কর ছাড় সুবিধা না কমানোর দাবি রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের
সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস ছাড়া বাকি সব ভাতা ও সুবিধা আয়করমুক্ত। কিন্তু রাষ্ট্রমালিকানাধীন পাঁচ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে না মেনে সব ভাতার ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর দাবি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর অন্যায্য অতিরিক্ত এই করারোপ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
তাদের দাবি, ২০১৮ সাল থেকে অতিরিক্ত আয়কর প্রদানের জন্য এনবিআরের কাছ থেকে নোটিশ পাওয়ার পর থেকেই তারা বিষয়টির বিরোধিতা করে আসছেন।
জনতা ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে দেওয়া নোটিশ ও জরিমানা আরোপের বিষয়টি দেখিয়ে তিনি বলেন, "জনতা ব্যাংক শতভাগ সরকার মালিকানাধীন ব্যাংক। আমরাও সরকারি কর্মচারী। কিন্তু এনবিআর আমাদের বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে উল্লেখ করে সব ধরনের আয়ের ওপর কর দেওয়ার নোটিশ দিয়েছে।"
ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটি এ নিয়ে এনবিআরের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেও কোনো সমাধান হয়নি বলে জানান তিনি।
জানা যায়, কর অঞ্চলগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পে-স্কেল ২০১৫-এর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অতিরিক্ত আয়করের নোটিশ দিচ্ছে। এ প্রজ্ঞাপনে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের নাম নেই।
ওই সময়ে বেসামরিক প্রশাসন, স্বশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং বিচার বিভাগের জন্য পে-স্কেলের পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এসব ব্যাংককে অন্তর্ভুক্ত না করে স্বশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রণালয় জানিয়েছে রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠান হিসাবে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী এবং বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেডের জন্য নিজস্ব বেতন কাঠামো নির্দিষ্ট না হওয়ার পর্যন্ত প্রধান নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যতীত অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের আদেশে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন নেই।
এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীদের মতোই আয়কর হবে বলে জানিয়েছেন জনতা ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মনিরুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, "সমস্যাটি নিয়ে আমরা অর্থমন্ত্রণালয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছি। মন্ত্রণালয় একটা নির্দেশনাও দিয়েছে। এনবিআরকে বিভিন্নভাবে আমাদের যৌক্তিক দাবি জানিয়েছি। তবে তারা আইন অনুযায়ীই ট্যাক্স আদায় করতে চায়।"
"অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি স্পষ্ট করেছে যে, পে স্কেলে এই ব্যাংকগুলোকে ব্যাংক-বীমা খাতের অধীনে তালিকাভুক্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই। ব্যাংকগুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মতো একই সুবিধা ভোগ করার অধিকার রাখে। এরপরেও এনবিআর কেন এই বিষয়টিকে সে অনুযায়ী সুরাহা করেনি, তা একটি বড় প্রশ্ন," যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে এনবিআর-এর একাধিক কর অঞ্চলের বৈতনিক সার্কেলের অনেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এনবিআর-এর প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্তে এসব ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে অতিরিক্ত আয়কর দাবি করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এটি মাঠ পর্যায়ের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেকেন্ড সেক্রেটারি (কর আইন) মো. মহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর বিধান আলোকে সার্কেলগুলো কর আদায়ের নোটিশ দিয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা থাকলে তা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো আয়ের ওপর আয়কর দিতে হলে কর্মকর্তা থেকে জ্যেষ্ঠ মুখ্য কর্মকর্তাদের বছরে ৩০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা অতিরিক্ত আয়কর দিতে হবে।
আর সহকারী মহাব্যবস্থাপক থেকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিতে হবে দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা অতিরিক্ত আয়কর। বর্তমান বাস্তবতায় কেউ এত টাকা বাড়তি কর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন।