এলিয়েনের মমি? মেক্সিকোর কংগ্রেসে ‘প্রমাণ নিয়ে হাজির ইউএফও বিশেষজ্ঞ’
চলতি সপ্তাহে মেক্সিকোর আইনসভা কংগ্রেসের অধিবেশনের একটি প্রেজেন্টেশন তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। ওই প্রেজেন্টেশনে একজন স্বঘোষিত ইউএফও গবেষকের উপস্থাপন করা দুটি নমুনা দেখেছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। ওই গবেষকের দাবি, মমি করা নমুনা দুটি এলিয়েন বা ভিন্গ্রহবাসীর মৃতদেহ।
মঙ্গলবার সাংবাদিক জেইমি মসান উপস্থাপন করা মমি দুটি এলিয়েনের মরদেহ বলে দাবি করেন। তার এই দাবি শুনে মেক্সিকোজুড়ে যুগপৎ বিস্ময় আর রসিকতার জোয়ার বয়ে গেছে।
মসানের দাবি, নমুনা দুটি ২০১৭ সালে পেরুতে পাওয়া গেছে। ছোট আকারের মমিগুলোর গায়ের রং চকের মতো। এদের প্রত্যেক হাতে তিনটি করে আঙুল রয়েছে। আর রয়েছে শুকিয়ে কুঁচকে যাওয়া মাথার মতো আকৃতি।
পাশে সাংকেতিক ভাষার দোভাষী নিয়ে মসান বলেন, 'এই অ-মানবীয় প্রাণীগুলো আমাদের পার্থিব জগতের অংশ নয়।'
মসানের দাবি, মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের কার্বন পরীক্ষায় জানা গেছে, এই মৃতদেহগুলো অন্তত এক হাজার বছরের পুরনো। এগুলো উদ্ধার করা হয়েছে পেরু এক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। তবে গবেষকরা মসানের দাবির সঙ্গে একমত হতে পারেননি।
মসান মেক্সিকোতেই থাকেন। প্রায়ই টিভি ও ইউটিউবে এরকম দাবি করার জন্য দেশটিতে তিনি বেশ পরিচিত মুখ। তার নতুন এই দাবির পর ভিনগ্রহবাসীদের নিয়ে ফের আলোচনা ও আগ্রহ তুঙ্গে উঠেছে দেশটিতে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এ ব্যাপারে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো জবাব পায়নি।
সার্জিও গুতিয়েরেজ লুনা নামের একজন আইনপ্রণেতা মসানকে কংগ্রেসে বক্তব্য দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
মসানের উপস্থাপনা মেক্সিকোর বিজ্ঞানমহলের অনেককেই ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে। মমির ছবিগুলো প্রকাশ্যে আসার পর ন্যাশনাল অটোনমার ইউনিভার্সিটি অভ মেক্সিকোর পদার্থবিদ্যা ইন্সটিটিউট একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, তাদের গবেষকরা নিজেরা কখনোই মসানের নমুনাগুলো পরীক্ষা করেননি। তবে ২০১৭ সালে একজন ক্লায়েন্টের পাঠানো ত্বকের নমুনার কার্বন পরীক্ষা করেছেন।
মেক্সিকোর শীর্ষ অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্ট আন্তিগনা সেগুরাও মসানের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ড. সেগুরা বলেন, মসানের দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। পুরো ব্যাপারটিকেই তিনি 'অত্যন্ত লজ্জাজনক' বলে আখ্যা দেন।
মসান ওই মমি করা নমুনাগুলো পেরু থেকে মেক্সিকোতে নিয়ে গেছেন কীভাবে, তা জানা যায়নি। তাছাড়া নমুনা দুটি আসলেও পেরু থেকেই আনা হয়েছে কি না, সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে পেরুর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ২০১৭ সালে দেশটির একটি সমাধিতে কিছু মমির সন্ধান পান মসান। পেরুর ওইসব মমির নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওগুলো মানুষ ও প্রাণীর হাড়, ভেজিটেবল ফাইবার ও সিনথেটিক অ্যাডহেসিভের সমন্বয়ে বানানো।