কপ২৯: জলবায়ু মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি
বিশ্বের ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নিতে ও এর ক্ষতি রোধে সহায়তার উদ্দেশ্যে রেকর্ড ৩০০ বিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। খবর বিবিসি'র।
আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৯ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) শেষ হওয়ার কথা থাকলে, শেষ হতে ৩৩ ঘণ্টা বিলম্ব হয়। দর কষাকষির এক পর্যায়ে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়। তবে শেষে ঐক্যমতে পোঁছান বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা। জাতিসংঘ জলবায়ু সংস্থার প্রধান সাইমন স্টিয়েল একে 'কঠিন যাত্রা, কিন্তু একটি অর্জন' বলে অভিহিত করেন।
উন্নয়নশীল দেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো শনিবার (২৩ নভেম্বর) আলোচনার মাঝপথে বেরিয়ে আসে। ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জোটের চেয়ার সেড্রিক শুস্টার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমি বাড়িয়ে বলছি না—আমাদের দ্বীপগুলো ডুবছে! আমরা কীভাবে আমাদের দেশের নারী, পুরুষ, ও শিশুদের কাছে এমন দরিদ্র চুক্তি নিয়ে ফিরব?'
রোববার ভোর ৩টায় (গ্রিনিচ মান সময় শনিবার রাত ১১টা) কিছু পরিবর্তনের পর চুক্তি গৃহীত হয়। করতালি ও উল্লাসে চুক্তি সবাই সানন্দে গ্রহণ করলেও ভারতের বক্তব্যে অসন্তোষ স্পষ্ট ছিল। ভারতের প্রতিনিধি লীলা নন্দন বলেন, 'আমরা এটি মেনে নিতে পারি না... প্রস্তাবিত লক্ষ্য আমাদের জন্য কোনো সমাধান নয়। এটি আমাদের দেশের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু পদক্ষেপের উপযুক্ত নয়।'
চুক্তিতে ফসিল জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসের বিষয়টি দুর্বলভাবে উল্লেখ করায় সুইজারল্যান্ড, মালদ্বীপ, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর প্রতিনিধিরা আপত্তি জানান। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ২০২৫ সালের পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলো যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কম দায়ী, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের জন্য নতুন এই অর্থ প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি। অর্থ সরকারী অনুদান এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ থেকে আসবে।
চুক্তিতে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অনুদানের পাশাপাশি ২০৩৫ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন অর্থ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে এই তহবিলে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জমা দিচ্ছে ধনী দেশগুলো।
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির অংশ না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যা নতুন সংকট তৈরি করেছে।
ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক দেশ চেয়েছিল ফসিল জ্বালানির ব্যবহার কমানোর ব্যাপারে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হোক। তবে সৌদি আরবসহ তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর তীব্র বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি।
পরের বছর ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিতব্য কপ৩০ সম্মেলনে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আশা করা হচ্ছে।