লঞ্চের পাখা তৈরিতে সেরা বড়ইতলা; কিন্তু লঞ্চ কোথায়?
তখনো বুড়িগঙ্গার পানিতে শুশুক খেলা করত। খোরশেদ আলম ১২ বছরের কিশোর। নদীর ওপারে কালীগঞ্জে মেরিন পার্টস তৈরি ও সারাইয়ের কারখানা বাড়ছিল দিনদিন। তুলনায় লোক ছিল কম, কাজ ছিল বেশি — তাই রাতদিন একাকার। তিন বছর কেবল পেটে-ভাতে কাজ করেছেন খোরশেদ, তারপর পেয়েছেন ১৫ টাকা মাইনা। আশির দশকের কথা। স্টিলবডি লঞ্চের ব্যবহার বেড়ে যায়। দোতলা তো বটেই, তিনতলা লঞ্চও দেখা যেতে থাকে। সদরঘাটে ভবন সম্প্রসারিত হয়। চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলায় নতুন নতুন ঘাট বসে।
হক সাহেবের ডক, সাত্তার মিয়ার ডকে তুমুল ব্যস্ততা । কাজের ফাঁকে ফুরসত মেলা ভার। নতুন নতুন লঞ্চ তৈরি হয় বা পুরোনো লঞ্চ সারাই। লোহা পেটানোর শব্দ পাওয়া যায় আর ওয়েল্ডিংয়ের নীল ফুলকি ঝরার খেলাও দেখা যায় এপার মানে শ্যামবাজার, লালকুঠি থেকে।
ডকগুলোর ধার ঘেষে বড়ইতলায় বসে ওয়ার্কশপ। এগুলোতে পুলি, আংটা, গিয়ার বক্স, হুইল, বেল, হর্ন, চেইন, শ্যাফট তৈরি করা হয়। মোল্ডিং বা ছাঁচ তৈরির এবং ঢালাইয়ের কারখানাও তৈরি হয় কয়েকটি । লঞ্চের পাখা বা প্রপেলার, হাওয়ার পাইপ, ডিজেলের পাইপ, নোঙর ইত্যাদি ঢাউস সব যন্ত্রপাতি ঢালাই হয় এগুলোতে।
ঢালাই কারখানা
মো. নাদিমের বয়স এখন ৩৬। কালীগঞ্জের লোকাল। ফুপার দোকানে পাঁচবছর কাজ শিখেছেন নাদিম। তার নিজের কারখানার বয়স ১৩। নাদিম বলেন, 'এটা আমাদের জাত ব্যবসা; ছাঁচ তৈরি আর ঢালাই। কালীগঞ্জে এখন ১৫টি ঢালাই কারখানা আছে, তার মধ্যে নয়টিই আমাদের পরিবারের। সারাদেশে আমাদের কালীগঞ্জের তথা এ বড়ইতলার সমকক্ষ কেউ নেই। আমরা কাজ করি নিখুঁত।'
নাদিমের ছাঁচ তৈরির কারখানা বা ভাট্টিতে নতুন-পুরোনো সবরকম মেরিন পার্টস পাওয়া যায়। পুরোনোগুলো আসে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিদেশি জাহাজ ভাঙার পর। এগুলোর মধ্যে টেলিগ্রাফ কয়, সার্চলাইট, হর্ন, কম্পাস, সারেংয়ের হুইল উল্লেখযোগ্য। সব অবশ্য আনকোরা মেলে না।
চুরাশি সালে জন্ম আসাদুল হক টিপুর। বাবা ডক সারেং হিসাবে কাজ করছেন ৪০ বছর হয়। টিপু ১৫ বছর বয়সে চলে আসেন বাবার কাছে। প্রথমে ওয়েল্ডিং বা ঝালাইয়ের কাজে লাগেন। তবে ঝালাইয়ের কাজ করতে ভালো লাগত না তার। চোখে একবার শক খেলে পুরোদিন চোখ জ্বালাপোড়া করত। পরে বাবা এক বন্ধুর লেদ মেশিন কারখানায় কাজ শিখতে পাঠান। সে কাজে টিপু আনন্দ পেতে থাকে। ধাতু কেটে, ঘষে, ছিদ্র করে নতুন নতুন যন্ত্রাংশ তৈরি করার মধ্যে সে সৃষ্টির আনন্দ পায়। পাঁচ বছরের মধ্যে কাজটা তুলে নেয় টিপু। পরে আরেক কারখানায় আরও কিছুদিন চাকরি; শেষে নিজের এই ওয়ার্কশপ বড়ইতলা ঢোকার মুখেই।
ডিসিসি মার্কেটেও যায়
