঃখজনক বিষয়টি হচ্ছে, শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি, কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় সরকারি চাকরিতে নারীর হার পাঁচ বছর ধরে বাড়ছে না, থেমে আছে প্রায় একই জায়গায়। (প্রথম আলো, ২০২১)
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের 'স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস' শীর্ষক সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে সরকারি নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর হার ২৭ থেকে ২৮ শতাংশের মধ্যে আটকে আছে। অবশ্য মোট চাকরিজীবীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় নারী চাকরিজীবীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে শীর্ষস্থানীয় ও নীতিনির্ধারণী পদে নারীর অংশগ্রহণ এখনো অনেক কম। সরকারি চাকরির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সরকারি চাকরিতে শিক্ষক ও চিকিৎসকদের মধ্যে নারীর হার তুলনামূলক বেশি। এরমধ্যে অবশ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবেই ৬০ শতাংশ নারী নিয়োগ দিতে হয়।
কেন এমনটা হচ্ছে? কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে সরকারি চাকরিতে নারীরা পিছিয়ে আছেন। সরকারি চাকরি বদলিযোগ্য হওয়ায় এখনো অনেকের এ ব্যাপারে আগ্রহ কম। বদলির চাকরি হলে নারীদের বিষয়ে পরিবার থেকে একধরনের বাধা থাকে। মেয়েদের চাকরি নিয়ে এখনো সমাজে একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। নারীকে প্রশাসক হিসেবে দুর্বল ভাবার মতো মানুষ অনেক আছেন। তারা বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন, যেন নারী কর্মকর্তা সরে যান।
জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি ও শ্রমবাজারে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ বিষয়ক এক সংলাপে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও লেবার ফোর্স সার্ভের তথ্য পর্যালোচনা করে জানানো হয়েছে যে, ২০১৭ সালে শহরাঞ্চলের কর্মসংস্থানে নারীদের হিস্যা ছিল ৩১ শতাংশ। তা ২০২২ সালে ২৩ দশমিক ৫৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশে ১৯৭০-এর দশকে জন্ম নেওয়া নারীদের ৩৬ শতাংশ এখন শ্রমশক্তিতে আছেন। ১৯৯০-এর দশকে জন্মগ্রহণ করা নারীদের ক্ষেত্রে তা আরও কম, মাত্র ১৩ শতাংশ। এর পেছনে সামাজিক রীতিনীতি ও মানদণ্ডের প্রভাব আছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হান্স টিমার এই তথ্য দিয়েছেন।
হান্স টিমার বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নের সঙ্গে এখানকার নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই অঞ্চলের নারীরা অর্থনৈতিক সুযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন। তাঁরা বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছেন, আবার যোগাযোগ, সামাজিক যোগাযোগ ও সম্পদের মালিকানার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছেন। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ কম। এরমধ্যে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নতি, নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি, জন্মহার হ্রাসসহ আরো কিছু অগ্রগতি সত্ত্বেও শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ আনুপাতিক হারে বাড়েনি। বরং তা এক জায়গাতেই অনেক দিন স্থবির ছিল। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের বিষয়টি মেলানো যায় না। সমাজের গভীরে প্রোথিত রীতিনীতির কারণে নারীরা পিছিয়ে পড়ছেন, বিশেষ করে পরিবারের শ্রমের বিভাজন এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।
শহরাঞ্চলে অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান হারানো নারীদের একটা বড় অংশ গ্রামে ফিরে গিয়ে নিম্ন মজুরি বা মজুরি ছাড়াই পরিবারের কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে যুক্ত হচ্ছেন। তাঁদের অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। গ্রামে নারীর শ্রমে অংশগ্রহণ প্রায় ১১ শতাংশ বেড়েছে। ফলে গ্রামে নারী-পুরুষের অসমতার ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ শতাংশে। আর শহরে নারীর অংশগ্রহণ প্রায় ৮ শতাংশ কমে অসমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশে, যা কোনোভাবেই নারীর অগ্রযাত্রায় ইতিবাচক বলে মনেকরা যাচ্ছেনা। কম মূল্যের শ্রমে নারীর সংখ্যা বেশি হলে কোনো লাভ হয়না।