খালি কন্টেইনারে ট্রাক চালকের সিঙ্গাপুর যাত্রা, ক্রুদের হাতে ধরা
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালি কন্টেইনারে ঢুকে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে সিঙ্গাপুর গিয়ে ক্রুদের হাতে ধরা পড়েছেন লিটন মোল্লা (২৩) নামের এক যুবক। পরে ফিরতি ট্রিপে তাকে আবার বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগে তাকে সোপর্দ করে জাহাজ কর্তৃপক্ষ। এরপর বন্দরের পক্ষ থেকে শুক্রবার একটি মামলা করা হয়। পুলিশ এ মামলায় তাকে লিটন গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, "লিটন মোল্লা পেশায় একজন ড্রাইভার। তিনি অবৈধভাবে কন্টেইনারে চড়ে সিঙ্গাপুর যাত্রা করেন। পথে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় লিটন কন্টেইনারের বাইরে আসেন পানি-খাবারের আশায়। কন্টেইনার থেকে বের হলেই বিষয়টি ক্রুদের নজরে আসে। তখন তারা তাকে আটক করে জাহাজের ক্যাপ্টেন হাই ফং এর হেফাজতে রাখেন।"
শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের পরিদর্শক নাছির উদ্দিন আহমেদ বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে থানায় সোপর্দ করেছেন।
মামলার এজাহারে দেওয়া তথ্যমতে, অভিযুক্ত লিটন গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় তার ভোটার আইডি কার্ড, ছবি ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি জমা দিয়ে বন্দর গেইট পাস পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে তাকে ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টায় বন্দরে প্রবেশ কার্ড ইস্যু করে। চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি-২ গেইট দিয়ে বিকেল ৫টা ২৩ মিনিটে প্রবেশ করেন তিনি।
এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী লিটন এমভি হাইয়ান ভিউ নামক জাহাজের পিছন দিয়ে রেলিং বেয়ে উঠে জাহাজে করে অবৈধ পন্থায় বিদেশ যাওয়ার জন্য জাহাজের খালি কন্টেইনারের ভিতরে লুকিয়ে থাকেন।
ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা জানান, অভিযুক্ত লিটনের কাছ থেকে বন্দর প্রবেশের একটি কার্ড, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, নগদ ৩ হাজার, একটি ছোট বাটন মোবাইল সেট ও একটি চকলেট কালারের ওয়ালেট জব্দ করা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালি কনটেইনারের ভেতর লুকিয়ে গত ১৩ বছরে ১০ বারে ১১ জন বিদেশে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৯ জনকে জীবিত ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর বন্দরের ১৩ নম্বর জেটিতে থাকা 'এমভি মার্কস উইলমিংটন' জাহাজের কনটেইনারে লুকিয়ে মালয়েশিয়ায় চলে গিয়েছিলেন ফল বিক্রেতা মোহাম্মদ রিপন। তাকে সেখানে নামানোর অনুমতি না পেয়ে জাহাজটির যাত্রাপথে আফ্রিকার দেশ রি-ইউনিয়নে নামিয়ে দেন নাবিকেরা। এরপর ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি তাকে ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ফেরত আনা হয়।
২০১১ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের অস্থায়ী শ্রমিক দ্বীন ইসলাম ও আল আমিন একটি খালি কনটেইনারে উঠে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কনটেইনারটি 'এমভি হ্যানসা ক্যালিডোনিয়া' জাহাজে তোলার পর সিঙ্গাপুর বন্দরের পাসির পানজাং টার্মিনাল নামানো হয় ৯ এপ্রিল। কনটেইনার খুলে দ্বীন ইসলামকে জীবিত ও আল আমিনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এরপর ২৬ এপ্রিল শ্রীলঙ্কাগামী 'এমভি টাম্পা বে' নামের জাহাজে লুকিয়ে বিদেশে যাওয়ার সময় বরিশালের আকতার আলী নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেন নাবিকেরা। পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সোয়েব রিপন নামের এক যুবক সিঙ্গাপুরগামী 'এমভি হ্যানসা ক্যালিডোনিয়া' জাহাজে লুকিয়ে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালায়। জাহাজের নাবিকরা তাকে ওই জাহাজে করে চট্টগ্রামে ফেরত নিয়ে আসেন। পরে ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে বন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
২০১৬ সালে চট্টগ্রামের একটি ডিপো থেকে কনটেইনার এনে বন্দর দিয়ে 'এমভি সিনার বটম' জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। ১৯ অক্টোবর ভারতের বিশাখাপত্তনম বন্দরে সেই জাহাজের একটি খালি কনটেইনার থেকে রোহান হোসেন নামের মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের বাসিন্দাকে ১২ দিন পর জীবিত উদ্ধার করা হয়।
২০১৭ সালের ৩১ জুলাই যুক্তরাজ্যগামী পোশাকের একটি কনটেইনারের ভেতর থেকে শব্দ শুনে বাবুল ত্রিপুরা নামের শ্রমিককে উদ্ধার করেন চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা।
সর্বশেষ চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটি থেকে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দরে ছেড়ে যাওয়া 'এমভি ইন্টেগ্রা'জাহাজের একটি খালি কনটেইনারে আটকা পড়ে কিশোর ফাহিম। ১৬ জানুয়ারি কনটেইনারের ভেতর থেকে শব্দ শুনতে পান নাবিকেরা। ১৭ জানুয়ারি জাহাজটি জেটিতে এনে ২০ ফুট লম্বা কনটেইনার খুলে ওই কিশোরকে উদ্ধার করা হয়।