নব্বইয়ের দশকে যাত্রীবাহী লঞ্চের সংখ্যা আরও বাড়ে। বড় বড় নেভিগেশন কোম্পানি লঞ্চ নামায়। বড়ইতলায় ততদিনে দড়ির আড়ত, নোঙরের আর শিকলের দোকানও বসে গেছে। কাঠের সিঁড়ি, পিন (যার সঙ্গে বোটের দড়ি বাঁধা হয়) ও হ্যামারের দোকান অবশ্য আগে থেকেই ছিল।
সালাম মিয়ার দড়ির আড়তে কম করেও ২০ রকমের দড়ি দেখলাম। দড়িগুলো নাইলনের, পাটের, ঝুট কাপড়ের হয়ে থাকে। সোয়া পাঁচ ইঞ্চি থেকে সাড়ে বারো ইঞ্চি ব্যাসের দড়ি আছে। শামীম এন্টারপ্রাইজে দুটি নতুন টেলিগ্রাফ কয়ের গায়ে স্লো, হাফ, স্টপ লেখা। ঘড়ির মতো কাঁটাও আছে। শামীম বললেন, 'এগুলো নৌযানের গতি নির্দেশক। এখানেই তৈরি করা হয়েছে। আমাদের তৈরি কিছু পার্টস বিদেশে যেমন জাপানেও যায়।' পুরানো জাহাজ থেকে আনা কাঠের হুইল, কম্পাস আর ঘড়িও দেখা গেল। এগুলো গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে বিক্রির জন্য যায়।
নাদিমের ভাট্টিতে যাওয়ার পথে আরও পেয়েছিলাম বাতি সারাইকারি সাজেদুল আলমকে। দুটো পুরোনো ঢাউস লাইট সারাইয়ের কাজ করছিলেন তখন। হাউজসহ প্রতিটির ওজন প্রায় ৪০ কেজি হবে। জাপানি লাইট ভালো বলে জানালেন সাজেদুল। ইতোমধ্যে একটি লাইটে স্ট্যান্ড যোগ করে আর রং মাখিয়ে নতুন করে তুলেছেন । পারা নামক ভারী কাচও সেট করে দিয়েছেন। ২০ হাজার টাকা দাম পড়েছে এর। এসব লাইটের বাতির দৈর্ঘ্য এক ফুট, দেড় ফুটও হয়।
লঞ্চ ব্যবসার স্বর্ণযুগ
দুই হাজার সালের পর থেকে ২০ বছর ছিল লঞ্চ ব্যবসার স্বর্ণযুগ। এটা সদরঘাটের গতরের বহর দেখেও বোঝা যায়। শুধু প্রবেশ দরজাই আছে ডজনখানেক। পন্টুনসংখ্যা ৩৫টি অতিক্রম করবে। পন্টুনে ভিড়ে থাকা লঞ্চগুলোর কোনো কোনোটি ছয়তলা সমান উঁচু। কিন্তু পদ্মা সেতু হওয়ার পর চিত্রটা দ্রুতই পাল্টে যাচ্ছে।
নৌযান অনেক রকমের হয়। জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার, কেবিন ক্রুজার, রেসকিউ বোট, স্পিডবোট, বলগেট, লাইটার ভেসেল, প্রমোদতরী, গান বোট, সমুদ্রগামী নৌযান, ফেরি ইত্যাদি। প্রায় সবগুলোরই পাখা আছে। সাধারণত দুটি জলে থাকে, একটি থাকে বাড়তি। যত বড় নৌযান, তত বড় পাখা। তবে ছোট পাখা বানান না নাদিম। বললেন, 'ধোলাইখালে কিছু ছোট ছোট পাখা বানানো হয়। পিতল গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে ছোট ছোট পাখা তৈরি হয়। আমাদের লাগে ভারী পদার্থ।'
ফুপার বয়স হয়ে গিয়েছিল। তিনি কারখানাটা নাদিমকে চালাতে দেন। বছর কয়েক পর নাদিমের আরও বড় জায়গা দরকার হয়। তিনি এখনকার জায়গায় উঠে আসেন। ছয় কাঠার এ জায়গার ভাড়া মাসে ৭০ হাজার টাকা। ১৩ জন শ্রমিককে সপ্তাহ হিসাবে মজুরি দিতে হয়। মাসে আড়াই লাখ টাকা খরচ আছে। একটি ৭৪ ইঞ্চি পাখা তিন লাখ টাকায় বিক্রি হয়। নাদিম প্রতি কেজিতে ২৫–৩০ টাকা করে পান।
