চুরি নয়, আশ্রয়ের সন্ধানে ঢুকেছিল চোর!
দেশের বর্তমান মহামারিতে আগের সেই আকর্ষণ অনেকটাই হারিয়েছে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের ৮৯ নং সড়ক। এখানে অবস্থিত নামীদামী ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকানে আর ক্রেতার ভিড় নেই। নেই বিকেল বেলা কফিশপগুলোয় অফিস ফেরতা লোকজনের আড্ডাও। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটাই এখন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে গেছে, যার প্রভাবে শুনশান নীরবতায় পরিণত হয়েছে এ এলাকাটি।
এই প্রাণচাঞ্চল্যহীন পরিবেশ অন্যদের দূরে ঠেললেও মাসুম নামের এক ব্যক্তিকে ঠিকই আকর্ষণ করে। তিনদিন আগে সে এই সড়কের একটি বাড়ির আলো তিনদিন ধরে নেভানো থাকা দেখে বুঝতে পারে বাড়িটির বাসিন্দারা কেউ নেই।
পুলিশি সূত্র জানায়, মাসুম একজন গৃহহীন। সে নিজের থাকার জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় আছে এমন একটি আরামদায়ক জায়গার সন্ধানে ছিল। কিন্তু, তার এই স্বপ্নের ভুবনে বিচরণ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। গতকাল শনিবার রাতেই পুলিশ হানা দিলে অবসান ঘটে তার স্বল্প বাসের।
ফ্লাটটির মালিক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, রিক হুবার্ড এবং তার স্ত্রী ক্রিস হুবার্ড। নর্থ এন্ড কফি রোস্টারস কফিশপের মালিক তারা। নিরাপত্তা ক্যামেরায় যুক্তরাষ্ট্রে বসেই দেখতে পান তাদের বাড়িতে কেউ একজন হাঁটাচলা করছে। পরিচিত একজনকে খোঁজ নিয়ে দেখার অনুরোধ করেন হুবার্ড দম্পতি।
ওই ব্যক্তি মারফত খবর পেয়েই বাড়িতে ঢুকে গুলশান পুলিশ। বাড়ির ভেতরে পরিস্কার কারো উপস্থিতির আলামত দেখতে পায় তারা। খাবার টেবিলে পড়ে আছে অবশিষ্ট খাবার, ওয়াইনের বোতল। কিন্তু ধারে কাছে কেউ নেই।
বাড়িময় জোর তল্লাশির পর মাসুমকে বাথরুমে লুকানো অবস্থায় আবিষ্কার করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ ও মানুষের ভিড় দেখেও মাসুমকে শান্তই দেখাচ্ছিল, কিঞ্চিৎ মাতালও ছিল সে, পুলিশ জানায়।
গুলশান থানার পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, 'মাসুম পেশায় একজন চোর। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তার মানসিক সমস্যা থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে। এর আগে একটি বাড়ি থেকে মালামাল চুরির সময় তার নাচের ভিডিও আমরা দেখেছি। চুরির দায়ে আগেও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।'
এদিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশি জেরার মুখে মাসুম জানায়, সম্প্রতি সে ভারতের একটি কারাগারে ৯০ দিন সাজাও ভোগ করেছে। তবে তার অন্যান্য কথাবার্তা ছিল এলোমেলো, অসংলগ্ন।
কথাবার্তা অসামাঞ্জসপূর্ণ হলেও গুলশানের ফ্লাটটি থেকে সে কোনো কিছুই সরায়নি।
গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক মোফাজ্জল হোসাইন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম জানিয়েছে বাড়িতে সে প্রচুর খাবার পেয়ে, খেয়েছে। মাসুম মদপানের কথাও স্বীকার করেছে।
ফ্লাটের মালিক অভিযোগ দায়ের করতে রাজি না হওয়ায় পুলিশ মাসুমকে গত মার্চে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার সিদ্ধান্ত নেয়।