আমাদের লক্ষ্য স্বাধীনতা: হামাসের উপ-প্রধান
হামাসের উপ-প্রধান সালেহ আল-আরোরি বলেছেন, তাদের এ লড়াইর উদ্দেশ্য স্বাধীনতা অর্জন।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে তিনি বলেন, 'এটা কোনো (চোরাগোপ্তা) অপারেশন নয়। আমরা সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছি। আমার লড়াই চালিয়ে যেতে এবং লড়াইয়ের পরিধি বাড়াতে চাই। আমাদের প্রধান লক্ষ্য একটা: আমাদের স্বাধীনতা এবং আমাদের পবিত্র স্থানগুলোর স্বাধীনতা।'
তিনি বলেন, বিজয়, মুক্তি ও স্বাধীনতা না আসা পর্যন্ত হামাস লড়াই চালিয়ে যাবে।
এর আগে ফিলিস্তিনি এ সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইসরায়েলে আক্রমণ চালালে প্রায় ১৫০ ইসরায়েলি নিহতের কথা জানা গেছে। এছাড়া হামাস অনেক ইসরায়েলিকে বন্দি করেছে। বন্দিদের মধ্যে ইসরায়েলের জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারাও আছেন বলে দাবি করেছে এটি।
'আমরা বড় সংখ্যক ইসরায়েলি নাগরিকদের বন্দি করেছি, তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারাও আছেন,' আল জাজিরাকে বলেন হামাসের উপ-প্রধান সালেহ আল-আরোরি।
শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে গত কয়েক বছরের মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় আক্রমণ চালায় হামাস। এ আক্রমণে মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থান ও অবকাঠামো লক্ষ্য করে পাঁচ হাজার রকেট ছোড়ে বলে জানিয়েছে হামাস।
হামাসের আক্রমণে কমপক্ষে ৪০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর জবাবে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের পালটা আক্রমণে কমপক্ষে ১৯৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজায় চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের আক্রমণে কমপক্ষে ১৯৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আর এতে আহতের সংখ্যা এক হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে।
এর আগে আল জাজিরা'র গাজায় উপস্থিত প্রতিবেদক ইয়ুমনা এলসায়েদ জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান থেকে বোমাবর্ষণের পরিমাণ বেড়েছে। 'আমরা দেখতে পারছি ক্রমশ বেশি পরিমাণে আবাসিক ভবনকে লক্ষ্য করা হচ্ছে,' বলেন তিনি।
আল জাজিরা'র রামাল্লার ব্যুরো প্রধান ওয়ালিদ আল-ওমারি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী ওফাকিম সেটেলমেন্টের একটি বাড়িকে ঘিরে রেখেছে। সেখানে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েলি বন্দিদের রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গে বর্তমানে আলোচনা চলছে।
'ইসরায়েলি সূত্রগুলোর অনুমান, চারটি এলাকা দিয়ে কমপক্ষে এক হাজার ফিলিস্তিনি ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে,' বলেন আল-ওমারি।
ইসরায়েলি পুলিশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা জানিয়েছে, চলমান লড়াই সামনের দিনগুলোতেও বজায় থাকতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নিরাপত্তা ক্যাবিনেটের বৈঠকের বক্তৃতায় তিনি বলেন, তার সেনাবাহিনীর প্রথম লক্ষ্য হলো 'অনুপ্রবেশ করা শত্রুবাহিনীর স্থানগুলো পরিষ্কার করা এবং আক্রমণের মুখে পড়া সেটেলমেন্ট এলাকায় নিরাপত্তা ও শান্তি পুনরুদ্ধার করা।'
'আর একইসাথে দ্বিতীয় লক্ষ্যটি হলো শত্রুদেরকে এবং গাজা উপত্যকাকে বিশাল মূল্য চোকাতে বাধ্য করা,' ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সাবেক মুখপাত্র নূর ওদে আল জাজিরাকে বলেন, হামাস বাহিনীর আক্রমণের বিষয়ে কাউকে আগেভাগে সতর্ক করা হয়নি।
'যারা আগে এ ধরনের আক্রমণের কথা বলত, তাদেরকে সায়েন্স ফিকশনের ভক্ত হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া হতো। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে ইসরায়ের একটি সামরিক পরাশক্তি এবং ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলে সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যে পার্থক্য অনেক বড়। তাই, আমরা আজকে যা দেখছি তা স্পষ্টতই অপ্রত্যাশিত,' তিনি বলেন।
'তবে দখলীকৃত এলাকায় ও গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর যা হচ্ছিল তা নিয়ে বিশ্লেষকেরা কয়েকমাস ধরে সতর্ক করছিলেন। তাই যারা বোঝার তারা আগেই বুঝেছিলেন, বড় কিছু একটা ঘটবে,' তিনি আরও বলেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার সংঘাত বৃদ্ধির জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। এক বিবৃতিতে এটি বলেছে, ফিলিস্তিনের মানুষদের ওপর চলমান সহিংসতাকে বাড়িয়ে তুলতে কেবল ইসরায়েল দায়ী।
তবে কাতার দুই পক্ষকেই সর্বোচ্চ সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া এ ধরনের ঘটনাকে ওজর করে ইসরায়েল যেন গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অতিমাত্রায় যুদ্ধ শুরু না করে তা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছে দেশটি।
মিশর ও তুরস্কও ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছিল। চলমান পরিস্থিতিতে এটি 'ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সহিংসতার তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ' চেয়েছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা চলমান ঘটনার ওপর নজর রাখছে।
ইরানের সুপ্রিম লিডার আলি হোসেইনি খোমেনির একজন উপদেষ্টা ইসরায়েলে ওপর কয়েক বছরে সবচেয়ে বড় আক্রমণ চালানোর জন্য ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন, আধা-সরকারি ইসনা সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আল জাজিরা।
রহিম সাফাভি নামক ওই উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিনন্দন জানাই। ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পাশে থাকব।'
মিডল ইস্ট পিস প্রসেস-এর জাতিসংঘ সমন্বয়ক টম ওয়েনেসল্যান্ড আল জাজিরাকে বলেন, বর্তমান সংঘাত অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বড় এবং 'সামনের দিনগুলো কঠিন' হতে পারে।
'আজকের আক্রমণে আমি ভীত ও ক্ষুব্ধ। ইসরায়েলে আক্রমণের পর অনেকে নিহত হয়েছেন, অপহরণের শিকার হয়েছেন… আমি গাজার পরিস্থিতি নিয়েও ভীষণ উদ্বিগ্ন,' তিনি বলেন।