এখন নাদিমদের দুর্দিন। কাজ কিছু আছে এখনো, তবে কতদিন আর থাকবে বলা যাচ্ছে না। লঞ্চমালিকেরা ট্রিপ প্রতি মোটে ৫০ হাজার বা লাখ টাকা আয় করতে পারছেন। অথচ খরচই আছে তার চেয়ে বেশি। মালিকেরা ভাঙারি হিসাবে লঞ্চ বিক্রি করে দিচ্ছেন। পদ্মা সেতু দিয়ে উপকার হচ্ছে অনেক, কিন্তু নাদিমদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে দিনে দিনে। তিনি বললেন, 'দক্ষিণাঞ্চলের পণ্যগুলো (ধান, সুপারি, কাঠ, পান ইত্যাদি) নৌপথে আনা-নেওয়া করা হলে রাস্তায় জট কমবে, জ্বালানি কম পুড়বে এবং আমাদের বেঁচে থাকা সহজ হবে।'
নাদিমের রেকর্ড
'আমি ১২০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের পাখাও বানিয়েছি। এটা বড়ইতলার রেকর্ড। থাইল্যান্ড থেকে আনা একটি ফিশিং বোটে ছিল পাখাটি। সেটি দেখে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী আমাকে হুবহু একটা তৈরি করে দিতে বলেন। আমি সাহস করে কাজটা ধরে ফেললাম। আসলে এটা তো শারীরিক পরিশ্রমের কাজ। বলতে গেলে আমরা আগুনের ওপর বসে থাকি। যত বড় পাখা, তত গরম আর তত ঝুঁকি।'
৫০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের চেয়ে ছোট পাখা নাদিমের কারখানায় হয় না। এখন ৭৪ ইঞ্চি দীর্ঘ ও ১৯ ইঞ্চি প্রস্থের একটি পাখা বানাচ্ছেন তিনি। ওতে পিতল লাগছে ৪০০ কেজি। সীতাকুণ্ডের ভাঙা জাহাজের পিতল বেচারাম দেউড়ি বা ধোলাইখালে পাওয়া যায়। একেকটি পিতল খণ্ড ২৫ কেজি, ৫০ কেজি বা ১০০ কেজি হয়। গরমে আঁচিয়ে নিয়ে হ্যামার দিয়ে পেটালে এগুলো ভেঙে টুকরা টুকরা হয়। ফরমায়েশ পাওয়ার পর তারা ঘইড়া রেডি করেন।
'এ ঘইড়াটা কী দিয়ে তৈরি বলতে পারব না, তবে হাজার ডিগ্রি টেম্পারেচারেও গলে না। চীন থেকে এটা আনিয়েছি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে। ঝুট কাপড়ের ওপর জ্বালানি তেল ঢেলে দিয়ে আগুন জ্বালাই। তারপর পিতলের টুকরাসহ ঘইড়াটা আগুনের গর্তে ঢুকিয়ে দিই। পাঁচ ঘণ্টা পর পিতল গলে তরল হয়ে যায়।'
আগে থেকেই ছাঁচ তৈরি করা থাকে। গনগনে তরল পিতল আট–দশজন মিলে লম্বা দণ্ডওয়ালা চিমটা দিয়ে উঠিয়ে এনে ছাঁচের ওপর ঢেলে দেন। তারপর ১৮–২০ ঘণ্টা বালি দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। পরের দিন ওয়ার্কশপ মালিক বা ফোরম্যানের কাছে মাল বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
'ওস্তাদ দোয়া করবেন'
