‘তামিমের অবসর নাটক, ব্যাটিং অর্ডারে অনেক পরিবর্তন ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে’
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ভালো দল- পারফরম্যান্সের কারণেই এই ট্যাগ গায়ে লেগেছিল। এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপ এবার ভারতে বলে বাংলাদেশকে রীতিমতো 'ফেবারিট' তকমা দিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারেরই বিশ্বাস ছিল, বাংলাদেশের এবার সেমি-ফাইনাল খেলার ভালো সম্ভাবনা আছে। শেষ চার মানে আগের সব সাফল্যকে ছাপিয়ে যাওয়া- কিন্তু আগের সাফল্য ছাপিয়ে যাওয়ার বদলে এবার হলো ভরাডুবি।
বিশ্বকাপের শেষ চার আসরেই বাংলাদেশ তিনটি করে ম্যাচ জিতেছে। এবার এখন পর্যন্ত আট ম্যাচে দুটিতে জয়, বাকি ম্যাচগুলোয় সামান্যতম লড়াইও করতে পারেনি সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন দলটি। প্রথম ম্যাচে জেতার পর টানা ছয় হার, সেমির স্বপ্ন আগেই শেষ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের জয়টি নিতান্তই সাস্ত্বনার। বিশ্বকাপের বাঁকে বাঁকে লক্ষ্য বদল হওয়া বাংলাদেশের একমাত্র চাওয়া এখন শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
এতো সম্ভাবনা জাগিয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভারতে যাওয়া দলটির কেন এমন হাল? অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করাসহ বিভিন্ন মেয়াদে জাতীয় দলে কোচিং করানো সারওয়ার ইমরান বলছেন, বিশ্বকাপের আগে তামিম ইকবালের অবসর নাটক, তার খেলা নিয়ে তৈরি হওয়া জটিল অবস্থা, বিশ্বকাপে ব্যাটিং অর্ডারে অনেক পরিবর্তন করাই কাল হয়েছে বাংলাদেশের। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় বাংলাদেশ দলের আরও অনেক সমস্যা নিয়েই কথা বলেছেন অভিজ্ঞ স্থানীয় এই কোচ।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন
এবার অনেক আশা ছিল। আমরা কোনোবার চারটা ম্যাচ জিতিনি, এবার সেই আশা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। দুটি ম্যাচ জিতেছি, প্রথমে একটা জিতলাম, শেষে আরেকটা। অন্য ম্যাচগুলো আমরা ভালো খেলি নাই। স্বাভাবিকভাবেই এবারের বিশ্বকাপ আমাদের ভালো যায়নি। সর্বশেষ চার বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ তিনটি করে ম্যাচ জিতেছে। এবার এখন পর্যন্ত দুটি, শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতা কঠিন। না জিতলে দুটি জয়, মানে অবনমন। সঙ্গে বাকি ম্যাচগুলোতে কোনো লড়াই-ই করতে না পারা, সব মিলিয়ে খুবই তিক্ত অভিজ্ঞতার একটা বিশ্বকাপ।
ব্যর্থতার কারণ
তামিম ইকবালের অবসর নাটক, ব্যাটিং অর্ডারে অনেক পরিবর্তন আনা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে আট নম্বরে খেলানো; ভালো করতে না পারার পেছনে এগুলো প্রধান কারণ। আরও অনেক কারণই আছে। কোচের ব্যাপারটি বলব, প্রতিবার কোচ আসার পর সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে টানাটানি করা, যেটা তামিমকে নিয়ে করা হয়েছে। আমাদের গোছালো একটা ওয়ানডে দল ছিল, যারা গত এক বছরে র্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বরে ছিল। এর সবই নষ্ট হয়ে গেছে কয়েকটা কারণে।
প্রথম কারণ তামিমের অবসর, যেটা নাটক ছিল; এ কারণে অবসর নাটক বলব আমি। পরে ফিরলো, কেউ বললো ফিট আছে, কেউ বললো ফিট নেই। কোচ যে অন্যকে দিয়ে তামিমকে প্রস্তাব দেয় আফগানিস্তানের বিপক্ষে না খেলা বা পরে ব্যাটিং করার, এটায় তামিমের প্রতিক্রিয়া ঠিক ছিল না। একটা ম্যাচ নিচে খেললে এমন কোনো ক্ষতি হতো না। দলের জন্য অনেক কিছুই করতে হয়। এসব মূলত প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্বকাপের আগে সাকিবের দেওয়া সাক্ষাৎকারের প্রভাব
সাকিবের দেওয়া সাক্ষাৎকার কোনো প্রভাব ফেলেনি। সে সোজা সাপ্টা কথা বলেছে। সে হাফ ফিট খেলোয়াড় নিতে চায়নি, এটায় সে ঠিক আছে। সিনিয়র ক্রিকেটাররা দেশের থেকে নিজেকে অনেক বড় মনে করে, বাংলাদেশ দলের চেয়ে নিজেকে বড় মনে করে, আমার এমনই মনে হয়। এ কারণেই এমন প্রতিক্রিয়া (তামিম প্রসঙ্গে) দেয় করে। অন্য কোনো দেশেই এমন হতো না। আর সাকিব-তামিম ছাড়াও কিন্তু অনেক ম্যাচ জিতেছি আমরা। নিউজিল্যান্ডে গিয়েও জিতেছি। আমাদের দলে শৃঙ্খলা একদমই নেই। শৃঙ্খলা আনতে হবে, এটা না থাকলে আমরা দল তৈরি করতে পারব না।
ব্যর্থতার কারণ জানেন না; সাকিব-হাথুরুসিংহের এমন মন্তব্যের প্রসঙ্গে
কী কারণে পারেনি, এটা না জানার কারণ নেই। ব্যাটিংয়ে অদল-বদল তো সাকিব আর হাথুরুসিংহেই করেছে। শুরুতে বল জোরে আসে, সুইং করে, এটা সবাই জানে। এখানে বিশেষজ্ঞ ওপেনার। আবার ওয়ান ডাউনে শান্ত এতো রান করলো, সে কেন চারে খেলবে। এগুলো ফাজলামি নাকি! আমি মিরাজকে ওপেনার (এশিয়া কাপে) বানিয়ে দিলাম, যে ওপেনার ছিল সে নিচে গিয়ে খেলছে। এভাবে হয় নাকি! টি-টোয়েন্টি হলে আমি এটা মানতাম। এটা তো তা না, ৫০ ওভারের ম্যাচ। এখানে টেস্টের ধাঁচ আছে, আবার টি-টোয়েন্টিরও ধাঁচ আছে।