বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করুন: মোদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ভারত থেকে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নয়াদিল্লিতে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, বৈঠকে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর জন্য দুই দেশের চলমান প্রচেষ্টা ও কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে বর্তমানে ভারত সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকের পর দুই দেশ তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। এগুলোর মধ্যে দুই দেশের রুপি এবং টাকা উভয় মুদ্রায় লেনদেন সহজ করার জন্য নেটওয়ার্ক সংযোগ বাড়ানোর বিষয়ে একটি সমঝোতা স্বারক রয়েছে।
ইউএনবি'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্য দুটি সমঝোতা স্মারক হলো বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এবং ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদের মধ্যে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষায় সহযোগিতা এবং ২০২৩–২৫ সালের জন্য সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রোগ্রাম (কালচারাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম)।
দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
বৈঠকে উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হন।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, গত বছরের ৪–৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে তার সফল রাষ্ট্রীয় সফরের পর দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এ বিষয়ে উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে শেখ হাসিনা বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য সম্পর্কে নরেন্দ্র মোদিকে অবহিত করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতির জন্য শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি নিশ্চিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ সময় নরেন্দ্র মোদি সরকারি পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সমাধানের ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী দুই দিন 'জি-২০ লিডারস সামিট'-এ অংশ নেবেন।
শনিবার তিনি বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাষ্ট্র/সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
এর মধ্যে সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট, এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
মোদির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি: মোমেন
শুক্রবার রাতের প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মোদি ও হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি।
তবে তিনি আরও বলেন, 'দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না আমার জানা নেই।'
এদিকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোমেন বলেন, 'ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদি আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি তিস্তার পানি বণ্টন ও অন্যান্য সমস্যা সরকারি পর্যায়ে আলোচনা করে সমাধানে অগ্রাধিকার দেবেন।'
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ: মোদি
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তার অফিসিয়াল এক্স (অধুনালুপ্ত টুইটার) হ্যান্ডেলে এ কথা জানান।
'গত নয় বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই আনন্দদায়ক,' বলেন নরেন্দ্র মোদি।
তিনি আরও লেখেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংযোগ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং আরও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।