সিরাজ আগুনে শ্রীলঙ্কাকে পুড়িয়ে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত
শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং অর্ডার শুরুতেই অকল্পনীয়ভাবে ভেঙে পড়ায় এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়ে যায়। ভারতের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে এই ফল বদলাতে পাল্টা জবাবে অবিশ্বাস্য বোলিং করতে হতো শ্রীলঙ্কাকে, কিন্তু সেটা পারেনি তারা। ভারতের পেসার মোহাম্মদ সিরাজের আগুনে বোলিংয়ের মুখে ১৬ ওভারেই অলআউট হওয়ার আগে স্কোরকার্ডে যে রান জমা করে শ্রীলঙ্কা, সেই রানে লড়াই করা দূরের কথা; উল্টো অস্বস্তিতে বাকিটা সময় মাঠে পার করতে হয় তাদের। সামান্য লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে বিন্দুমাত্র বেগও পোহাতে হয়নি ভারতকে। লঙ্কানদের দুমড়ে মুচড়ে বিশাল জয় তুলে নিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুললো রোহিত শর্মার দল।
রোববার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে ভারত। এবার নিয়ে রেকর্ড অষ্টমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা জিতলো তারা। ঘুচলো পাঁচ বছরের অপেক্ষাও, ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত। এশিয়া কাপে ছয় বারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা এবারের আসর জিতে ভারতের সমান হওয়ার মিশন নিয়ে ফাইনাল খেলতে নামলেও তাদের সঙ্গী হলো দুঃস্বপ্নের এক অভিজ্ঞতা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে শ্রীলঙ্কা। আগুনে বোলিংয়ে মুহূর্তেই তাদের ব্যাটিং লাইন আপ গুঁড়িয়ে দেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা এবং ওয়ানডেতে ভারতের পক্ষে চতুর্থ সেরা বোলিং করা মোহাম্মদ সিরাজ। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা ডানহাতি এই পেসারের তোপে ১৫.২ ওভারে মাত্র ৫০ রানেই অলআউট হয়ে যায় লঙ্কানরা। তাদের মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন।
শ্রীলঙ্কার ইনিংসটি এশিয়া কাপের ইতিহাসে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। এতোদিন এশিয়া কাপে সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিল বাংলাদেশের, ২০০০ সালের আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৭ রানে অলআউট হয় তারা। এশিয়া কাপে এটা শ্রীলঙ্কার সর্বনিম্ন সংগ্রহ, তা বলাই বাহুল্য। এই আসরে দলটির আগের সর্বনিম্ন সংগ্রহও ছিল ভারতের বিপক্ষে। ১৯৮৪ এশিয়া কাপে ৯৬ রানে অলআউট হয় তারা। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এটা লঙ্কানদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ। সর্বনিম্ন ৪৩, ২০১২ সালে পার্লে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
৫১ রানের লক্ষ্য, ভাবনার কিছুই ছিল না ভারতের। সাবলীল শুরু করেন ইশান কিশান ও শুভমান গিল। যে উইকেটে সিরাজ, পান্ডিয়াদের বিপক্ষে ব্যাটিং করতে নাভিশ্বাস অবস্থা হয়ে যায় লঙ্কানদের, সেই উইকেটেই দাপুটে ব্যাটিংয়ে চোখের পলকে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান কিশান-শুভমান। মাত্র ৬.১ ওভারেই ১০ উইকেটের জয় পায় ভারত। কিশান ১৮ বলে ৩টি চারে ২৩ ও শুভমান ১৯ বলে ৬টি চারে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এর আগে একবারই ১০ উইকেটে জিতেছে ভারত, সেটা এই এশিয়া কাপেই। ১৯৮৪ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৯৭ রানের লক্ষ্য ভারত পাড়ি দেয় ২১.৪ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই। ওয়ানডেতে আরও ৯ বার প্রতিপক্ষকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। তবে আজকের জয়টি বেশ কয়েকটি কারণে বিশেষ। প্রথমত এটা ফাইনাল, এ ছাড়া বেশি বল হাতে রেখে জেতার পথে এটাই ভারতের সবচেয়ে বড় জয়। ২০০১ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ২৩১ বল হাতে রেখে জিতেছিল তারা, আজ জিতলো ২৬৩ বল হাতে রেখে।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কাকে শুরুতেই দিক ভুলিয়ে দেন সিরাজ ও জাসপ্রিত বুমরাহ। কুশল পেরেরাকে ফিরিয়ে শুরুটা করে দেন বুমরাহ। এরপর সিরাজের দাপট, এক ওভারেই তুলে নেন চার উইকেট। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কাকে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করেন সিরাজ। পরের তিন ওভারের মধ্যে মাত্র চার রানের ব্যবধানে শ্রীলঙ্কার চারজন ব্যাটসম্যানে ফিরিয়ে দেন ভারতের এই পেসার।
৫.৪ ওভারে ১২ রানেই নেই ৬ উইকেট, শ্রীলঙ্কার তখন ঘোর অন্ধকারে। এখান থেকে হাল ধরার চেষ্টা করেন কুশল মেন্ডিস ও দুনিথ ভেল্লালাগে। কিন্তু লঙ্কানদের ইনিংসের সর্বোচ্চ ১৭ রান করা কুশলকেও ফিরিয়ে দেন ম্যাচসেরা সিরাজ। ৬ ওভারে মাত্র ১৩ রানে ততোক্ষেণে ৬ উইকেট শিকার হয়ে গেছে তার। ডানহাতি এই পেসারের সামনে ছিল ভারতের পক্ষে ওয়ানডের সেরা বোলিং করার হাতছানি।
যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। শ্রীলঙ্কার শেষের তিন উইকেটই নেন হার্দিক পান্ডিয়া। ৭ ওভারে এক মেডেনসহ ২১ রান খরচায় ৬টি উইকেট নেন সিরাজ, যা ওয়ানডেতে ভারতের চতুর্থ সেরা বোলিং। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪ রানে ৬ উইকেট নেওয়া স্টুয়ার্ট বিনি ভারতের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটি দখলে রেখেছেন। ১২ রানে ৬ উইকেট নেওয়া সাবেক লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে দুই নম্বরে। ১৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে তিন নম্বরে বুমরাহ।
২.২ ওভারে মাত্র ৩ রানে লঙ্কানদের শেষের ৩ উইকেট তুলে নেন পান্ডিয়া। ৫ ওভারে ২৩ রানে একটি উইকেট পান বুমরাহ। কুশল ছাড়া শ্রীলঙ্কার ইনিংসে দুই অঙ্কের রান করা বাকি ব্যাটসম্যান দুসান হেমন্ত, ১৫ বলে অপরাজিত ১৩ রান করেন তিনি। স্বাগতিক দেশটির বাকি ৯ ব্যাটসম্যান ১০ রানের কোটা পেরোতে পারেননি, পাঁচজন ব্যাটসম্যান আউট হন রানের খাতা খোলার আগেই।