ঘূর্ণিঝড়ে ঝরে পড়া আম যাচ্ছে ডাস্টবিনে
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন সাতক্ষীরার আম ব্যবসায়ী ও চাষীরা। ঝরে পড়া আমের নেই ক্রেতা, নেই বিক্রি। কয়েকদিন রাখার পর নষ্ট হয়ে যাওয়া এ সব আম ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
একদিকে, বিক্রি নেই অন্যদিকে নষ্ট আম ফেলতেও টাকা দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের। যা ক্ষতির উপর বাড়তি ক্ষতি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সাতক্ষীরা শহরের বড়বাজার মোড়ে পৌরসভার ডাস্টবিনে শতাধিক মণ নষ্ট আম ফেলছেন ব্যবসায়ীরা।
বড়বাজারের আম ব্যবসায়ী মেসার্স রাসেল ট্রেডার্সের মালিক রজব আলী খাঁ। আমের ব্যবসায় তিনি এ বছর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ঝরে পড়া আমের কোনো ক্রেতা নেই। বরং নষ্ট হয়ে যাওয়া আম ডাস্টবিনে ফেলতে উল্টো টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আম ব্যবসায়ীর মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এ বছর। আমের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চাষীরা ঝরে পড়া আম আমার এখানে রেখে গেছে। বিক্রি করতে পারলে টাকা দিতে হবে। কিন্তু কোনো বিক্রি নেই।
তিনি বলেন, প্রথমদিকে ২-১০ কেজি আম প্রতি কেজি ৪-৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন আর কেউ নিচ্ছে না। আম পচে যাচ্ছে। বাধ্য হয়েই ব্যবসায়ীরা ফেলে দিচ্ছেন। বড় বাজারে কয়েক হাজার মণ আম এখানে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রত্যেক আম ব্যবসায়ীর এমন ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ''আমার বিশ লাখ টাকারও বেশী ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ নাকি ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে। কখনো এসে তারা খোঁজও নেয় না।''
শহরের মুনজিতপুর এলাকার আম ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, "আমার ১০ লাখ টাকার আমের বাগান কেনা ছিল। এক লাখ টাকার আমও নিতে পারিনি। ঘূর্ণিঝড়ে পড়ার পর কিছু আম কুড়িয়ে এনেছিলাম। সেগুলো বিক্রি হয়নি। অনেক গাছের আম কুড়াতে যায়নি। ১০ লাখ টাকার আম বাগান থেকে ১৫-১৬ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করেছিলাম। এ বছর পুরো টাকাই লোকসান হলো। সরকারের ব্যবসায়ীদের দিকেও নজর দিতে হবে। কেউ এখনো খোঁজও নেয়নি।"
একই এলাকার সামাত আলীর ছেলে আম ব্যবসায়ী বুলু। তিনি বলেন, "আমার চার লাখ টাকার আম বাগান ছিল। ৬-৭ লাখ টাকা বেচাকেনা হবে এমন ধারণা ছিল। তবে সব নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেলাম।"
পুরাতন সাতক্ষীরা কলেজমোড় এলাকার আম ব্যবসায়ী আব্দুস সাদেক। তিনিও এ বছর আম ব্যবসায় হারিয়েছেন আট লাখ টাকা।
তিনি বলেন, "ঝড়ের কারণে আট লাখ টাকার আমের বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। পুঁজির টাকাই নষ্ট হয়ে গেল। কৃষি বিভাগ থেকেও আমরা কোনো সহযোগিতা পাই না।"
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, জেলার ১৩ হাজার ১০০ জন আম চাষী কমবেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আম্পান ঝড়ে সাতক্ষীরায় ১৬ হাজার ২৯৬ টন আম নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে হিমসাগর, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, ল্যাংড়া, লতা, আম্রপালিসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম রয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে পাঁচ হাজার ২৯৯টি বাগানে চার হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হিমসাগর এক হাজার ৫৫০ হেক্টর, ল্যাংড়া ৫৬৪ হেক্টর, আম্রপালি ৮৯৯ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। বাকি জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির আম। ঝড়ে আম সব ঝরে পড়ে চাষি ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে পাঠানো হয়েছে। কোন সরকারি সুবিধা আসলে তাদের দেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ঝরে পড়া আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতির হাত থেকে একটু হলেও রক্ষা করতে ত্রাণের সঙ্গে আম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ত্রাণের সঙ্গে কিছু আম ক্রয় করে আমরা ত্রাণ হিসেবে বিলিও করেছি। তবে সেটি অনেক করতে পেরেছি এমনটি নয়। তবে আমরা ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে উদ্যোগ নিয়েছি।