দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসরায়েলি দূতাবাস বন্ধের প্রস্তাবে ক্ষমতাসীনদেরও সমর্থন
দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টে ইসরায়েলি দূতাবাস বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে একটি সংসদীয় প্রস্তাব তোলা হবে। দেশটির ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) জনিয়েছে, তারাও এই প্রস্তাবে সমর্থন করবে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এএনসি'র পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এমন সুস্পষ্ট অবস্থানের কথা জানানো হয়। একইসাথে ইসরায়েলের প্রতি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি দেশটির রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসার যে আহ্বান, সেটিকেও স্বাগত জানিয়েছে দলটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, "দখলকৃত ফিলিস্তিনে নৃশংসতা চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসরায়েলি দুতাবাস বন্ধের প্রস্তাবে সমর্থন জানাবে। একইসাথে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত আমরা ইসরায়েলের সাথে সমস্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করার আহ্বান জানাই।"
গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশটির বিরোধী দল ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটারস (ইএফএফ) সংসদে প্রস্তাবটি পেশ করে। একইসাথে চলমান যুদ্ধে গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে ইসরায়েলের সাথে সমস্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। আজ (শুক্রবার) প্রস্তাবটির ওপর ভোটাভুটির কথা রয়েছে।
ইএফএফ কর্তৃক পেশ করা প্রস্তাবটির কার্যকারিতা পুরোটাই নির্ভর করছে রামাফোসা নেতৃত্বাধীন এএনসি সরকারের ওপর। তবে সরকার দলীয় নেতা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারাও গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ করে তেল আবিবের নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। একইসাথে আন্তর্জাতিক আদালতকে যুদ্ধাপরাধের সংঘটিত হচ্ছে কি-না, ঐ বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার জোরালো সমর্থন বহু আগের; বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় থেকেই। আর এই লড়াইয়ের নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিল এএনসি। ফিলিস্তিনিদের দুর্দশাকে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের অধীনে কৃষ্ণাঙ্গদের যে নিপীড়ন ও নির্যাতনের ইতিহাস, সেটির সাথে তুলনা করে থাকেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৯৭ সালে বলেন, "আমরা খুব ভালো করেই জানি যে, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা অসম্পূর্ণ।"
অন্যদিকে গত বুধবার কাতার সফরের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসা বলেন, "বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতোই আমরা ইসরায়েলি সরকারের পদক্ষেপগুলিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তদন্তের আহ্বান করছি।"
রামাফোসা বলেন, "আমরা এমন আহ্বান জানাচ্ছি কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তবে আমরা অবশই হামাসের কার্যক্রমকে সমর্থন করি না। কিন্তু আমরা বর্তমানে চলমান পদক্ষেপের নিন্দা করি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দ্বারা তদন্তের দাবি জানাই।"
ইসরায়েল ও গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাসের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ এক মাসেরও বেশি সময় অতিক্রম করেছে। গত ৮ অক্টোবর ইসরায়েলের হামাসের হামলায় ১৪০০ জন নিহত হয়েছে। জিম্মি করা হয়েছে প্রায় ২৪০ জনকে।
অন্যদিকে হামাসের হামলার পাল্টা জবাবে ইসরায়েলের হামালায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১১,৩০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই শিশু।
এ সম্পর্কে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যান্ডর আল-জাজিরাকে বলেন, "ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় 'মানবতার বিরুদ্ধে করা প্রকৃত অপরাধ' বন্ধ করতে হবে।"
গাজায় চলমান সহিংসতা নিয়ে নালেদি প্যান্ডর আরও বলেন, "আমরা ভয়াভয়তা দেখে আতঙ্কিত। দিন দিন এটি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমি মনে করি, ফিলিস্তিনে নাগরিকদের প্রতি ইসরায়েলের চালানো ভয়াবহতা বিশ্ব দেখেছে। একইসাথে এটি বন্ধ করার জন্য বিশ্ব পরাশক্তিদের ভূমিকা রাখার সময় এসেছে।"
চলতি মাসের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েল থেকে নিজেদের কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। একইসাথে ২০১৮ সাল থেকে ইসরায়েলে দেশটির কোনও রাষ্ট্রদূতও নেই।