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইসমত আরা বেগম ২০২০ সালের ডিসেম্বরে 'পুটিং উইমেন ইন দ্য সেন্টার অব অ্যাগ্রিকালচার' শিরোনামে এক গবেষণাপত্রে বলেন, গত ২৫ বছরে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। তবে মাত্র ১৫ শতাংশ নারী মজুরি পান। কৃষিক্ষেত্রে কম মূল্যায়নের কাজে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। অসমতা কমাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে শিল্প ও সেবা খাতে। নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারলে লিঙ্গভিত্তিক অসমতা থেকে মুক্তি নেই।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও আইএলও জানাচ্ছে দেশে সার্বিক কর্মসংস্থান বাড়লেও শহর এলাকায় নারী শ্রমিকের সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। বিশেষ করে শিল্প খাতেই নারী শ্রমিক কমার প্রবণতা বেশি। এদের একটা অংশ গ্রামে ফিরে গিয়ে নিম্ন মজুরিতে কিংবা বিনা মজুরিতে গৃহস্থালি ও কৃষিকাজে যুক্ত হচ্ছেন।
বৈশ্বিক জেন্ডার বৈষম্য নিয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে লিঙ্গভিত্তিক অসমতা এখনো প্রায় ২৮ শতাংশ। অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য এখনো ৫৬ শতাংশ। নানা ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও, নারীর কাজ আয়মূলক হচ্ছে না। বরং যেসব খাতে নারীর কাজের মজুরি ও পদ-ক্ষমতা পুরুষের সমান, সেইসব কাজ থেকে নারী ছিটকে পড়ছে।
বিভিন্ন সংস্থা সামাজিক দায়বদ্ধতার আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে নারীদের নিয়োগ দিচ্ছে। কিন্তু বেতনে বৈষম্য থাকছে। সুযোগ পেলেই বাড়তি কাজ করানো হয় নারীকে দিয়ে। আর এর মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে বৈষম্যের নতুন হিসাব।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কাজের বাজারে নারীর অংশগ্রহণ কম হওয়ায় বেতন ও মজুরি নিয়ে তারা দরাদরির সুযোগ পাচ্ছেন না। সে কারণে বৈষম্য বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি চাকরি তথা আনুষ্ঠানিক খাতে নারী পুরুষের বেতন বৈষম্য অনেকটা কম হলেও অনানুষ্ঠানিক খাতে বৈষম্য এখনো অনেক বেশি। আনুষ্ঠানিক খাতে প্রতিটা পদের বিপরীতে বেতন নির্ধারিত থাকে বলেই সেক্ষেত্রে বৈষম্যের সুযোগ কম। অনানুষ্ঠানিক খাতে বৈষম্য বেশি কারণ কত বেতন হবে, কাকে কত টাকা মজুরি দেওয়া হবে- তার কোনো হিসাব নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি অনানুষ্ঠানিক এবং এই খাতে নারীই বেশি যুক্ত, এটা উন্নয়নের পথে বড় বাধা বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।
সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী, পারিবারিক চাপ, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী, নারীর নমনীয় মনোভাব ইত্যাদি কারণে কর্মক্ষেত্রে নারী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এতে সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্টের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে নারীকে সমান সুযোগ দিতে হবে।
শুধুমাত্র নারী শ্রমিকদের ব্যাপারে না, আনুষ্ঠানিক খাতেও বৈষম্য আছে। সবাইকে একসাথে এই চিত্রটা বদলাতে হবে। শুধু নীতিগতভাবে নারী পুরুষের মধ্যে সাম্যতা চাইলেই হবে না, বাস্তব ক্ষেত্রে অসুবিধাগুলোকে আমরা স্বীকার করে তা দূর করতে হবে। সরকারি চাকরিতে এবং অন্যান্য ফর্মাল চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় মানসম্মত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন, নারীদের তুলনামূলকভাবে পরিবারের কাছাকাছি পোস্টিং, আবাসনের ব্যবস্থা করা, নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
শুরু দিয়েই শেষ করছি। নারীর হাতকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতেই হবে দেশ, সমাজ ও পরিবারের প্রয়োজনেই। কারণ বাংলাদেশের পরিবারগুলো প্রধানত পুরুষ প্রধান হলেও, নারী প্রধান পরিবারের সংখ্যা ইদানিং বাড়ছে বলে সরকারি তথ্যে জানা যাচ্ছে। এসব নারীর বেশিরভাগই বিধবা, নয়তো বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। বিবিএস এর জরিপ অনুযায়ী প্রতি ১০০টি পরিবারের মধ্যে ১৪টি পরিবারের প্রধান এখন নারী এবং ২০১৩ সাল থেকে এই হার বাড়ছে।