খোরশেদ আলম এখন টিপুর ওয়ার্কশপের ফোরম্যান। খোরশেদ ঝালাই, ছাঁচ গড়ার কাজ জানেন; লেদ মেশিনে হয় এমন সব যন্ত্রাংশ তৈরি করতে পারেন। তার কাছে জানলাম, ঝালাইকার বা ওয়েল্ডারদের সিঙ্গাপুর, দুবাই, কোরিয়ায় ভালো সুযোগ আছে। ইউরোপের দেশগুলোতেও চাহিদা আছে। "সেখানে টাকা তো আছেই, সম্মানও পাওয়া যায়। অনেকে দু–চার মাসের জন্য আসে, কাজ শিখে বিদেশ যাবে বলে। তারপর এক সকালে চমকে দিয়ে বলে, 'ওস্তাদ, পরশু ফ্লাইট, দোয়া করবেন।'" খোরশেদের এটাই বড় প্রাপ্তি। নিজের উন্নতি হয়নি, কিন্তু সাগরেদরা বিদেশে ভালো উপার্জন করছে।
নতুন ইঞ্জিন নতুন পাখা
টিপুরও দুর্ভাবনা বাড়ছে। তার মাসে খরচ আছে দেড় লাখ। টিপু ওয়াটার পাম্প, এয়ার পাম্প, বিয়ারিং, গিয়ার, পিনিয়াম তৈরির কাজও করেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এখন এর বিকল্প নেই। তবে পাখা বা প্রপেলার তৈরিই তার প্রধান কাজ। পিতল এবং লোহার দুই ধরনের পাখারই তিনি ফরমায়েশ নেন। ৫০ ইঞ্চি, ৭২ ইঞ্চি, ৮৪ ইঞ্চি মায় ১১০ ইঞ্চি দীর্ঘ পাখাও তিনি সরবরাহ করেছেন। বরিশাল রুটে চলাচলকারী সুন্দরবন-১৪, সুন্দরবন-১৬, পারাবত-১৮ বা কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে ১১০ ইঞ্চির পাখা ব্যবহৃত হয়।
বিদেশি জাহাজ থেকে পাওয়া পাখা আমাদের লঞ্চগুলোতে কাজে লাগানো যায় না। সেগুলো তখন ভাঙারি। টিপু কারণ জানালেন, ইঞ্জিন ও গিয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকতে হয় পাখার। ইঞ্জিন আর পাখার মাঝখানে থাকে গিয়ার। 'এখনো আমরা ব্যবসা ধরে রাখতে পারছি তার বড় কারণ, প্রতি মাসেই নতুন ইঞ্জিন বাজারে আসে। নতুন ইঞ্জিন কোনো নৌযানে লাগানো হলে আমরা পাখা তৈরির ফরমায়েশ পাই।'
পাখা ভাঙে
পিতলের পাখার অসুবিধা না হলেও লোহার পাখা লোনা জলে বেশিদিন টেকে না। তবে পিতলের দাম আবার বেশি। যেমন ৭৪ ইঞ্চি একটি পিতলের পাখার দাম যেখানে তিন লাখ টাকা সেখানে লোহার পাখা দুই লাখ ২০ হাজার টাকায় পাওয়া যায়।
ঢালাই কারখানা থেকে পাখা নিয়ে আসার পর প্রথমে শ্যাফট (যা দিয়ে গিয়ারের সঙ্গে যুক্ত হয় পাখা) ঢোকানোর গর্ত তৈরি করা হয়। পরে বাড়তি অংশ কেটে বাদ দিয়ে সবগুলো পাতার মাপ সমান করা হয়। পাতার মাপ একটি আরকেটির থেকে ভিন্ন হলে বা ওজনে কম-বেশি হলে লঞ্চ কাঁপবে, এগোতে চাইবে না। শেষে ঘষে পাতাগুলো মসৃণ করতে হয়। সব মিলিয়ে মাঝারি মাপের একটি পাখা তৈরিতে ৪–৫ দিন লাগে।
লঞ্চের পাখা ভেঙে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। টিপু বললেন, 'পানির নিচে অনেক কিছু থাকে যা আমরা দেখতে পাই না। এমনকি একটি কলাগাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগেও পাখা ভেঙে যেতে পারে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রী পারাপার করত ফারহান ক্রুজ। ১০ দিনে এর ১০টি পাখা ভাঙল। আমাকে কারণ অনুসন্ধান করতে পাঠানো হলো। আমি শত খুঁজেও কোনো কারণ বের করতে পারিনি। ডুবো চরের সঙ্গে ধাক্কা লেগেও কিন্তু পাখা ভাঙে।'
আশা কি আছে?
