‘স্বস্তি’ নামল বিধ্বস্ত গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে প্রথম যুদ্ধবিরতিতে
কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে চারদিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। টানা সাত সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণের পর প্রথম বিরতিতে স্বস্তি মিলেছে ফিলিস্তিনিদের।
আজ শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৭ টা থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। চার দিনের এই বিরতির মধ্যে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ১৫০ জন ফিলিস্তিনির মুক্তির বিনিময়ে ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস।
আজ স্থানীয় সময় বিকেলে প্রথম ধাপে ৩৯ জন ফিলিস্তিনি ও ১৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগের কয়েক ঘণ্টায় গাজা উপত্যকাজুড়ে ব্যাপক বোমা হামলা চালায় দখলদার ইসরায়েল।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম চ্যানেল ১৩-এর সাংবাদিক আলমগ বোকার অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে তাদের হামলায় উত্তর গাজা উপত্যকায় বেশ কয়েকটি ভবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ভিডিওটিতে দূর থেকে ইসরায়েলি সেনাদের উল্লাস করতে দেখা যায়।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজউম জানান, বিরতিটি ফিলিস্তিনিদের জন্য দারুণ স্বস্তির বিষয়। তারা গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থেকে নিরাপদ থাকতে পেরে আনন্দিত।
তিনি বলেন, 'যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রথমবারের মতো আমরা ইসরায়েলি ড্রোনের শব্দ শুনতে পাইনি। মানুষ আশা করে এই স্বল্পমেয়াদী বিরতি দীর্ঘ যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করবে।'
ব্যাপক সহায়তা জরুরি
চুক্তির অধীনে গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সহায়তা ব্যাপকভাবে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের ফলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে উপত্যকাটি সম্পূর্ণ ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে রয়েছে।
মিসর বলেছে যে চার দিনে গাজায় প্রতিদিন এক লাখ ৩০ হাজার লিটার ডিজেল ও চার ট্রাক গ্যাস সরবরাহ করা হবে। সামগ্রিকভাবে প্রতিদিন ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ২০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে।
রাফা সীমান্ত ক্রসিং থেকে আল জাজিরার ইয়োমনা এলসাইদ জানিয়েছেন, জ্বালানি ও গ্যাস বহনকারী ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
দোহায় কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, গাজায় অতিরিক্ত সহায়তা প্রবেশ করা শুরু করবে এবং বয়স্ক নারীসহ প্রথম দফায় বন্দিদের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় মুক্তি দেওয়া হবে। চারদিনে হামাস ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে।
যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করা হবে
দোহা থেকে আল জাজিরার জেমস বেস জানিয়েছেন, সম্ভাব্য লঙ্ঘনের বিষয়টি বিবেচনায় যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করবে কাতার।
তিনি বলেন, 'দোহায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি রুম রয়েছে, যেখান থেকে তারা গাজা থেকে বাস্তবিক তথ্যগুলো পাবে।'
তিনি যোগ করেন, 'এ সময়ের মধ্যে কোনো লঙ্ঘন চোখে পড়লে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে তারা সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবে।
'আমি ঘরে ফিরতে চাই'
যুদ্ধবিরতি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে কি না তা দেখার জন্য তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ির দিকে ছুটে যেতে শুরু করেন।
এক ব্যক্তি বলেন, 'আমি বাড়ি যেতে চাই এবং এটি ধ্বংস হয়ে গেলেও আমি সেখানে থাকতে চাই। আমি সেখানে মরতে চাই।'
এক নারী বলেন, 'আমি প্রার্থনা করি এই দিনগুলো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠুক।
তবে ইসরায়েল বলেছে, তাদের সেনারা যুদ্ধবিরতি রেখায় অবস্থান করবে এবং ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজার দিকে যেতে দেবে না।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকষ্মিক হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হয়। হামাসের হাতে জিম্মি হয় ২৪০ জনেরও বেশি মানুষ। জবাবে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনীও। এ হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।