জাতীয় পার্টি নাটক চলছে, সময় শেষ হলেও মনোনয়ন ফরম তোলেননি রওশন এরশাদ
দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ফরম বিতরণ শেষ করে শুক্রবার থেকে বাছাইপর্ব শুরু করেছে জাতীয় পার্টি। এরইমধ্যে আলোচনায় এসেছে দলের মধ্যকার বিরোধ। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও মনোনয়ন ফরম তোলেননি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
রওশন এরশাদের পাশাপাশি তার পন্থীদের কেউই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।
এদিকে শুক্রবার সকাল ১১টা থেকেই শুরু হয়েছে মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ।
রওশন এরশাদ পন্থীরা নির্বাচনে কোন পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করবেন সে বিষয়ে আজ একটি মিটিং এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
তারা আরও জানান, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর সাথে বসবেন।
এদিকে পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু শুক্রবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন," রওশন এরশাদের জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারিত নেই। তিনি যখন চাইবেন তাকে মনোনয়ন ফরম দেওয়া হবে। যদি তিনি চান, মনোনয়ন ফরম তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।"
সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা টিবিএসকে বলেন, "রওশন এরশাদসহ আমাদের গ্রুপের কেউই মনোনয়ন ফরম নেয়নি। আমরা এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি কোনভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। আজ (শনিবার) দলের নেতা রওশন এরশাদসহ আমাদের একটি মিটিং আছে সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল আলম টিবিএসকে বলেন, "আমরা শুক্রবার পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছিলাম, কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও রওশন এরশাদ পন্থী কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেনি। আর সময় বাড়ানো হবে না। শুক্রবার ১৫টি সহ মোট ১৭৫২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "তাদের (রওশন এরশাদ পন্থী নেতাদের) সাথে আলোচনা চলছে, কিন্তু এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি হাই কমান্ড। দলের শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই হবে।"
শুক্রবার মুজিবুল হক চুন্নু গণমাধ্যমকে বলেন, "আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ চেয়েছি এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশ্বাসও পেয়েছি।"
মুজিবুল পুনর্ব্যক্ত করেন, জাতীয় পার্টির মধ্যে কোন দলাদলি নেই, দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরই একমাত্র নেতা এবং বাকি সবাই এরশাদকে সমর্থন করে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, "জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠায় রওশন এরশাদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিলে আমরা সম্ভাব্য সব উপায়ে আমাদের সমর্থন দেব।" তিনি আরও বলেন, রওশন এরশাদ, বা সাদ এরশাদ কেউই এখনো মনোনয়ন ফরম নেননি।
মুজিবুল আরও বলেন, তিনি শুক্রবার রওশন এরশাদের কাছ থেকে একটি ফোনকল পেয়েছিলেন; সেখানে তিনি পরের দিন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারেন বলে জানান।
হরতাল-অবরোধের কারণে প্রার্থীদের ঢাকায় আসতে সমস্যা হওয়ায় জাতীয় পার্টি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময়সীমা একদিন বাড়িয়ে শুক্রবার নির্ধারণ করে।
মুজিবুল হক গণমাধ্যমকে জানান, প্রায় সব আসনেই দলটি একাধিক মনোনয়ন ফরম বিতরণ করেছে এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার চলছে। চূড়ান্ত বাছাই তালিকা ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
"দলীয় সদস্যপদের বয়স এবং নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তার প্রার্থীদের ভিত্তিতে মনোনীত করা হবে। মনোনয়ন বোর্ডের সুপারিশ জাতীয় পার্টির চেয়ারপারসন জি এম কাদেরকে জানানো হবে। তিনি মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বা প্রয়োজনে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেন," বলেন তিনি।
দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করলে বা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে কাউকে দলে থাকতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন মুজিবুল।
শুক্রবার জাতীয় পার্টির মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়।
বোর্ডে ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট সদস্য।