নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৯.৪৯ শতাংশ, সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন
নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৯.৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সোমবার (৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, নভেম্বরে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতিও কমে ১০.৭৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২.৫৬ শতাংশে উঠে গিয়েছিল, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এতে দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের মানুষের ওপর ব্যাপক আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছিল।
২০২২ সালের নভেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৮৪ শতাংশ, আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.১৪ শতাংশ।।
চলতি বছরের অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বেড়ে ৯.৯৩ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৩ শতাংশ।
মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। মে মাস থেকে মূল্যস্ফীতির হার ৯.৫ শতাংশের নিচে নামেনি।
চলতি বছরের এপ্রিলে সর্বনিম্ন ৯.২৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল।
অক্টোবরে খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরের ৭.৮২ শতাংশ থেকে অনেকটাই বেড়ে ৮.৩০ শতাংশ হয়ে যায়। তবে নভেম্বরে খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮.১৬ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯.৯৮ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'আমনের উৎপাদন এ বছর গত বছরের তুলনায় বেশি, ঐতিহাসিকভাবেও বেশি। তার আগে বোরোর ফলনও ভালো হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, যেমন ডিম, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে আমদানি সহজ হয়েছে। আমাদনির সুযোগ বাড়ানো হয়েছে।
'খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির মধ্যে দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্যে মূল্যষ্ফীতি কমেছে। শুধু মূল্যস্ফীতিই কমছে না, স্বাস্থ্যে মূল্যস্ফীতি তিন মাস ধরে নেতিবাচক।'
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, 'পরিবহনের ক্ষেত্রেও মূল্যস্ফীতি কমেছে। এর একটা ব্যাখ্যা হতে পারে পরিবহনের চাহিদা কমে গেছে। ফলে মূল্যবৃদ্ধির গতি কমাটা আস্বাভাবিক না। এছাড়া মিসেলেনিয়াস পণ্যের দাম কমেছে।
'আবার গুরুত্বপূর্ণ কিছু পণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। কাপড়, জুতা, হোটেল, রেস্টুরেন্ট মূল্যস্ফীতি বেড়ছে। কিন্তু এখানে চাহিদা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।'
বিবিএসের তথ্য অনুসারে, দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও শহরের চেয়ে গ্রামের মূল্যস্ফীতি এখনও বেশি। নভেম্বরে গ্রামীণ এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৬২ শতাংশে, অক্টোবরে যা ছিল ৯.৯৯ শতাংশ।
নভেম্বরে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ১০.৮৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা অক্টোবরে ছিল ১২.৫৩ শতাংশ। এ সময়ে খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ শতাংশ, যা অক্টোবরে ছিল ৮.০১ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ছিল ৭.৪২ শতাংশ।
শহর এলাকায় গ্রামাঞ্চলের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কম। নভেম্বরে শহরে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.১৬ শতাংশে, অক্টোবরে যা ছিল ৯.৭২ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে ছিল ৯.২৪ শতাংশ।
অক্টোবরে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৮ শতাংশ, যা নভেম্বরে কমে হয়েছে ১০.৫৮ শতাংশ। শহরে খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৮.৫০ শতাংশ থেকে কমে নভেম্বরে ৮.১৭ শতাংশ হয়েছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মজুরি হার বেড়েছে ৭.৭২ শতাংশ, যা এর আগের মাসে ছিল ৭.৬৯ শতাংশ। গত ২২ মাস ধরে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম রয়েছে।