মিরপুর ১ নাম্বার গোল চত্ত্বর বন্ধ, সড়কে অবস্থান নিয়েছে হাজারো গার্মেন্টস শ্রমিক
মঙ্গলবার শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার ও মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আজ রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর গোলচত্ত্বর সড়ক বন্ধ করে সেখানে অবস্থান নিয়েছে হাজারো গার্মেন্টস শ্রমিক।
আজ (১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে এ এলাকা সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে অনেক গার্মেন্টস শ্রমিক লাঠি হাতে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া, কয়েক হাজার শ্রমিক হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে খণ্ড মিছিল করছে।
এ মুহূর্তে মিরপুর ১০ থেকে মিরপুর ১২ পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শ্রমিকরা। আশেপাশেই অবরোধের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, গতকাল সরকারদলীয় লোকজন তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে ৩ জন শ্রমিক মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
তবে এ দাবির সত্যতা এখনও যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
স্বপ্না নামে একজন শ্রমিক বলেন, "আমাদের যদি আঘাত করে, তাহলে আমরা কী করতে পারি, এটা তো আপনারা বুঝেন।" তবে তিনি তার কারখানার নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
তার দাবি, মঙ্গলবার বহিরাগতদের হামলায় একজন গর্ভবতী শ্রমিক মারা গেছেন। তবে ওই শ্রমিকের নাম পরিচয় প্রকাশ করতে পারেননি তিনি।
ডিএমপির পল্লবী জোনের এসিস্ট্যান্ট কমিশনার শহিদুল আলম বুধবার টিবিএসকে বলেন, "একজন গর্ভবতী শ্রমিক সামান্য আহত হয়েছেন বলে জেনেছি। কেউ মারা যাওয়ার খবর আমাদের কাছে নেই। কেউ মারা গেলে তো এ খবর গোপন থাকার কথা নয়।"
তিনি বলেন, "তারাও এ বিষয়ে আমাদের কোন তথ্য দিতে পারছে না।"
'শ্রমিক হত্যার' সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি- এমন দাবিতে সাংবাদিকদের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শ্রমিকরা। সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা দিচ্ছেন তারা, হামলাও করছেন।
সকালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ৫টি গাড়ি টহল দিতে দেখা যায় মিরপুর ১ নম্বর গোলচত্ত্বরে।
ঘটনাস্থলের আশপাশে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও, শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরাতে দেখা যায়নি তাদেরকে।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।
একজন শ্রমিক জানান, আগামী বছর নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন হওয়ার কথা। এ জন্য চলতি মাসে তাদের গ্রেড ঠিক করার কথা থাকলেও মালিকপক্ষ গ্রেড পরিবর্তন ও বেতন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তারা (মালিকপক্ষ) আগের বেতন বহাল রেখেই গার্মেন্টস চালাতে চায়।
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে মিরপুরে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিক, আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে।
সকালে মিরপুরে রাস্তায় নেমে আসে ইপিলিয়ন গ্রুপের শতাধিক পোশাক শ্রমিক। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সকাল ১০টা থেকে পল্লবী মিরপুর সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে দুপুরের দিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী তাদের ওপর হামলা চালায় বলে দাবি তাদের। এরপরেই শুরু হয় সংঘর্ষ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সকালে পোশাক শ্রমিকরা রাস্তায় নামেন। তবে এসময় বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর অবরোধের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ কর্মীরা র্যালি বের করলে তাদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পোশাক শ্রমিক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ১৫টি বাস, ২টি মার্কেট, একটি ব্যাংকের শাখা ও ২টি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর হয়।