জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঋণের বদলে ধনী দেশগুলোর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি নাগরিক সমাজের
উন্নয়নশীল দেশগুলোর তথাকথিত সকল জলবায়ু ঋণ বাতিল করে তার স্থলে জলবায়ু ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকায় এক মানববন্ধনে তারা ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো জলবায়ু অর্থায়নের নামে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ঋণগ্রস্ত করে ফেলে বলে অভিযোগ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঐতিহাসিকভাবে দায়ী ধনী দেশগুলোকে ঋণ নয়, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি), গ্লোবাল ল থিঙ্কার্স সোসাইটি (জিএলটিএস), নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ), উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এবং ওয়াটার কিপার-এর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর মোস্তফা কামাল আকন্দ।
মানববন্ধনে ইক্যুইটিবিডি'র আমিনুল হক বলেন, "১৯৮০-এর দশকে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসএপি)-এর মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ সরিয়ে নিয়েছে ধনী দেশগুলো। এখন তারা 'জলবায়ু পরিবর্তন' নামক একটি নতুন বৈশ্বিক সমস্যাকে সামনে নিয়ে এসে 'জলবায়ু অর্থায়ন' নাম দিয়ে স্বল্পোন্নত ও জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে চাচ্ছে।"
তিনি প্যারিস চুক্তিকে অন্যায্য চুক্তি হিসেবে অভিহিত করে বলেন, 'বর্তমান অর্থায়ন প্রক্রিয়া আসলেই অন্যায্য। সুতরাং, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দরিদ্র দেশগুলোকে দেওয়া জলবায়ু অর্থায়নকে ধনী দেশগুলোর শর্তহীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে।'
ওয়াটার কিপার্স-এর শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঋণনির্ভর নীতি সহায়তা গ্রহণ করায় বাংলাদেশসহ অনেক স্বল্পোন্নত দেশ ইতোমধ্যে ঋণের ফাঁদে আটকে গেছে। তিনি সরকারকে ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সতর্কতার সঙ্গে এগোনোর পরামর্শ দেন।
মানববন্ধনে উপকুল সুরক্ষা আন্দোলন-এর নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, 'ঋণ নির্ভরতার দুষ্টচক্র জলবায়ু বিপর্যয়কে আরও তীব্রতর করে তুলছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় সক্ষমতাকে দুর্বল করে তুলছে। এ কারণেই জলবায়ু ঋণ বাতিলের কোন বিকল্প নেই।'
আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর 'দরিদ্রবিরোধী' ভূমিকা হতাশাজনক উল্লেখ করে কৃষক ফেডারেশন-এর বদরুল আলম বলেন, 'এখন তারা আবার তথাকথিত নীতি সমর্থন নিয়ে হাজির হয়েছে, যা অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য ঋণের বোঝা তৈরি করছে।' বিদ্যমান বৈশ্বিক আর্থিক প্রক্রিয়াকে সম্পদ পাচার উপযোগী একটি শোষণমূলক প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করে তিনি জাতিসংঘের আওতায় একটি অংশগ্রহণমূলক, গণতান্ত্রিক এবং টেকসই অর্থব্যবস্থার সুপারিশ করেন।
ইক্যুইটিবিডি'র রেজাউল করিম চৌধুরী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কোনো ঋণ না নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের কথা স্মরণ করে বলেন, ঋণের পরিবর্তে আমাদের দেশের জন্য একটি টেকসই জলবায়ু অর্থায়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে।