দাবায় প্রতারণা নিয়ে ম্যাগনাস কার্লসেন ও হানস নিমানের দীর্ঘ মামলা শেষ হলো
নরওয়েজিয়ান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেন এবং মার্কিন দাবাড়ু হানস নিমানের মধ্যে দাবায় প্রতারণা নিয়ে এক বছরব্যাপী যে বিরোধ ও মামলা চলছিল তার নিষ্পত্তি ঘটেছে। খবর বিবিসির।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে সিংকফিল্ড কাপের এক ম্যাচে নিমানের কাছে হেরে যান দাবায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেন। এরপরেই তিনি নিমানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনেন। ওই সময় নিমানের বয়স ছিল ১৯ বছর।
অন্যদিকে নিমানও তার প্রতিদ্বন্দ্বী কার্লসেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চেস ডটকম এবং তৃতীয় আরেক গ্র্যান্ডমাস্টারের বিরুদ্ধে পাল্টা মানহানি মামলা করেছিলেন।
কিন্তু দাবার জগতে সাড়া ফেলে দেওয়া এই বিবাদের প্রায় এক বছর পর চেস ডটকম জানিয়েছে যে, নিমান ও কার্লসেনের মধ্যে সবকিছু চুকে গেছে, নিমানের অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কার্লসেন মেনে নিয়েছেন যে খেলায় কোনো প্রতারণা হয়নি।
যদিও বছরখানেক আগে অভিযোগ ওঠার পর হানস নিমান স্বীকার করেছিলেন যে তিনি চেস ডটকমে অনলাইন ম্যাচে দুইবার প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন, কিন্তু সেটা ১২ ও ১৬ বছর বয়সে থাকতে। কিন্তু সিংকফিল্ড কাপে বা সশরীরে অন্য কোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলায় তিনি কোনো প্রতারণার আশ্রয় নেননি বলে দাবি করেন।
কিন্তু ওই সময় চেস ডটকমের তদন্তে দাবি করা হয়েছিল যে, অনলাইনে প্রায় একশোর বেশি খেলায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী নিমান। আর এই অভিযোগ তুলেই নিমানের অ্যাকাউন্টটি স্থগিত করে দেয় চেস ডটকম। আবার একই প্রতিবেদনে বলা হয় যে তারা সিংকফিল্ড কাপ টুর্নামেন্টে কার্লসেনের বিরুদ্ধে নিমানের প্রতারণার কোনো প্রমাণ পায়নি।
কিন্তু সশরীরে খেলায় কিভাবে নিমান প্রতারণা করলেন তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে গণমাধ্যমে। কেউ কেউ মনে করেন, নিমান হয়ত এমন ক্ষুদ্র মাইক্রোফোন শরীরের সঙ্গে যুক্ত করে ঢুকেছিলেন যা পাস কোডের নিরাপত্তার বেড়াজাল টপকে গেছে।
এ ঘটনার পর অক্টোবরে চেস ডটকম, কার্লসেন এবং গ্র্যান্ডমাস্টার হিকারু নাকামুরার বিরুদ্ধে ১০০ মিলিয়ন ডলার মানহানি মামলা করেছিলেন নিমান। নাকামুরা চেস ডটকমের স্ট্রিমিং ভিডিওতে নিমান প্রতারণা করেছেন বলে উল্লেখ করায়, নিমান তার বিরুদ্ধেও মামলা করেন।
পরবর্তীতে এই মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যায় এবং আদালতের বাইরে উভয় পক্ষ সরাসরি বসে আলাপ-আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন।
এক বিবৃতিতে সোমবার চেস ডটকম জানায়, "গত জুন থেকে উভয় পক্ষ ব্যক্তিগতভাবে তাদের সমস্যা সমাধানের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং আর কোনো মামলা-হাঙ্গামা না করেই দাবার জগতকে এগিয়ে নিতে চান। আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে সব পক্ষই একটা সুবিধাজনক চুক্তিতে আসতে পেরেছেন।"
বিবৃতিতে হানস নিমানকে চেস ডটকমে যেকোনো ইভেন্টে অংশগ্রহণের সাদর আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং বলা হয় যে, অন্য কোনো খেলোয়াড়ের চাইতে তাকে ভিন্ন চোখে দেখা হবে না।
চেস ডটকম জানায়, তারা নিমানকে নিয়ে তাদের আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সঙ্গে এখনো একমত যে নিমানের সশরীরে দাবার ম্যাচে প্রতারণার বিষয়ে জোরাল ও সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ মেলেনি।
৩২ বছর বয়সী কার্লসেন বলেন, তিনি প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন এবং বুঝতে পেরেছেন যে নিমানের বিরুদ্ধে প্রতারণার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি আরও জানান যে, ভবিষ্যতেও তিনি নিমানের সঙ্গে খেলতে ইচ্ছুক।
অন্যদিকে, নিমান জানিয়েছেন যে তার মামলাটি দুই পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ায় তিনি খুশি। নিমান বলেন, তিনি আদালতে নয় বরং দাবায় কার্লসেনের বিরুদ্ধে লড়তে আগ্রহী।