জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বাস্থ্যনীতি ‘এখনো প্রাসঙ্গিক’
১৯৯০ সালে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে স্বাস্থ্যনীতি তৈরি করেছিলেন সেটি এখনো প্রাসঙ্গিক, এবং একটি রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এরকম একটি স্বাস্থ্যনীতি প্রয়োজন- বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইদুর রহমান।
দৃকের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সোমবার সন্ধ্যায় পান্থপথের দৃকপাঠ ভবনে 'ডা. জাফরুল্লাহ, ১৯৮২ ওষুধ নীতি ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য আন্দোলন' শীর্ষক লেকচারে এ কথা বলেন তিনি।
"এই নীতির আলোকে যদি বাংলাদেশে স্বাস্থ্যনীতি করা হয় তাহলে সেখানে যে কোন ধরনের আপগ্রেড করার বা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে আমরা সাহায্য করবো," বলেন তিনি।
"স্বাস্থ্যসেবাকে এক সময় রহস্যময় করে রাখা হতো, তিনি এটিকে বোধগম্য করার চেষ্টা করলেন। ব্রিটিস মেডিকেল জার্নালসহ বেশিকিছু জার্নাল বাংলা ভাষায় মাসিক গণস্বাস্থ্য প্রকাশ করা হতো। ৪০ বছর আগে মাসিক গণস্বাস্থ্যে বাংলা ভাষায় যা আলোচনা করতেন এখন তা আলোচনা করা হচ্ছে," বলেন তিনি।
"১৯৭২ সালে গণস্বাস্থ্য তাদের চাকরির বিজ্ঞাপনে লিখলেন ধুমপায়ীদের আবেদন করার দরকার নেই। এ নির্দেশনা কোন দেশে নেই। ট্যোবাকো কোম্পানির ক্ষমতার বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি যে সাহস দেখিয়েছেন আজ পর্যন্ত এই মাত্রার সাহস প্রজ্ঞার উদাহরণ ধুমপানের বিরুদ্ধে পৃথিবীর কোন দেশ করতে পারেনি," বলেন তিনি।
১৯৮২ সালের ওষুধ নীতি প্রসঙ্গে সাইদুর রহমান বলেন, "ওষুধনীতির আগে দেশের মাত্র ৮টি বহুজাতীক কোম্পানি ওষুধের ৭০% বাজার নিয়ন্ত্রণ করতো। ওষুধনীতির পর ১৭৪২টি অপ্রয়োজনীয় ওষুধ বন্ধ করা হলো। যেসব ওষুধ দেশে বানানো সহজ তা আমদানি বন্ধ হয়ে গেল। ১৯৮১ সালে দেশীর ওষুধ কোম্পানিগুলোর বার্ষিক ৫ কোটি টাকার বেশি মুনাফা ছিলোনা। এখন তারা ৫০০-৬০০ কোটি টাকার মূনাফা করছেন।"
"ওষুধ নীতির আরেকটি বিষয় ছিলো ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করা। সেসময় পৃথিবীর ১৪টি দেশে ওষুধনীতি ছিলো তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এ ওষুধনীতির কারণে আমদানিকারক একটি দেশ ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়।"
অধ্যাপক সাইদুর আরো বলেন, "বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের কথা এখন বহুল প্রচলিত। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের কথা ভাবলেন জাফর ভাই। তিনি প্রথমে খোঁজ নিলেন প্রফেশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় কিনা। উনি সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হলেন গাড়ি নারীর হাতে নিরাপদ। প্রথম যে নারী প্রফেশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পেলো, তিনি ছিলেন জাফর ভাইয়ের ড্রাইভার। ওয়েল্ডিংসহ বিভিন্ন কাজে নারীদের যুক্ত করলেন।"
যুদ্ধের পর পর গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সবার কৃষিকাজ বাধ্যতামূলক ছিলো। "জাফর ভাই বলতেন, ক্যান্টিনে সবাই এক খাবার খাবে কিন্তু বিল পে করবে যার যার সামর্থমতো," বলেন তিনি।
সাইদুর রহমান বলেন, "আমি বিশ্বাস করি আগামীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে গবেষণা করবে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য ন্যায়ভিত্তিক বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন তিনি। আমাদের মতো তরুণদের তৈরি করেছেন।"