৭ বছর ধরে ঝুলে আছে রেলের বগি তৈরির কারখানা নির্মাণ প্রকল্প
আমদানি-নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে ৭ বছর আগে নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলের ক্যারেজ বা বগি তৈরির কারখানা স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০ কোটি টাকার সেই প্রকল্প এখন ঝুলে আছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে।
দেশের চাহিদা ও দক্ষ জনবলের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশে বগি নির্মাণের বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ২০১৬ সালে রেলের ক্যারেজ বা বগি তৈরির জন্য সৈয়দপুরে কারখানা স্থাপনে ভারতের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার। একাধিকবার সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষে ২০১৮ সালের দিকে ক্যারেজ কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কশপের জন্য সৈয়দপুর রেল কারখানার মধ্যে নির্ধারিত স্থানে সাইনবোর্ড বসায় কর্তৃপক্ষ।
বগি নির্মাণ কারখানা প্রকল্প একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকার প্রাথমিকভাবে কারখানাটির জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাকি টাকা ঋণের জন্য চুক্তি হয় ভারতের সঙ্গে। কিন্তু বরাদ্দের সেই টাকা ও ঋণ না পাওয়ায় প্রকল্পের সাইনবোর্ড ছাড়া দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তারা বলছেন, কারখানাটি চালু হলে এখানে প্রতিমাসে ৫টি করে বগি নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা সূত্রে জানা গেছে, ১৮৭০ মিটার-গেজ বাষ্পচালিত লোকোমোটিভের মেরামত শেড হিসেবে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে ৮০০ একর জমির ওপর মিটার-গেজ ও ব্রড-গেজ কোচ ও ওয়াগন মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সৈয়দপুরে কারখানা স্থাপনের পর দেশে একমাত্র সেখানেই নতুন কোচ তৈরি হতো। আগে যে বগি তৈরি হতো, তা তৃতীয় শ্রেণি পর্যায়ের। তখন ভালো মানের কোচ তৈরির সুযোগ ছিল না। কিন্তু এসব কোচ তৈরিও বন্ধ হয় ১৯৯৩ সালে। ওই সময় সরকার রেল সংকোচন নীতির আওতায় ওই কোচ নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে। এরপর থেকে কোচ আমদানি শুরু হয়। এরমধ্যে রেলের যোগাযোগ পরিধি বেড়েছে। বেড়েছে আমদানির পরিমাণ।
চলতি বছরেও পদ্মা সেতু সংযোগ প্রকল্পের জন্য ৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে চীনের তৈরি মোট ১০০টি ব্রডগেজ কোচ ও বগি নিয়ে আসা হয়। প্রতিবছর গড়ে ৬০টি কোচ আমদানি করে বাংলাদেশ। ফলে দেশের অনেক বড় আকারের ব্যয় হচ্ছে এই আমদানির পেছনে।
নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আখতার হোসেন স্বপন বলেন, সৈয়দপুর রেল কারখানা শুধু উত্তরাঞ্চলের সম্পদ নয়, এটি দেশের সম্পদ। এই খাতকে বিকশিত করতে পারলে দেশেরই লাভ।
"আমরা দক্ষ জনশক্তি পাব। নিজেদের পণ্য নিজেরাই তৈরি করতে পারব। প্রয়োজনে রেলের বগি রপ্তানি করা হবে। দুনিয়া এখন বুহুমুখী উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অনেকে আবার পণ্য তৈরি করে জিম্মিদশা তৈরি করছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দেশে বগি নির্মাণ কারখানা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নতুন কোচ তৈরির কারখানা হলে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রাণের সঞ্চার আরও বৃদ্ধি পাবে," বলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো. কুদরত ই খুদা বলেন, "প্রথমে এই প্রকল্পের টোটাল ওয়ার্কশপের ফিজিবিলিটি স্টাডি দেওয়া হয়েছিল। এখন ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ ডিটেইল ডিজাইন আমাদের দপ্তর (রেল মন্ত্রণালয়) থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গেছে। কিন্তু এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ২০২২ সাল থেকে পড়ে আছে; এখনও অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন না হওয়ায় এখানে আমাদের কিছু করার নেই।"