বগুড়া-৬: নিজেকে অশিক্ষিত ঘোষণা এনপিপির প্রার্থীর
বগুড়া-৬ (সদর) আসনে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। প্রার্থী হিসেবে বৈধ। বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলার কাঁটাবাড়িয়া দক্ষিণ পাড়া। পিতার নাম আব্দুল মতিন। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) হয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে নিজেকে 'অশিক্ষিত' ঘোষণা করেছেন এই প্রার্থী।
যদিও মোবাইলে কথা বলার সময় তিনি দাবি করেন, উকিলের ভুলে এমন হয়েছে। শহিদুল আসলে নিজেকে স্বশিক্ষিত জানাতে চেয়েছিলেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় এই প্রার্থী বলেছেন, তার বিরুদ্ধে এনআই (চেক জালিয়াতি) আইনে তিনটি মামলা রয়েছে। এগুলো বগুড়া জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন। তিন মামলায় একটি কীটনাশক কোম্পানি তার কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা পাবে। তবে এগুলো নিয়ে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মীমাংসা হবে বলে তিনি দাবি করেন।
শহিদুলের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষি। এই খাত থেকে বছরে তার আয় হয় চার লাখ টাকা। আছে ২ লাখ নগদ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা নেই। তবে আছে ৭০ হাজার টাকার গাড়ি, ৫ লাখ টাকার অলংকার। আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী মিলে রয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকার সম্পত্তি। স্ত্রীর ২ বিঘা ও তার নিজের বারো শতক ছাড়া আর কোনো সম্পদের ঘোষণা দেননি এই প্রার্থী।
এনপিপির হয়ে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা এই প্রার্থীর দাবি, তিনি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা যুবলীগের রাজনীতির সাথে ১৯৯৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জড়িত ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে এনপিপির এক নেতার সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়। এই সূত্র ধরেই তিনি বগুড়া- ৬ আসনে মনোনয়ন পান।
শহিদুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। কাগজপত্র তার কাছে নেই। অন্য এক জায়গায় জমা দেওয়া আছে। সেখান থেকে আনতে সময় লাগবে। এই কারণে তিনি নিজেকে স্বশিক্ষিত ঘোষণা দেন। কিন্তু, উকিল ভুল করে হলফনামায় অশিক্ষিত লিখেছেন। অবশ্য আগামীতে তিনি নির্বাচনে দাঁড়ালে হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করবেন না বলে জানান।
বিগত কয়েকটি নির্বাচনের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, এই আসনে ১৯৭৩ সালে আসনে সাংসদ হন আওয়ামী লীগের সিরাজুল ইসলাম সুরুজ। এরপর বিএনপি থেকে ওয়াজেদ হোসেন তরফদার সংসদ সদস্য হন ১৯৭৯ সালে। ১৮৮৬ সালে জামায়াত নেতা আব্দুর রহমান ফকির সংসদ হন বগুড়া-৬ আসনে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১৯৮৮ সালে সংসদ সদস্য হন সাইফুর রহমান ভাণ্ডারী।
১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির মজিবুর রহমান সংসদ সদস্য হন। একই সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য হন খালেদা জিয়া। পরে আসনটি ছেড়ে দেন তিনি। ওই বছর উপ-নির্বাচনে বিএনপি নেতা জহুরুল ইসলাম বগুড়া-৬ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ ও ২০০৮ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য হন খালেদা জিয়া। ২০০৯ সালের উপ-নির্বাচনে এ আসনের সাংসদ হন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।
২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন জাতীয় পার্টির নেতা নুরুল ইসলাম ওমর। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফখরুল এই আসন ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে বিএনপি নেতা গোলাম মো. সিরাজ এই আসনের এমপি হন। এরপর তিনি সাংসদ পদ থেকে ২০২২ সালে পদত্যাগ করার পরে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু সংসদ সদস্য হন।
বগুড়া-৬ আসনে এবার বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা পাঁচ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র একজন। অন্যরা সবাই দলীয় ব্যানারে নির্বাচন করছেন।