টাকা-রুপিতে বাণিজ্য সহজ করতে আজ চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন হাসিনা-মোদি
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে গত জুলাইয়ে ডলারের বিপরীতে উভয় দেশের মুদ্রায় লেনদেন শুরু হওয়ার পর তা আরো সহজ করতে জি২০ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রুপি ও টাকায় লেনদেন আরো সহজ করতে ন্যাশনাল পেমেন্টস কোঅপারেশন অব ইন্ডিয়া (এনপিসিআই) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হবে।"
এছাড়া, কৃষিখাতে গবেষণা প্রশিক্ষণ জোরদার করতে এবং শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে বিদ্যমান কালচারাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম দুই বছরের জন্য বর্ধিত করা সংক্রান্ত আরো দুটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে নতুন কোন লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা নেই বলে জানান মন্ত্রী।
জি২০ সম্মেলনে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে যোগ দিতে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
মন্ত্রী জানান, "জি২০ বৈঠকের মাঝে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এসময় বাংলাদেশে বাস্তবায়িত বিদ্যুৎ ও রেলখাতের একাধিক প্রকল্প উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক মেজর ইস্যুগুলো তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।"
"এছাড়া আলোচনায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার কথাও উঠে আসবে। এই অঞ্চলের মানুষের মঙ্গলের জন্য আমরা প্রায়ই বলি, ইন্দো প্যাসিফিক এ কোন প্রক্সি ওয়ার দেখতে চাই না। যেটি ইউরোপে হচ্ছে, মিডল ইস্ট এ হচ্ছে। শান্তির জন্য আমাদের জোরালো অবস্থান থাকবে," বলেন তিনি।
জি২০ তে বাংলাদেশ গ্লোবাল ভয়েস হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "উন্নয়নশীল দেশগুলো যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে - জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মারাত্নকভাবে ব্যহত হওয়া জ্বালানি, খাদ্যপণ্য সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার- বিষয়ে সেখানে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন।"
এছাড়া বাংলাদেশ যে বিশ্বে স্থিতিশীলতা চায় সেটিও উঠে আসবে আলোচনায়। মাইগ্রেশন ইস্যু, গ্রিন জবসের মত ইস্যুও বাংলোদেশ তুলবে। এছাড়া আর্থ সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতিও তিনি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবেন।
সম্মেলনের সাইডলাইনে সম্মেলনে উপস্থিত সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার আলোচনায় বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন্ নিয়ে অলোচনা হবে কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "ট্রান্সপারেন্ট ব্যালট বাক্স করেছি, যাতে রাতের অন্ধকারে ব্যালট না হয়। স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার সবই করেছি।"
"নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের চাপ গ্রহণ করবো না। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে। আমরা যেহেতু স্বচ্ছ, আমরা সুন্দর নির্বাচন করবো। এই দিক থেকে কোন চাপ নেব না। কে সেটা গ্রহণ করলো না করলো, সেটা তাদের বিষয়। তারা চাপের মুখে পড়ে ছাই হয়ে যাবে কিন্তু আমরা টিকে থাকবো। আমাদের জনগণ আমাদের সাথে থাকবে," বলেন তিনি।
"অন্য দেশের কোন স্বল্পকালীন প্রতিনিধি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না। আমরা দেখেছি বিদেশীরা এসে বিভিন্ন দেশে কীরকম ধ্বংসলীলা চালায়। আমরা এ বিষয়ে সচেতন। এজন্য তাদের চাপ আমাদের কাছে নেই।"
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে চাইলে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে বলে জানান মন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, "যে লোন ভারত দেয় (লাইন অব ক্রেডিট বা এলওসি এর আওতায়) তা সহজে ব্যবহার হচ্ছে না। ইস্যুটি আমরা ভারতের সাথে আলোচনায় তুলি এবং তারা এটাকে ফ্যাসিলিটেট করার চেষ্টা করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা বেশকিছু পরিবর্তন এনেছে।"
২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ওই চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ আরো আর্টিকুলেটেড প্রস্তাব তৈরি করছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরে হবে কিনা, তা জানেন না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, "আমাদের তিস্তা চুক্তির একটি ড্রাফট সম্পন্ন হয়েছিলো। ওই অবস্থায়ই আছে, কিন্তু চুক্তি হয়নি।"