টিপুর ওয়ার্কশপের সামনে বড় খোলা জায়গা। দুটো করে চারটে রেল ট্র্যাক বসানো সেখানে, স্থানীয়রা বলেন সিলাই। এসব ট্র্যাকে লঞ্চ তুলে তৈরি, রঙ করা বা সারাইয়ের কাজ করা হয়। টিপু গড়তে দেখেছেন বেশি। তবে পদ্মা সেতু হওয়ার পর দেখলেন সিলাইগুলোতে ভাঙার কাজ বাড়তে থাকল।
পাড়ে ভিড়ে থাকা তিনতলা সমান উঁচু একটি লঞ্চ দেখিয়ে বললেন, 'এটাও ভাঙার জন্য আনা হয়েছে। এখন মাসে গুটিকয় বলগেট আর মালবাহী জাহাজ সিলাইয়ে ওঠে সারানো বা রঙ করার জন্য।' দুঃখ করে আরও বললেন, 'ডকের কাজে দক্ষ লোক হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে লোক আর তৈরি হচ্ছে না।' শেষে জানতে চাইলাম, আপনার ছেলেকে এ কাজে আনবেন? টিপু উত্তর দিলেন, 'নাহ্! ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে অফিসার বানাব। এখানে তো নিজেই টিকতে পারছি না।'
ঢালাই কারখানা, লেদ মেশিন ওয়ার্কশপ এবং জাহাজ-যন্ত্রপাতির দোকান মিলিয়ে দেড় থেকে থেকে দুইশ দোকান আছে বড়ইতলায়। একসময় কারখানা ও ওয়ার্কশপগুলো রাত ১২টার আগে বন্ধ হতো না। এখন দুপুর ১২টায়ও চায়ের দোকানের টিভিতে নায়ক মান্নার ছবি দেখতে ভিড় জমে থাকে। তেলঘাট আর বড়ইতলার ডকগুলোতে পাঁচ বছর আগের যেকোনো দিনে ৪০ থেকে ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করত। এখন দিনে চার-পাঁচশ শ্রমিকও দেখা যায় না।
বড়ইতলায় একটি চায়ের দোকানদার ইমাম হোসেন বলছিলেন, 'বাড়িগুলোতে টুলেট ঝুলতে দেখবেন, অথচ আগে একটি সিট পেতে ঘুরতে হতো। বেশিরভাগ শ্রমিকই গ্রামে চলে গেছে। বসে বসে কারেন্ট বিল, গ্যাস বিল কে গুনতে যাবে? শ্রমিকরা তো বটেই, দোকানিরাও কিস্তি নিয়ে সংসার চালাচ্ছে।
ইমাম হোসেনও গোছগাছ শুরু করেছেন। তার মনে হচ্ছে, আর হয়তো বছরখানেক থাকতে পারবেন। তারপর ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যেতে হবে।