খুলেছে এস আলমের ৮ বন্ধ কারখানা, তবে উৎপাদন বন্ধ
বন্ধ ঘোষণার এক সপ্তাহ পর চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের আটটি কারখানা খোলার নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করে এস আলম গ্রুপের উপব্যবস্থাপক আশীষ কুমার নাথ বলেন, 'মালিকের নির্দেশনায় বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে কাঁচামাল সংকটে কোনো কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না তাই কারখানাগুলোর উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে লোকাল মার্কেট [অন্য আমদানিকারক] থেকে কাঁচামাল নিয়ে কারখানার উৎপাদন শুরু করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবছে কর্তৃপক্ষ। তবে এই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।'
এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলের এক কর্মকর্তা বলেন, 'গত মঙ্গলবার রাতে কারখানা খোলার নোটিশ পেয়ে আজ ডিউটিতে যাই। কিন্তু কারখানায় কোনো উৎপাদন হয়নি। মেশিন চালু করেনি। তাই হাজিরা দিয়ে চলে এসেছি।'
এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে গ্রুপের মানবসম্পদ ও প্রশাসনের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের সই করা নোটিশে বলা হয়, 'কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনিবার্য কারণবশত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানাগুলো বন্ধ থাকবে। তবে কারখানার নিরাপত্তা, সরবরাহ ও জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে।'
নোটিশ দেখে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ করেন কারখানা শ্রমিকেরা। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও কারখানা চালু হওয়ার আশ্বাস দেন কর্মকর্তারা।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বোরহান উদ্দিন আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, 'ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে ২৪ ডিসেম্বর জারি করা কারখানা বন্ধের নোটিশ প্রত্যাহার করা হলো। ১ জানুয়ারি থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে।'
বন্ধের পর পুনরায় চালু হওয়া কারখানাগুলো হলো এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম ব্যাগ, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, স্টিল খাতের এনওএফ, চেমন ইস্পাত, এস আলম স্টিল এবং গ্যালকো।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে আর্থিক খাতের সুবিধাভোগী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ। যিনি ২০১৭ সালে দেশের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেন। এরপর আরও একাধিক ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান দখল করে নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয় গ্রুপটি। পাশাপাশি গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ অনুমোদন করা হয়।
এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংককে এস আলম–মুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গ্রুপটি নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় দেড় লাখ কোটি ঋণ নিয়েছে বলে গণ মাধ্যমে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর সহযোগীরা 'অন্তত' ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে 'বের করে নিয়েছেন'।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার বিদায় নেওয়ার পর থেকে মাসুদ এবং তার ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে গেছেন অথবা দেশত্যাগ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এস আলম গ্রুপের সমস্যা আরও গভীর হয়েছে।