আফগান নারীরা একসময় কাজ করতেন পার্কটিতে, এখন তাদের প্রবেশের অনুমতিই নেই
আফগানিস্তানের 'বান্দে আমির জাতীয় উদ্যান' দেশের প্রথম নারী পার্ক রেঞ্জার নিয়োগের জন্য পরিচিত ছিল। এখন সেখানে নারীদের কাজ করা তো বন্ধ হয়েছেই, সাথে তাদের প্রবেশের উপরই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
আফগানিস্তানের ধর্ম প্রচার এবং অনাচার প্রতিরোধ বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ খালিদ হানাফি শনিবার (২৬ আগস্ট) ঘোষণা করেন যে, দেশের অন্যতম দরিদ্র এবং স্বল্পোন্নত অঞ্চল বামিয়ান প্রদেশে অবস্থিত জনপ্রিয় পার্কটিতে নারীরা আর প্রবেশ পারবেন না।
২০১৯ সালের আফগান সরকার ইউএসএআইডি এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় এই পার্ক প্রতিষ্ঠা করে। গভীর নীল হ্রদসহ পাহাড়ে ঘেরা একটি শান্তিপূর্ণ মরূদ্যান হিসেবে খ্যাতি আছে পার্কটির।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নারী অধিকার বিষয়ক সহযোগী পরিচালক হেদার বার সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, নিষেধাজ্ঞাগুলো দেখায় যে, আফগানিস্তানে কীভাবে নারীদের দেয়াল বন্দী করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তালবানরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং অবাধ বিচরণ থেকে মেয়ে ও নারীদের দূরে রেখে সন্তুষ্ট নয়। তারা নারীদের থেকে পার্কে যাওয়া, খেলাধুলো এমনকি প্রকৃতি পরিদর্শনও কেড়ে নিতে চায়। বান্দে আমিরে নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় আমরা সে বার্তাই পাচ্ছি।
'ধাপে ধাপে নারীদের দেয়াল বন্ধী করা হচ্ছে, ঘরগুলো হয়ে উঠছে এক একটি কারাগার' যোগ করেন তিনি।
বামিয়ান প্রদেশে তালেবানদের একটি দীর্ঘ কলঙ্কজনক অধ্যায় আছে। ১৯৯০-এর দশকের গৃহযুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে তালেবানের উত্থানের সময় ভয়াবহ গণহত্যার স্থান হয়ে ওঠে সংখ্যালঘু শিয়া মুসলিমদের এই আবাস্থল ।
চতুর্থ এবং পঞ্চম শতাব্দীতে সমৃদ্ধ বৌদ্ধ সভ্যতার কেন্দ্র ছিল এই অঞ্চল। ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালে তালেবানরা বামিয়ানে দেড় হাজার বছর ধরে অক্ষত থাকা গৌতম বুদ্ধের দুটি বিশাল মূর্তি ধ্বংস করে।
২০২১ সালে আবারো ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের দুই দশকের অগ্রগতিকে তালেবানরা আবার পিছিয়ে দিচ্ছে। কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞার কারণে নারীরা এখন মূলত গৃহবন্দী।
২০২৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনীত আফগান নারী অধিকার কর্মী মাহবুবা সিরাজ বলেন, আফগানিস্তানে নারী স্বাধীনতা বলে আর কিছু নেই। এ দেশে নারীদের ধীরে ধীরে সমাজ থেকে, জীবন থেকে, সবকিছু থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে। তাদের মতামত, তাদের কণ্ঠস্বর, তারা কি ভাবছে সবকিছু কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
গত মাসে নারীদের বিউটি সেলুন বন্ধ করা হয়। যা তাদের স্বাধীনতাকে আরো সীমাবদ্ধ করছে। এ ছাড়া সেলুনের আয়ের উপর নির্ভর করা নারীরা অর্থনৈতিকভাবে বিপাকে পড়েছেন।
জুন মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আফগানিস্তানে বাড়ির বাইরে বেশিরভাগ সেক্টরে নারীদের কাজ করা নিষিদ্ধ এবং পাবলিক টয়লেট, পার্ক এবং জিমে যাওয়া নিষিদ্ধ। তাদের অবশ্যই একটি ঢিলেঢালা কালো পোশাক পরতে হবে যা তাদের মুখ ঢেকে রাখে। কারণ ছাড়াই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই তাদের। আর বের হলেও সাথে পুরুষ অভিভাবক থাকতে হবে।
বাড়ির বাইরে আরোপিত বিধিনিষেধ এবং অর্থনৈতিক কষ্টের ফলে গার্হস্থ্য সহিংসতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। জোরপূর্বক বিয়ে বৃদ্ধির প্রমাণও মিলেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।