জলবায়ু সংকট সমাধানের জন্য গাছ লাগানো 'একদম ফালতু ব্যাপার': বিল গেটস
ধনকুবের বিল গেটস জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকেন। যেমন, সংকটটি নিয়ে কাজ করা শুধু একটি কোম্পানিকেই তিনি প্রতিবছর প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য করে থাকেন।
তবে এই সহায়তা যেন বৈজ্ঞানিকভাবে কার্যকরী সব প্রযুক্তিতে ব্যয় করা হয়, সেটি নিশ্চিত করেন মাইক্রোসফটের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এমনকি বৃক্ষরোপণের মতো কার্যক্রমকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় খুব একটা কার্যকরী বলে মনে করেন না তিনি।
গতকাল (শুক্রবার) নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত 'নিউ ইয়র্ক টাইমস ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড সামিট' এ অংশ নিয়েছিলেন বিল গেটস। সেখানে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ক্লাইমওয়ার্কস নামের এক প্রতিষ্ঠান পরিবেশ থেকে সরাসরি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণের জন্য প্রযুক্তি তৈরি করে থাকে। আর এই কোম্পানিটির সবচেয়ে বড় ক্লায়েন্ট তিনি।
একইসাথে ক্লাইমওয়ার্কস বিল গেটসের পক্ষ থেকে নিন্মবিত্ত পরিবারের জন্য সোলার প্যানেল ও বৈদ্যুতিক হিট পাম্পেরও ব্যবস্থা করে থাকে। এরপরেও এমন সব কোম্পানির গৃহীত কিছু উদ্যোগকে জলবায়ু পরিবর্তনে খুব একটা কার্যকরী বলে মনে করেন না তিনি।
সাক্ষাতকার প্রদানের সময় বিল গেটস বলেন, "বৈজ্ঞানিকভাবে সম্পূর্ণরূপে প্রমাণিত নয়, এমন সব অ্যাপ্রোচকে আমি খুব একটা ব্যবহার করি না। যেমন, আমি বৃক্ষরোপণ করি না।"
গেটসের এমন মন্তব্য শুনে নিউ ইয়র্ক টাইমসের ক্লাইমেট করেসপন্ডেন্ট ডেভিড গেলেস বলেন, "অনেকেই তো মনে করে যে, আমরা যদি বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ করি, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে জলবায়ু সমস্যা সমাধানে কাজ করবে।"
জবাবে বিল গেটস বলেন, "জলবায়ু সংকট সমাধানের জন্য গাছ লাগানো 'একদম ফালতু ব্যাপার'। আমরা কি বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হতে চাই না-কি অজ্ঞ মানুষ হতে চাই?"
অবশ্য বিল গেটসের এমন দাবি একদম উড়িয়ে দেওয়ারও কোনো কারণ নেই। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা দেখেন যে, শুধু প্রচুর গাছ লাগানো হলেই সেটি বৈশ্বিক উষ্ণতা থামাতে বড় প্রভাব ফেলতে পারবে না। কারণ ঐ গাছগুলো বড় হতে এবং পার্থক্য তৈরি করার মতো যথেষ্ট কার্বন শোষণ করতে দীর্ঘ সময় লাগে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে এমআইটি ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ক্লাইমেট ইনটিরেকটিভের যৌথ এক গবেষণায় দেখা যায়, যদি এক ট্রিলিয়ন গাছও রোপণ করা হয় তবে সেটি ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা মাত্র ০.১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত কমাতে পারবে।
অন্যদিকে ক্লাইমওয়ার্কসের কার্বন ক্যাপচার প্ল্যান্টের মাধ্যমে ০.৪২ একর জমি ব্যবহার করে বছরে প্রায় ৪ হাজার টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ সম্ভব। যেটি ঐ একই জমিতে বৃক্ষরোপণের তুলনায় ১ হাজার ভাগ বেশি কার্যকরী।
এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় বিল গেটস জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রযুক্তি নির্ভরশীল পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। মাইক্রোসফটের এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিজের বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জলবায়ু নিয়ে কাজ করা ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম, এনার্জি ভেঞ্চার ও স্টার্টআপে সেই শর্তে বহু অর্থ প্রদান করে থাকেন।
বিল গেটস জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় সরকারকে সহায়ক নানা পলিসি প্রণয়নে উদ্যোগী হতে আহ্বান জানান। এরমধ্যে ভর্তুকি প্রদান, কার্বন ট্যাক্সের আদায়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
বিল গেটস বলেন, "আমি মনে করি, আমাদের জলবায়ু পরিবর্তে অনেক অর্থ ব্যয় করা উচিত। কার্বন ট্যাক্সের পরিমাণও অনেক বাড়ানো উচিত। রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় উদ্ভাবন ছাড়া এই সমস্যা মোকাবিলা করা অসম্ভব।"
বিল গেটস একটা দীর্ঘ সময় মাইক্রোসফটের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একাধারে ১৩ বছর যাবৎ তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি ছিলেন। বর্তমানে কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন মানবসেবায়।